রেলের স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট চালু করেই তালা!

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৮:৫৭ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০২১

অডিও শুনুন

স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে এক সপ্তাহ আগে রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলস্টেশনে আলাদা দুটি ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট’ উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পর পরই প্ল্যান্টে তালা ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কার্যক্রম আপাতত বন্ধ। আগের মতোই আলাদা প্ল্যাটফর্মে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলছে ট্রেন ধোয়ামোছার কাজ।

তবে ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্ল্যান্ট দুটিতে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোনো কাজ বাকি নেই। যন্ত্রপাতি সব সচল রয়েছে। এখন প্ল্যান্ট দুটি রেলওয়ের অপারেশন বিভাগে হস্তান্তরের কাজ চলছে। শিগগির ট্রেন পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে।

jagonews24

গত ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ে কমলাপুর ও রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হয়। এই প্ল্যান্টে ১০ মিনিটের মধ্যে একটি ট্রেন (গড়ে ১৪টি বগি) পরিষ্কার করা যাবে। এতে ঝকঝকে তকতকে হবে রেলের প্রতিটি বগি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবেন যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর যাত্রীদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ভ্রমণের জন্য এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার ক্যারেজ সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এ প্রকল্পের আওতায় ২০০টি মিটারগেজ যাত্রীবাহী কোচ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি অটোমেটিক ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনা হয়। এর মধ্যে রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলস্টেশনে ওই দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা।

jagonews24

গত সেপ্টেম্বরে প্ল্যান্ট স্থাপনের পর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন পরিষ্কার করা হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর আনুষ্ঠিকভাবে প্ল্যান্ট দুটি উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ওই দিন একটি ট্রেন যাত্রী নামানোর পর ট্রেনের বগিগুলোর উভয় পাশ, ছাদ, আন্ডার গিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, এটি একটি পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী প্রকল্প। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করায় ট্রেনের বগিগুলো চকচক দেখাবে। আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ট্রেনের ভেতর এবং বাইরের অংশ পরিষ্কার করা হতো। এতে বগি ঠিকমতো পরিষ্কার হতো না। বিভিন্ন অংশে কালো দাগ পড়তো। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে প্ল্যান্টে ট্রেন ঢুকলেই জানালা-দরজা লাগিয়ে ওয়াশিং পাউডার ও পানি দিয়ে অটোমেটিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়ে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে আসবে। এতে ট্রেন ঝকঝকে দেখাবে। যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্ল্যান্ট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে।

jagonews24

‘এ প্ল্যান্ট প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করবে, যা ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশই রি-সাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে।’

কমলাপুর রেল স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বরাবর উত্তর দিকে প্রায় ৫শ মিটার এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই ওয়াশিং প্ল্যান্ট। রোববার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে স্টিলের কাঠামোর ঘরের ভেতর এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর উত্তর পাশ দিয়ে ট্রেন ঢুকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বের হওয়ার লাইন রয়েছে। তবে প্ল্যান্টটির বা ঘরের দুপাশে ফটকে তালা লাগানো। বাইরে আরকটি ঘরের সামনে বড় পানির ট্যাংক, পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলোতেও তালা লাগানো রয়েছে।

jagonews24

এর পাশে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্মে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হুইল পাউডার ও ব্রাশ দিয়ে ট্রেন পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা। একেকটি ট্রেন পরিষ্কার করতে তাদের ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগছে। তবে ট্রেনের নিচের অংশ তারা পরিষ্কার করতে পারছেন না।

শ্রমিকদের একজনের নাম আবু তাহের। তিনি জানান, তাদের শুধু ট্রেনের দুপাশ ও উপরের অংশ পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেনের নিচের অংশ পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ওয়াশিং প্ল্যান্টের চারপাশে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। তবে কী কারণে প্ল্যান্টের কাজ বন্ধ তা জানি না।

রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন ট্রেনের প্রতিটি বগি পরিষ্কার করতে গড়ে এক হাজার ৫০০ লিটার পানি খরচ হয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা হলে পানি লাগবে মাত্র ৬০ লিটার। এতে সাশ্রয় হবে এক হাজার ৪৪০ লিটার পানি। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঠিকমতো ট্রেন পরিষ্কার হতো না। ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে যেত। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই এই ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।

jagonews24

বর্তমানে দেশে রেলওয়েতে এক হাজার ২১৭টি মিটারগেজ ও ৪৬৭টি ব্রডগেজ কোচ রয়েছে। শিগগির আরও ৩৫০টি মিটারগেজ এবং ৩০০টি ব্রডগেজ নতুন ট্রেন চালু হবে। এসব নতুন ট্রেন চালু হলে এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ট্রেনের কোচ পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।

জানতে চাইলে স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্টের প্রকল্প কর্মকর্তা ফকির মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্প হস্তান্তর করার জন্য সব কাগজপত্র তৈরি আছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই রেলওয়ের অপারেশন বিভাগে প্রকল্পটির হস্তান্তর করা হবে। প্রকল্পটির পরিচালনা করার জন্য অপারেশন বিভাগের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ না করে কেন প্রকল্প উদ্বোধন করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ফকির মহিউদ্দিন বলেন, উদ্বোধনের দিন থেকেই প্রকল্পটি পরিচালনা করা যেত। এজন্য সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেয়েছেন, হস্তান্তরের পরে কার্যক্রম শুরু হবে।

এমএমএ/এএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।