গ্যাস অনুসন্ধানে ‘সুখবর মিলতে পারে’ আগামী বছরই
অডিও শুনুন
প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় পর নতুন করে গ্যাসের অনুসন্ধান শুরু করেছে সরকার। সাগরের সম্ভাবনাময় দুটি ব্লকের অগভীরে গ্যাসের এ অনুসন্ধান চালাবে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে প্রথম ড্রিলিংয়ের (খনন) কাজ শুরু হয়েছে। ড্রিলিং শেষ হলে আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য কতোটুকু সম্ভাবনা রয়েছে, তা জানা যাবে।
তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) এক মহাব্যবস্থাপক জাগো নিউজকে জানান, কুতুবদিয়া অঞ্চলে ব্লক এসএস-৪ ও এসএস-৯ দুইটা ব্লকে পরপর তিনটা ড্রিল করা হবে। প্রথম ড্রিল শুরু হয়েছে গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এই ড্রিলিংটা চার হাজার ২০০ মিটার, অর্থাৎ মাটির নিচে চার কিলোমিটারেরও বেশি গভীর পর্যন্ত খনন করা হবে। খননের কাজ অনেকটাই হয়ে গেছে। এই ড্রিলিংয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কাঞ্চন’। ড্রিল শেষ হলে চলবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এরপর জানা যাবে এখানে সম্ভাব্য কতো পরিমাণ গ্যাস মজুত রয়েছে।
আগামী বছরের অক্টোবরে দ্বিতীয় ড্রিলিং শুরু হবে। তৃতীয় ড্রিলিংয়ের কাজ শুরু হবে ওই বছরের ডিসেম্বরে। ওই দুটো কাজের জন্য টেন্ডার প্রস্তুতের কাজ চলছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ড্রিলিংয়ের নাম দেওয়া হয়েছে যথাক্রমে ‘তিতলী’ ও ‘মৈত্রী’। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে তিনটা ড্রিলের কাজই শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
এ ব্যাপারে জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আনিছুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম ড্রিলিংয়ের কাজ নভেম্বরের প্রথম সাতদিনের তথ্যমতে এক হাজার ৭০০ মিটারেরও বেশি হয়েছে। আরও বাকি রয়েছে দুই হাজার ৪০০ মিটার। আশা করি, এ বছরই আমরা শেষ করতে পারবো ড্রিলিংয়ের কাজ। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নতুন সম্ভাবনার কথা জানতে পারবো। কতোটুকু সক্ষমতা আছে, কী পরিমাণ চাহিদা মেটানো সম্ভব, সেটাও জানতে পারবো। তারপরই শুরু হবে আমাদের মূল কার্যক্রম।
এদিকে পেট্রোবাংলা বলছে, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতেই গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ শুরুর পরিকল্পনা ছিল জ্বালানি বিভাগের। কিন্তু করোনার কারণে তা সম্ভব হয়নি। ওই সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তাব দিলেও তারা কাজে আগ্রহ দেখায়নি।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, গ্যাস রপ্তানি চুক্তি পিএসসি-২০১৯ অনুযায়ী খনন থেকে শুরু করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা পর্যন্ত পাঁচ বছর সময় লাগবে। তারপর সব কিছু প্রস্তুত করতে লাগবে দুই বছর। অর্থাৎ ৭-৮ বছরের মাথায় প্রথম গ্যাস উত্তোলনের ক্ষেত্র তৈরি হবে। এর মধ্যে আবার যে পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যাবে তা দিয়ে খরচ পুষিয়ে চাহিদা পূরণ করা যাবে কি না সেটা বিবেচনায় নেবে জ্বালানি বিভাগ।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, যেসব প্রতিষ্ঠান গ্যাস অনুসন্ধান করবে, এসময় সব ধরনের ব্যয় ও ঝুঁকি তাদের। গ্যাস রপ্তানি চুক্তি পিএসসি-২০১৯-এ এমনটি বলা আছে। তারা যদি গ্যাস না পায়, তাহলে এক পয়সাও ফেরত পাবে না। এই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করবে তারা।
নতুনভাবে গ্যাস অনুসন্ধানকে স্বাগত জানিয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অগভীরে সীমাবদ্ধ না থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে যেতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. এজাজ হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, সমুদ্রের অগভীরে বাংলাদেশের এক্সপ্লোরেশন খারাপ নয়। আমাদের স্থলভাগ বেশ বড়। এরপরও যদি আমরা স্থলভাগের সঙ্গে তুলনা করি, সে অনুযায়ী অগভীর একেবারে খারাপ নয়। কারণ অগভীরে আমাদের আগেও গ্যাস উত্তোলন হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থাকতে পারে, অগভীরে আগে কতোটুকু গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা সাঙ্গুতে দেখেছি। সেখানে শেষ হয়ে গেছে। আরও বেশ কিছু জায়গাকে আমরা সম্ভাবনাময় হিসেবে জানি যে, সেখানে গ্যাস আছে। কিন্তু কতোখানি আছে সেটাই এখন প্রশ্ন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই এরকম ছোট ছোট সম্ভাবনা রয়েছে। এসব জায়গাতে খুঁজলে যে কোনো সময় গ্যাসের খনি পাওয়া যেতে পারে।
ড. এজাজ বলেন, আমার ধারণা অগভীরে অনুসন্ধান করলে গ্যাস মিলতে পারে। কিন্তু তা খুব বেশি হবে না। তাই দুই-তিনটা জায়গাতে ড্রিলিং করলেই হবে না। আমরা হঠাৎ করে একটা খনি পাবো, আর সেখানে খনন করবো, তাতে হবে না। ছোট ছোট হলেও একসঙ্গে ১০ জায়গাতে অনুসন্ধান করি, তাহলে ১০ জায়গা মিলে বড় এক জায়গার সমান হবে। আমাদের এই মনোভাব নিয়ে পুরো বাংলাদেশে অনেকগুলো খনির সন্ধানে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কিন্তু সেটা তো করা হয় না। আমার যেটা ধারণা, অগভীরে বড় কিছু পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। গ্যাসের সন্ধানে গভীর সমুদ্রে যেতে হবে।
এমআইএস/জেডএইচ/এইচএ/এমএস