চট্টগ্রাম সিটিতেও গড়ে ওঠেনি শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা
১৮৬৩ সালে শহরের মর্যাদা পাওয়া চট্টগ্রামে ১২৭ বছর পর নগরীর প্রধান সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) গঠিত হয়। চসিকের প্রধান কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়ক বাতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তবে প্রতিষ্ঠার ৩১ বছরেও বর্জ্য সংগ্রহে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত এ শহরে এখনো যত্রতত্র দেখা মেলে বর্জ্যের।
সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মেডিকেল, শিল্প-কারখানা ও ই-বর্জ্যের মতো সংক্রামক এবং বিপজ্জনক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও চলছে সনাতন পদ্ধতিতে। এছাড়া পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনের দায়িত্বে থাকা আরেক সেবা সংস্থা চট্টগ্রাম ওয়াসাও প্রতিষ্ঠার ৫৮ বছরে এ নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি।
বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত শহরগুলোতে শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেশিরভাগ বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে ব্যবহৃত হলেও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে এখনো এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। অনেকের ধারণা- ধ্বংস ছাড়া বর্জ্যের দ্বিতীয় কোনো কাজ নেই। অথচ এই বর্জ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে সার-বিদ্যুৎ কিংবা গ্যাসের জোগান দেওয়া হয়। এছাড়া বর্জ্যের অপচনশীল একটি অংশ পুনরায় ব্যবহার করা যায়। কিন্তু চট্টগ্রাম শহরে গৃহস্থালিসহ প্রায় সব ধরনের বর্জ্য চসিকের উদ্যোগে নগরের দুটি আবর্জনাগারে ফেলে দেওয়া হয়।
নালা-নর্দমায় ফেলা হচ্ছে পয়োবর্জ্য, একমাত্র প্রকল্পও এখনো শুরু হয়নি
চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ সংক্ষেপে চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে। প্রতিষ্ঠার পর সংস্থাটির নামের অর্ধেক কাজ পানি সরবরাহ করলেও বাকি অর্ধেক পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে এখনো কাজ শুরু করতে পারেনি তারা। এ ব্যাপারে খুব দ্রুত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে এমন আশার বাণীও মিলছে না।
পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে এখনো কাজ শুরুই করেনি চট্টগ্রাম ওয়াসা, অধিকাংশ বাড়ির বর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ফেলা হয়/ছবি: জাগো নিউজ
চট্টগ্রামে কী পরিমাণ পয়োবর্জ্য উৎপন্ন হয় তার সুনির্দিষ্ট হিসাব পাওয়া কঠিন। তবে গবেষকরা বলছেন, একজন ব্যক্তি পানিসহ দৈনিক দুই লিটার পয়োবর্জ্য তৈরি করে। সেই হিসাবে শহরে দৈনিক পয়োবর্জ্য তৈরি হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ লিটার। অথচ ওয়াসা কিংবা চসিক এ বর্জ্য নিষ্কাশনে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) চট্টগ্রাম নগরের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকার প্রকল্পটি এখনো শুরু হয়নি। কয়েকদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান তাইইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেয়েছে।
ওই প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফয়জুল্লাহর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করাও পাওয়া যায়নি।
পুরো নগরের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে গাড়ি রয়েছে মাত্র তিনটি। এভাবে এসটিসি বা লোহার কনটেইনার বসিয়ে কাজ চালাচ্ছে চসিক/জাগো নিউজ
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চট্টগ্রামে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাড়িতে নেই সেপটিক ট্যাংক। আবার যেগুলোতে আছে সেখানেও নির্দিষ্ট নিয়মে বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয় না। ট্যাংক পূর্ণ হলেই পার্শ্ববর্তী কোনো নালায় বর্জ্য ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও এ ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশনে নামমাত্র কাজ করে চসিক। সেটাও করা হয় ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। পুরো নগরের পয়োবর্জ্য নিষ্কাশনে তাদের গাড়ি আছে মাত্র তিনটি। আরও দুটি গাড়ি প্রস্তুত হলেও সেগুলো এখনো কাজ শুরু করেনি। ওই তিনটি গাড়ি দিয়ে মাসে ১০-১২টি বাড়িতে কাজ করেন তারা। এছাড়া অধিকাংশ বাড়ির পয়োবর্জ্য সরাসরি ড্রেনে ফেলা হয়।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যেসব পয়োবর্জ্য সংগ্রহ করি, সেগুলো চসিকের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আরেফিননগর আবর্জনাগারে আলাদা প্ল্যান্টে রাখি। সেখান থেকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় জৈব সার তৈরি করা হয়। তবে আমরা এক বছরে ১০০ থেকে ১৫০ বাড়িতে কাজ করি। চট্টগ্রাম শহরের বাকি বাড়ির মালিকরা নিজেদের মতো কেউ নালায় কিংবা কেউ পাশের কোনো পরিত্যক্ত জায়গায় সুইপার দিয়ে বর্জ্য ফেলে দেন। আমাদের দিয়ে কাজ করালে একটু বেশি খরচ হয় বলে মূলত তারা কম খরচের এ পথ বেছে নেন।
সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কোনো হাসপাতালে নেই ইনসিনারেটর
সম্প্রতি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, বিভাগীয় এ হাসপাতালের পাশের এলাকায় রয়েছে একাধিক উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড়। যেখানে বিভিন্ন ময়লার পাশাপাশি ফেলা হচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য। ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অপারেশন থিয়েটারের বর্জ্যও সেখানে মিশে একাকার। দিনের বেলা মানুষকে নাকে কাপড় দিয়ে হাসপাতাল এলাকায় চলাচল করতে হয়।
দিনের বেলা সড়ক দিয়ে মানুষের নাকে কাপড় দিয়ে চলাচল করতে হয়/ছবি: জাগো নিউজ
শুধু এই হাসপাতাল নয়, চট্টগ্রামের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গেলেও দেখা মিলবে আরও খারাপ অবস্থা। সেখানে প্রবেশের আগে প্রধান সড়কের ওপর রয়েছে একটি উন্মুক্ত ময়লার ভাগাড়। সেখানেই সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে ফেলা হচ্ছে মেডিকেল বর্জ্য। অথচ চট্টগ্রামে এটিই করোনা রোগীদের চিকিৎসার প্রধান হাসপাতাল।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২৮০টি হাসপাতাল রয়েছে। এর মধ্যে চসিকের অনুমতিতে ২১৭ হাসপাতাল থেকে মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা’। প্রতিষ্ঠানটি দৈনিক ২০০ থেকে ২৫০ কেজি মেডিকেল বর্জ্য সংগ্রহ করে। তারা এসব বর্জ্য হালিশহর আবর্জনাগারে রাখে। সংক্রামক এসব বর্জ্য নিষ্কাশনে প্রতিষ্ঠানটির কাছে নেই ইনসিনারেটর। ফলে সনাতন পদ্ধতিতে এসব বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয়। সম্প্রতি মেডিকেল বর্জ্যের এমন অব্যবস্থাপনা দেখে সংস্থাটিকে জরিমানাও করে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম সেবা সংস্থার ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইল বলেন, আমরা প্রত্যেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি, মেডিকেল ও সাধারণ বর্জ্য আলাদা রাখতে। কিন্তু তারা তা করে না। সাধারণ বর্জ্য একসঙ্গে থাকায় এসব নিষ্কাশনে জটিলতায় পড়তে হয়। আবার অনেক হাসপাতাল মেডিকেল বর্জ্যও সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে মিশিয়ে চসিকের গাড়িতে তুলে দেন।
সাধারণ ও মেডিকের বর্জ্য একসঙ্গে থাকায় এগুলো নিষ্কাশনে জটিলতায় পড়েন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা/ছবি: জাগো নিউজ
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে আমরা মেডিকেল ও সাধারণ বর্জ্য আলাদা করে সংগ্রহ করতে বলেছি এবং তদারকিও করছি। যেহেতু বাস্তবতার কারণে সব হাসপাতালে ইনসিনারেটর বসানো সম্ভব না, সেহেতু আলাদাভাবে সংগ্রহ করে শহরের একটি ইনসিনারেটরে ধ্বংস করবে।’ শিগগির শহরের হালিশহর আবর্জনাগারে স্থাপিত হতে যাওয়া ইনসিনারেটর চালু হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চসিক কর্মকর্তারা জানান, মেডিকেল বর্জ্য নিষ্কাশনে খুব শিগগির আমূল পরিবর্তন আসবে। জাইকার অর্থায়নে হালিশহর আবর্জনাগারের পাশে বসানো হচ্ছে ইনসিনারেটর। এ মাসের শেষের দিকে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারিতে এটির উদ্বোধন হতে পারে। প্রকল্প বাস্তবায়নে জাইকা ৩ কোটি টাকা দিয়েছে এবং চসিক ব্যয় করছে ৩৬ লাখ টাকা।
চসিকের উপ-প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সংক্রামক মেডিকেল বর্জ্য নিষ্কাশনে গুরুত্ব দিয়ে ইনসিনারেটর বসানো হচ্ছে। এর মাধ্যমে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে দৈনিক পাঁচটন মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংস করা যাবে। জাইকার শর্তানুযায়ী সিটি করপোরেশন এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকবে। তবে চট্টগ্রাম সেবা সংস্থা আমাদের কাছ থেকে চার্জ দিয়ে মেডিকেল বর্জ্য ধ্বংসে এটি ব্যবহার করবে।
শিল্পবর্জ্যের কিছু যাচ্ছে ভাগাড়ে, কিছু নালা-নর্দমায়
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রত্যেক শিল্পকারখানায় ক্ষতিকর ও বিপজ্জনক বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) থাকার কথা। কিন্তু নগরের বিভিন্ন শিল্পকারখানা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশেরই ইটিপি নেই। উল্টো কোনো কোনো কারখানা বিপজ্জনক বর্জ্য সরাসরি নালায় ফেলে দেয়। এসব বর্জ্য নালা হয়ে যাচ্ছে নদী-সমুদ্রে। এতে হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
চসিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত নিয়মানুযায়ী কারখানাগুলো তাদের বর্জ্য জমা করে চসিককে জানায়। তারপর চসিকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কারখানার নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে বর্জ্য আবর্জনাগারে ফেলতে হয়। তবে এ নিয়ম মানে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বেশিরভাগ কারখানা তাদের সব ধরনের বর্জ্য চসিকের কনটেইনার কিংবা এসটিএসে রাখে। সেখান থেকে চসিকের গাড়ি হয়ে বর্জ্য আবর্জনাগারে চলে যায়।
কোনো কোনো কারখানার বিপজ্জনক বর্জ্য সরাসরি নালায় ফেলে দেয়া হয়/ছবি: জাগো নিউজ
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী শিল্পকারখানাগুলোকে লাল, কমলা ও সবুজ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। লাল-কমলা ক্যাটাগরির কারখানা বিপজ্জনক বর্জ্য নিঃসরণ করে। এসব কারখানার বর্জ্য নিষ্কাশনে চসিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদারকি করতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান চালানো যেতে পারে। তবে কারখানাগুলোকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দ্বারা খুব কম সময়ই তদারকি করতে দেখা যায়।
চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ টি এম শাহজাহান জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের কলকারখানায় বলতে গেলে তদারকি একেবারে নেই বললেই চলে। বিপজ্জনক বর্জ্য নিঃসরণ করে পরিবেশ দূষণ করলেও তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে তারা যত্রতত্র বর্জ্য ফেলছে। কেউ নালায় ফেলছে, আবার কেউ ফেলছে সড়কের পাশে। বিপজ্জনক এসব বর্জ্য মিশে যাচ্ছে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে। এর মাধ্যমে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বাড়াতে হবে সচেতনতা
ই-বর্জ্য সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করা, এ ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা কেমন ও এর ক্ষতিকর দিকগুলোর বিষয়ে নগরের প্রধান সেবা সংস্থা চসিককে নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলছেন, বাড়িতে একটি ব্যাটারি নষ্ট হলো। এটি সাধারণত গৃহস্থালির বর্জ্যের সঙ্গে মিশে আবর্জনাগারে চলে যায়। এই ব্যাটারি থেকে নির্গত হয় সীসা, যা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী। এছাড়া কম্পিউটার কিংবা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস নষ্ট হওয়ার পর একই পদ্ধতিতে সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে ফেলে দেওয়া হয়। এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে, যা মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের/ছবি: জাগো নিউজ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হাসান খালেদ রউফ জাগো নিউজকে বলেন, ই-বর্জ্য নতুন কোনো ধারণা নয়। উন্নত দেশে এ ধরনের বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হয় এবং বর্জ্য অনুযায়ী পুনর্ব্যবহার কিংবা ধ্বংস করা হয়। অনেক সময় পণ্যের কোম্পানি নিজেদের পণ্য সংগ্রহ করে ধ্বংস করে। তবে আমাদের দেশে এখনো আলাদাভাবে ই-বর্জ্যের নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই বললে চলে। তবে চাইলে সহজেই চসিকসহ দেশের অন্যান্য শহর পরিচ্ছন্নতার দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলো এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। এ ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন করে গবেষণার দরকার নেই। শুধু উন্নত শহরগুলোকে অনুসরণ করলেই চলবে।’
দুই আবর্জনাগারে ময়লার স্তূপ জমেছে ৩০০ ফুটেরও বেশি!
চট্টগ্রাম নগরের সব ধরনের বর্জ্যের চূড়ান্ত স্টেশন দুটি। একটি বায়েজিদ বোস্তামী থানার আরেফিননগরে, অন্যটি হালিশহরের আনন্দবাজার এলাকায়। দূর থেকে এই স্টেশন দুটি দেখলে মনে হবে ময়লার পাহাড়। হালিশহর আবর্জনাগারের উচ্চতা হবে আনুমানিক ৩০০ ফুট। বিপজ্জনক ও সংক্রামক বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা তো দূরে থাক, সাধারণ বর্জ্যের নিষ্কাশনে নেই কোনো ব্যবস্থাপনা। ব্লিচিং ও মশার ওষুধ ছিটিয়ে দায় সারে চসিক। কোনো কোনো সময় সেগুলোও ছিটানো হয় না। দুর্গন্ধে আবর্জনাগারের পাশ দিয়ে চলাফেরা করা দায় হয়ে পড়ে সাধারণ পথচারীদের।
পুরো চট্টগ্রাম নগরের সব ধরনের বর্জ্য রাখা হয় দুটি আবর্জনাগারে, দূর থেকে দেখলে মনে হবে ময়লার পাহাড়/ছবি: জাগো নিউজ
চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রাশিদুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে হালিশহর ও বায়েজিদ বোস্তামীর দুটি আবর্জনাগারকে ব্যবহার করে আসছে চসিক। এগুলো আদর্শ কোনো আবর্জনাগারও না। দ্রুত চসিকের উচিত হবে, একটি নতুন আধুনিক আবর্জনাগার স্থাপন করা। যেখানে শ্রেণিভিত্তিক বর্জ্য নিষ্কাশন করা যাবে। এই আবর্জনাগার করতে হবে জনবসতি থেকে যথাসম্ভব দূরে এবং আবর্জনাগারের নিচের অংশে মাটি থাকতে হবে, যাতে ময়লার গলিত পানি মাটি শোষণ করে নিতে পারে। এছাড়া যেখানে পানির স্তর ওপরে বা আশপাশে বড় জলাশয় আছে, সেখানে আবর্জনাগার করা যাবে না।
এআরএ/এএ/জেআইএম