এবার মীর কাসেম আলীর পালা
মানবতাবিরোধী অভিযোগে অভিযুক্ত কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, সাঈদী, মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীর পর এবার পালা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মীর কাসেম আলীর। একাত্তরের এ মানবতাবিরোধীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের খালাস চেয়ে আনা আপিলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের কার্যতালিকায় আসলেই মামলাটির শুনানি শুরু হবে।
গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে নতুন বছরের (২০১৬) ২ জানুয়ারি পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে অবকাশ ছিল। অবকাশ শেষে আপিল আবেদনটি কার্যতালিকায় আসলে নিয়ম অনুযায়ী মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ের ক্রমিক অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মামলায় আপিল আবেদন করার পর তা শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আব্দুল কাদের মোল্লার রায় প্রথমে ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল। তার মামলায় করা আপিল আবেদনও সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি হয়েছে প্রথমে। এরপর পর্যায়ক্রমে মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মামলার আপিল আবেদনের নিষ্পত্তি হয়। আপিল নিষ্পত্তি করে চারজনের দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে ছিল জামায়াতের অপর নেতা দলের আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। নিজামীর পরেই এবার মীর কাশেম আলীর পালা।
জানা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের অবকাশ, সাপ্তাহিক ছুটি ও সরকার ঘোষিত ছুটির কারণে নিয়মিত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ ছিল। আগামীকাল রোববার (৩ জানুয়ারি) থেকে আবারো নিয়মিত বিচার কার্যক্রম শুরু হবে। আর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নিয়মিত বিচার কার্যক্রম শুরু হলে মীর কাশেম আলীর আপিল মামলা শুনানি কার্যতালিকায় আসতে পারে। যা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির সপ্তম তালিকায় রয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, মৃত্যুদণ্ড রায়ের বিরুদ্ধে জামায়েত নেতা মীর কাসেম আলীর আপিল মামলায় সারসংক্ষেপ জমা দিতে রাষ্ট্রপক্ষকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ গত ১৮ আগস্ট আদেশ দেন। এর আগে আদালতের আদেশ অনুযায়ী আসামিপক্ষ আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর এ আপিল দায়ের করেন। আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির জানান, মীর কাসেম আলীর পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে এ আপিল করা হয়। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ ৫ ভলিয়মে ১ হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর মীর কাশেম আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের আদেশে ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীকে গ্রেফতার করা হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
আদালত সূত্র আরো জানা যায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আনা আরো ৮টি আপিল মামলা আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। শুনানির অপেক্ষায় থাকা মামলার আসামিরা হলেন- জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম ও আব্দুস সুবহান, আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা মোবারক হোসেন, জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, পিরোজপুরের সাবেক এমপি পলাতক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার, চাপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান এবং বাগেরহাটের খান আকরাম হোসেন।
এছাড়াও ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আমীর ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর আনা আপিলের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৬ জানুয়ারি (বুধবার) রায় ঘোষণার দিন ধার্য রয়েছে।
নিজামীর মামলা ছিল আপিল আবেদনের ষষ্ঠ তালিকায়। এর আগে আপিলে চূড়ান্ত পাঁচটি রায়ের পর চারটিতে জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
আপিলের আরেক রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যে রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ পেয়েছে গত বৃহস্পতিবর (৩১ ডিসেম্বর)।
এদিকে সাঈদীর আপিলে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফাইট কপি হাতে পাওয়ার পর নিয়ম অনুযায়ী (১৫ দিনের মধ্যে) মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রিভিউ আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইনজীবী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এফএইচ/আরএস/এমএস