ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ৬১% পরিবার, খোলা মাঠ ব্যবহার ০.২৭%

মফিজুল সাদিক
মফিজুল সাদিক মফিজুল সাদিক , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:২১ এএম, ০৮ জানুয়ারি ২০২২

নগরাঞ্চলের প্রায় ৬১ শতাংশ খানা (পরিবার) অন্য পরিবারের সঙ্গে তাদের ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। তবে নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে ৪৫ দশমিক ৬৮ শতাংশ পরিবার। বাকি ৫৫ শতাংশ পরিবার নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বাইরে। এখনো কাঁচা-ঝুলন্ত ল্যাট্রিন রয়েছে নগরাঞ্চলে। সংখ্যায় কম হলেও ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য নগরীতে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ পরিবার খোলা মাঠ ব্যবহার করে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকাশিত জরিপে দেখা যায়, নগরীতে পানি নিরোধক (ওয়াটার সিলবিহীন) পাকা ল্যান্ট্রিন ব্যবহার করে ২৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ পরিবার। অন্যদিকে পানি নিরোধক নয় এমন পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে ২৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও নগরাঞ্চলে গড়ে কাঁচা, ঝুলন্ত স্থায়ী ল্যাট্রিন ব্যবহার করে শূন্য দশমিক ৭৮ শতাংশ পরিবার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য মহানগরে এ হার ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো পরিবার ল্যাট্রিন হিসেবে খোলা মাঠ ব্যবহার করে না। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া অন্য নগরে এর হার শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে গড় হার শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ (এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রাম নগরীকে হিসাবের আওতায় আনা হয়েছে)।

jagonews24

বিবিএসের জরিপে দেখা যায়, নগরাঞ্চলের প্রায় ৬১ শতাংশ পরিবার অন্য পরিবারের সঙ্গে তাদের ল্যাট্রিন ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। নগরাঞ্চলের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিন ব্যবহার করে মাত্র ৪৬ শতাংশ পরিবার। বাকি ২৪ শতাংশ পরিবার পানি নিরোধক এবং ২৯ শতাংশ পানি নিরোধক নয় এমন পাকা ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ব্যবহারকারী পরিবারে পোকামাকড় বা অন্য বাহকের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ ছড়াতে পারে। নগরাঞ্চলে বসবাসরত পরিবারগুলোর মধ্যে উন্মুক্ত স্থানে পায়খানা করার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।

নগরাঞ্চলে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ও পানির উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি লক্ষ্য করা যায়। নগরাঞ্চলের ৮৬ শতাংশ পরিবার টয়লেটের পাশে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখে এবং ৯০ শতাংশ পরিবার হাত ধোয়ার স্থানে পানির ব্যবস্থা রাখে। তবে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সুবিধার বিচারে শহরের দরিদ্র পরিবারগুলোতে হাত ধোয়ার উপকরণের অপর্যাপ্ততা রয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে এর হার ৬৪ শতাংশ এবং অন্য নগর এলাকায় ৭৭ শতাংশ।

jagonews24

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশের নগর এলাকার জনগণ পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কিত নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, যা খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টির অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। নিরাপদ পয়ঃব্যবস্থাপনার অভাবে ডায়রিয়া, কৃমি সংক্রমণ ও উদরাময় রোগ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। নিম্নমানের পয়ঃব্যবস্থাপনা যেমন- পানি নিরোধক নয় এমন ল্যাট্রিন ও হাত না ধোয়ার কারণে পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। ফলে শহর এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোতে পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ অবস্থায় নগরাঞ্চলের নিম্নআয়ের জনগণের পানি, পয়ঃব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যবিধি বিষয়ে ধারণা পাওয়া সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবিএসের জরিপে উঠে এসেছে।

জরিপে আরও দেখা গেছে, সরকারি ব্যবস্থাপনায় খাবার পানির উৎসের হার ৬৪ শতাংশ। গড়ে ৩৪ শতাংশ নগরাঞ্চলের পরিবার খাবার পানির উৎস হিসেবে নলকূপের পানি ব্যবহার করে। ২১ শতাংশ পরিবারের সদস্যরা পুকুর ও নদী-নালার পানি পান করেন। ২১ দশমিক ৩০ শতাংশ পরিবার দৈনন্দিন কাজে পুকুর ও নদী-নালার পানি ব্যবহার করে। মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ মানুষ বোতলজাত পানি পান করে। ৫৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ পরিবার নিজস্ব টিউবওয়েল ব্যবহার করে। তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া অন্য নগরীতে এর হার ৬৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। ৮ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পরিবার কমিউনিটি টিউবওয়েল ব্যবহার করে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পানি ব্যবহার করে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ পরিবার।

jagonews24

বিবিএস রিপোর্ট প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দেশে স্যানিটেশন ও নিরাপদ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। আমরা ২০১৫ সালে এমডিজি (সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করেছি। ২০৩০ সালে এসডিজি (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) অর্জন করবো। সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা করবো। এডিবির অর্থায়নে একটা প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে স্যানিটেশনের আওতা দেশব্যাপী বিস্তৃত হবে।

এসব বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক (পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও পরিদর্শন অনুবিভাগ) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার দেশবাসীকে সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এ সংক্রান্ত অনেকগুলো বড় বড় প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। ৯ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার একটি স্যানিটেশন প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। প্রথমে আমরা প্রকল্পটিকে একনেক সভায় অনুমোদন করাবো। এর পরই অর্থায়নের জন্য নানা ধরনের উৎস খোঁজা হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

jagonews24

তিনি আরও বলেন, নিরাপদ পানি সরবরাহের জন্য ওয়াসার মাধ্যমে নানা ধরনের প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।

পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া হবে জানিয়ে ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, তদবিরসহ নানা কারণে কিছু এলাকা অনেক এগিয়ে, কিছু এলাকা আবার অনেক পিছিয়ে। আমরা নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে একটা নতুন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছি। পিছিয়ে পড়া এলাকায় এটা বাস্তবায়ন হবে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে উন্নত স্যানিটেশন সূচকে অনেক অগ্রগতি হবে।

jagonews24

জরিপ সংক্রান্ত বিষয়ে বিবিএস জানায়, নগর এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ জরিপে মোট ৪৪ জন তথ্য সংগ্রহকারী তথ্য সংগ্রহ করেন। তথ্য সংগ্রহকারীদের ৬০ শতাংশই ছিলেন নারী। বিবিএসের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের মোট ১০ জন সুপারভাইজিং কর্মকর্তা মাঠ তদারকিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সব পরিবারের (খানার) তালিকা করার জন্য ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। খানা তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রমটি ক্যাপি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন হয়। মূল জরিপে প্রশ্নপত্র ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহের জন্য তথ্য-সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজিং কর্মকর্তাদের খানার তালিকার ওপর ভিত্তি করে নমুনা খানাসমূহ কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন করে দেওয়া হয়েছিল। মূল জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর, শেষ হয় ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর। সেলুলারভিত্তিক ফোর-জি নেটওয়ার্কভিত্তিক ইন্টারনেট সংযোগের সঙ্গে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ফ্যাবলেট (ফোন + ট্যাবলেট) ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

দৈবচয়নের ভিত্তিতে মোট দুই হাজার ১৫০টি পরিবারের ওপর জরিপ করেছে বিবিএস। জরিপ এলাকা ছিল ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন।

এমওএস/কেএসআর/এএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।