নতুন ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে ৬৫ পার্ক পাবে ঢাকা
একটি শহরের ভারসাম্য ঠিক রাখতে কংক্রিটের অবকাঠামোর পাশাপাশি প্রয়োজন সবুজ এলাকা, পার্ক, জলাশয় ও খোলা জায়গা। স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে সুষ্ঠু বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায় রাজধানী ঢাকা হয়ে উঠেছে প্রশাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র। ফলে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে প্রশাসনিক ভবন, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, বাজার ও কংক্রিটের আবাসন। এ কারণে ঢাকা হয়ে উঠেছে ঘিঞ্জি, বাসযোগ্য নগরের তালিকায় থেকে যাচ্ছে তলানিতে।
এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় সবুজায়নের তাগিদ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সঠিক পরিকল্পনায় ঢাকাকে সাজানো হলে যেমনি এটি পরিবেশ দূষণমুক্ত হবে, তেমনি নাগরিক শিশুদের মানসিক বিকাশও ঘটবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ‘ঢাকা শহরের সবুজ এলাকা, জলাশয়, খোলা উদ্যান ও কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকার বিদ্যমান অবস্থা এবং বিগত ২০ বছরে পরিবর্তন’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) জানায়, ১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে রাজধানীর খোলা জায়গা ও জলাশয় আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। স্বাধীনতার পর নির্মাণ হয়নি কোনো উদ্যান।
‘রাজধানীর ৮২ শতাংশ এলাকা কংক্রিটে আচ্ছাদিত। গত ২০ বছরে জলাভূমির পরিমাণ কমে হয়েছে ৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জলাভূমি কমেছে ১৪ শতাংশ, একইভাবে উন্মুক্ত স্থান কমেছে ১২ শতাংশ। ফলে নগরীতে সবুজায়ন কমেছে ব্যাপক হারে। এতে পরিবেশ দূষণ যেমন বেড়েছে, তেমনি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুর বিকাশ।’
স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামোর সঙ্গে সবুজ ও জলাশয় এলাকার ভারসাম্য তৈরির পরামর্শ দেওয়া হয় প্রতিবেদনে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবুজায়ন বাড়াতে ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংস্কার প্রয়োজন। প্লটগুলোতে ৩০ শতাংশ খালি জায়গা রেখে সবুজায়ন করতে হবে। এছাড়া কমিউনিটিভিত্তিক খেলার মাঠ, উদ্যান বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) বলছে, রাজধানীর মানুষের জীবন মানের উন্নয়নে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) চূড়ান্ত করা হয়েছে। ড্যাপে অর্ধশতাধিক পার্ক ও উদ্যান নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ড্যাপ বাস্তবায়ন হলে রাজধানী আবার সবুজে ভরে উঠবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান জাগো নিউজকে বলেন, নগর সবুজায়নের জন্য দুটি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। একটা হচ্ছে বড় স্কেলে পার্ক বা উদ্যান নির্মাণ করা, আরেকটা হলো এলাকাগুলোতে ছোট ছোট ব্লকের মাধ্যমে পার্ক করা। আমাদের নগরীর দুর্ভাগ্য হচ্ছে বড় স্কেলে আমরা পার্ক তৈরি করতে পারিনি। ছোট ছোট প্লটের ৮০-৯০ ভাগই কংক্রিটে আচ্ছাদিত করেছি। কিন্তু প্রতিটা প্লটে ৪০ ভাগ সবুজ এলাকা রাখার কথা ছিল।
তিনি বলেন, আমাদের যে রেগুলেশন আছে সেটার সংস্কারের প্রয়োজন। আমাদের ইমারত নির্মাণ বিধিমালার আমূল পরিবর্তন দরকার। এর সঙ্গে কমিউনিটিভিত্তিক সবুজ এলাকা তৈরি করতে ভূমি অধিগ্রহণ করাও দরকার। ভূমি অধিগ্রহণ ও সরকারি খাসজমি ব্যবহার করে সবুজায়ন না করতে পারলে আমাদের শিশুদের মানসিক বিকাশ ব্যাহত হবে। বায়ু ও শব্দদূষণ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। ব্যক্তিপর্যায়ে যারা ভবন নির্মাণ করছে তাদের সবুজায়নের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখতে বাধ্য করতে হবে। এটা করতে হলে ইমারত বিধিমালা সংশোধন করতেই হবে। সেই সঙ্গে সিটি লেভেলে উদ্যান, প্লে গ্রাউন্ড তৈরি করা দরকার।
ড্যাপের প্রকল্প পরিচালক ও রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রাজধানীর ছয়টা পয়েন্টে সবুজায়ন আছে। রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো স্পটগুলো রাজধানীর মেইন পয়েন্টে আছে। কিন্তু ঢাকার বিস্তৃতি গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর পর্যন্ত চলে গেছে। আমরা সেই পরিমাণ খেলার মাঠ বা পার্ক কিছুই করতে পারিনি। সেজন্য পুরো ঢাকাকে ছয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে নতুন ড্যাপে।
তিনি বলেন, নতুন ড্যাপে এ অঞ্চলগুলোতে রমনা উদ্যানের মতো পার্ক করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কাঁচপুরের মানুষ নিশ্চয়ই রমনা উদ্যানে হাঁটতে আসবেন না। নতুন ড্যাপে ছয়টি আঞ্চলিক পার্ক, ১০টি ছোট পার্ক, ইকোপার্ক ও ৪৯টি জলকেন্দ্রিক পার্ক করার প্রস্তাব আছে। আঞ্চলিক পার্কের পাশাপাশি হাতিরঝিলের মতো জলকেন্দ্রিক পার্ক করতে পারলে ঢাকার দৃশ্যমান পরিবর্তন হবে। সবুজায়ন বাড়বে ইট-পাথরের নগরে।
এসএম/এইচএ/এমএস