ছাত্রলীগের বঞ্চিতদের ক্ষোভ-আক্ষেপ ফেসবুকে, যা ভাবছে হাইকমান্ড

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১
ছাত্রলীগের নির্বাহী সংসদে সমন্বয়হীনতা নিয়ে আলোচনা চলছে ফেসবুকে (ইনসেটে বাঁ থেকে ওবায়দুল কাদের,আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, বি এম মোজাম্মেল হক)

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ নিয়ে ফের আলোচনা জমে উঠেছে। সংগঠনটির একঝাঁক সিনিয়র নেতা অভিযোগ করেছেন, কোনো সভা ডাকা হয় না। নির্বাহী সংসদে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে পড়েছে। অন্যান্য নেতাদের পাশ কাটিয়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এককভাবে সংগঠন পরিচালনা করেন। কোনোপ্রকার গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতি মানা হয় না। এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে দফায় দফায় কথার বলার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ ওই নেতাদের।

ছাত্রলীগের সবশেষ সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে। ২৯তম ওই জাতীয় সম্মেলনের প্রায় দুই মাসের মাথায় ৩১ জুলাই কমিটি ঘোষণা করা হয়। তাতে সভাপতি হন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম রাব্বানী। নেতৃত্ব পাওয়ার ১০ মাস পর ২০১৯ সালের ১১ মে তারা ৩০১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ ঘোষণা করেন। কিন্তু দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনের কারণে ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর পদচ্যুত হন শোভন-রাব্বানী। তখন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় যথাক্রমে সহ-সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যকে। পরের বছর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি তারা পূর্ণ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। কিছুদিন পর থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন না করা, জেলা কমিটি না দেয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়হীনতাসহ নানা অভিযোগ ওঠে দুজনের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে সম্মেলনের উদ্যোগ না নেওয়ার অভিযোগ। এসব আলোচনাই এখন উত্তাপ ছড়াচ্ছে ফেসবুকে।

সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি কথা আসছে ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ নিয়ে। কেউ বলছেন, দুই বছর পরপর সংগঠনটির সম্মেলন করার গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ কমিটির সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে। এর মধ্যে আর সম্মেলন তো হয়নিই, কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব বণ্টনও হয়নি। দীর্ঘ এ সময়ে ১১১ ইউনিটের মধ্যে মাত্র ১৮ শাখার কমিটি করা গেছে। তাও আবার সম্মেলন ছাড়াই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে হয়েছে এসব কমিটি, এমন অভিযোগ নেতাদের।

এ নিয়ে এতোদিন ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ ছিল খোদ কেন্দ্রীয় নেতাসহ ইউনিটের নেতাদের। এখন সেটি চলে আসছে ফেসবুকে। ফোরামের আলোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলে আসায় কোনো পক্ষেরই উদ্রেক নেই। যারা ফেসবুকে লিখছেন, তারা বলছেন, ‘এটা স্বাভাবিক বিষয়। সাংগঠনিক আলোচনা, সাংগঠনিক ফোরামের সভায় ডাকা হয় না বলে ফেসবুকে বলা হচ্ছে।’ সংগঠনের শীর্ষনেতারা বলছেন, ‘এগুলো যুগ যুগ ধরে ছিল, থাকবে। যাদের আদর্শিক দুর্বলতা আছে তারা এগুলো করে।’

এ নিয়ে অস্বস্তিতে ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ নেতারা। কেউ বলছেন, সম্মেলনে সব ঠিক হয়ে যাবে। আবার কেউ ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দোষারোপ করে বলছেন, ‘তাদের বারবার বলেও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে আনা যায়নি। আমরা তাদের কর্মকাণ্ডে অখুশি।’

কী চলছে ফেসবুকে?
সম্প্রতি ফেসবুকে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শওকতুজ্জামান সৈকত ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখেন, ‘কমিটির বয়স প্রায় চার বছরের কাছাকাছি অতিবাহিত করার পরও যখন সাংগঠনিক দায়িত্ব ঠিকঠাক বুঝিয়ে দেওয়া হয় না, কোনো রকম বিভাগীয় ও জেলাভিত্তিক বর্ধিত সভা ডাকা হয় না এবং ১০-১৫টার বেশি জেলার সম্মেলন হয় না। সে কমিটির সাংগঠনিক কার্যক্রমকে কীভাবে আমরা সফল বলে দাবি করতে পারি?’

সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে লেখালেখি করলে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হয়। সেজন্য লিখি না। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় না লিখেও পারি না। নির্বাহী সংসদের অর্ধেকেরও বেশি নেতা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। বাকি অর্ধেক নেতা মধুর ক্যান্টিনে এবং টিএসসিতে আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। নেতৃত্বের সাংগঠনিক গুণাবলি বিকাশের ন্যূনতম সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রায় চার বছর অতিবাহিত হচ্ছে অথচ নির্বাহী সংসদের কাউকেই কোনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি!’

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ‘ছাত্রলীগকে এভাবে পরিকল্পিতভাবে নিষ্ক্রিয় করে রাখার মানে কী? শুধু করোনার দোহাই দিয়ে কি সব দায়ভার এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব?’chatra.jpgছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য

ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. আরিফ হোসেন লিখেছেন, ‘একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়ার পরেও দু’বছর পার হলো। তবুও বিশেষ পরিস্থিতির অবসান হলো না। কথা বলতে গিয়েও বলি না। কারণ বিদায় মুহূর্তে বিদ্রোহী, ষড়যন্ত্রকারী, অনুপ্রবেশকারী হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই না।’

তিনি উপহাস করে বলেন, ‘সংগঠন খুবই ভালোভাবে চলছে, এ যাবতকালীন শ্রেষ্ঠ গতিশীল অবস্থা। কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দারুণ। কেন্দ্রীয় নেতাদের কাজ করার অপার সুযোগ দানের জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মহোদয় আমৃত্যু শ্রদ্ধার আসনে থাকবেন।’

আরেক সহ-সভাপতি ইয়াজ আল রিয়াদ লিখেছেন, ‘শোভন এবং রাব্বানী ভাই সাবেক হওয়ার সময় আমাদের মেয়াদ ছিল ছয় মাস। এই ছয় মাসের মধ্যে আমাদের একটি সম্মেলন আয়োজন করার কথা ছিল। অথচ ছয় মাসের জায়গায় আজ আমরা দুই বছর সময় পার করে ফেললাম। এখনো একটি সম্মেলন আয়োজন করতে সক্ষম হলাম না। এখানে যিনিই দায়িত্ব পান তিনিই যেন লঙ্কার রাবণ হয়ে ওঠেন। কিন্তু আপনি কতটুকু সফল, কতটুকু ব্যর্থ, নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন আয়োজন করাও তার একটি। কাকে আমরা দুষবো। আমরা সবাই জানি জমিতে বেড়া দেওয়া হয় ছাগলের হাত থেকে জমি রক্ষা করতে। এখন সেই বেড়াই যদি জমি ভক্ষণ করতে আরম্ভ করে দেয়, তখন আমাদের বিশেষ কী আর করার থাকে?’

তিনি আরও লেখেন, ‘এক সময় ছাত্রলীগের সম্মেলনের মেয়াদ ছিল এক বছর। দেখা যেতো এক বছর না পেরোতেই নেতারা সম্মেলন দিয়ে বিদায় হয়ে যেতেন। এমনও অনেক নজির আছে কোনো কোনো সময় ১০-১১ মাসের মাথায়ই সম্মেলনের আয়োজন করা হতো। এখন সময় অনেক বদলেছে। দেশ অনেক উন্নত এবং আধুনিক হয়েছে। আগেরকার নেতাদের মতো নৌকায় চড়ে সম্মেলন করতে যেতে হয় না। তারপর আবার আমাদের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে দু’বছর করা হয়েছে। এই এতো কিছুর পরও, এতো সুযোগ সুবিধার পরও, আমরা নির্দিষ্ট সময়ে সম্মেলন আয়োজন করতে পারি না। সত্যি কথা হলো আমরা পারি কিন্তু করি না। আমাদের আরও আরও থাকতে হবে, আরও আরও ক্ষমতা আস্বাদ করতে হবে। এই হলো আমরা যারা নেতা হই, তাদের প্রত্যেকের মানসিকতা। যেখানে নৈতিকভাবে আমরা কেউই বলিয়ান নই, শক্তিশালী নই। কেউ ক্ষমতা পাওয়ার পর যখন ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থাকে, ছেড়ে যেতে চায় না, তাকে আমরা কোন মুখে বলবো সে ভালো মানুষ!!’

ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সোহান খান তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ একটা ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট বডি, সবাই কলিগ এখানে কিন্তু কর্মী নয় কারও। পার্থক্য শুধু কারও চেয়ার বড় বা কারও ছোট। সিদ্ধান্ত গ্রহণ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক লেখা হয়, মানে সবাই জড়িত এখানে। তাই সফলতা/ব্যর্থতা সবার এখানে। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে অনেক যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হচ্ছে, সিনিয়র নেতাদের দ্বারা, যা অনেকের মনের হতাশা বা আক্ষেপ থেকে হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় নেত্রীও (ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অভিভাবক ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) চারজন জাতীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন ছাত্রলীগ দেখাশোনার। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান দুই বছরমেয়াদি কমিটি সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পার করেছে ইতোমধ্যে, তাই আমরা কতটুকু সফল/ব্যর্থ তা নিয়ে জাতীয় চার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতার উপস্থিতিতে একটি সাধারণ সভা আহ্বানের জন্য অনুরোধ করছি। এতে বর্তমান সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য অন্তত কিছু সিদ্ধান্ত স্থির হবে। পরস্পরের প্রতি কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ হবে।’

ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক ও এই কমিটিতে পদবঞ্চিত শেখ নকিবুর ইসলাম সুমন লিখেছেন, ‘ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন সময়ের দাবি। শত শত ব্যর্থতার মধ্যে ৩০তম সম্মেলন আয়োজনই হতে পারে জয়-লেখকের জন্য বড় সফলতা!’chatra.jpgছাত্রলীগের সবশেষ জাতীয় সম্মেলন হয় ২০১৮ সালের মে মাসে, যার উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ফাইল ছবি

ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও এই কমিটিতে পদবঞ্চিত এসএম মামুন লিখেছেন, ‘জয়-লেখকের নেতৃত্ব তাদের সময়ে সফল না ব্যর্থ, সেটা পরবর্তী সম্মেলনের পরে আলোচনার খোরাক হতে পারে। মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে। করোনা পরিস্থিতির কারণে হয়তো সম্মেলনের উদ্যোগ নেননি বঙ্গবন্ধু তনয়া। সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করেছে। বিশেষ পরিস্থিতির গল্প বাদ দিয়ে আমরা চাই, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সম্মেলন আয়োজনের মাধ্যমে পরবর্তী নেতৃত্ব এসে সংগঠনকে বিশেষ পরিস্থিতির হাত থেকে রক্ষা করুক। সে ক্ষেত্রে সংগঠনের সর্বোচ্চ দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে জয়-লেখককে উদ্যোগ নিতে হবে।’

সংগঠনের দায়িত্বশীলরা যা বলছেন
দলের ফোরামের আলোচনা কেন ফেসবুকে? এমন প্রশ্নেব জবাবে সহ-সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শামীম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সঠিক সময়ে ফোরামের আলোচনা সভা ডাকা হয় না। নির্বাহী সংসদে সমন্বয়হীনতা আছে। সিনিয়র নেতাদের পাশ কাটিয়ে এককভাবে সংগঠন পরিচালনা করা হয়। কোনো প্রকার গঠনতন্ত্রের নিয়মনীতি মানা হয় না। এসব বিষয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই লিখছি।’

এগুলো লেখার আগে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে শামীম বলেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কারও ফোন রিসিভ করেন না। বর্ধিত সভা বা সাধারণ সভার আয়োজন করতে অনুরোধ করা হলেও তারা সেটা করেন না। মধুর ক্যান্টিনেও নিয়মিত আসেন না। তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা যায় না।’

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়কে মোবাইল ফোনে তিনদিন বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তার সাড়া মেলেনি।

সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘যাদের আদর্শিক দুর্বলতা আছে, তারাই শুধু এগুলো করে। নেত্রীর প্রতি যাদের আস্থা কম, তারা এগুলো করে। নিজের রাজনীতি যারা নেত্রীর ওপরে, সংগঠনের ওপরে চাপিয়ে দেয় ব্যক্তিস্বার্থে, তারাই এগুলো করে। এরা যুগে যুগে ছিল এবং যুগে যুগে থাকবে। যেভাবে নেগলেক্টেড ছিল, সেভাবে নেগলেক্টেডই থাকবে।’

ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতারাও
ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং ফেসবুকে এভাবে প্রকাশ্যে লেখালেখির বিষয়ে সংগঠনটি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন করোনার কারণে সেভাবে সাংগঠনিক কাজ করা যায়নি। প্রেস রিলিজে কমিটি দেওয়া ছাড়া তো উপায়ও ছিল না। ওদের (ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির) মেয়াদও তো শেষ পর্যায়ে। ভারমুক্ত করে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে দুই বছর শেষ হলে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সময় মতো সম্মেলন হবে, আমরা আশা করছি।’

ফেসবুকে নেতাদের লেখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বিপক্ষে লেখার লোক তো থাকেই। এটা ইতিবাচক অর্থে বিরোধিতা কি না? নাকি নেতিবাচক বা ব্যক্তিস্বার্থে বিরোধিতা, বিবেচনা করে দেখতে হবে।’

ছাত্রলীগের দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি, ঘরে বসে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের কমিটি হয় না। কমিটি করতে হলে ইউনিটে যেতে হবে, সম্মেলন করতে হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি দিতে হবে। এরা (ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ঢাকায় বসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এটা তো অনৈতিক। এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে একমত নই। তাদের এসব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে বক্তব্যে বারবার বলা হয়েছে। তারা এই অনৈতিক কাজটি করেই যাচ্ছে। আমরা এসব কর্মকাণ্ডে তাদের প্রতি অখুশি।’

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের। তিনি ছাত্রদের সমস্যা, ক্যাম্পাসের সমস্যা নিয়ে ছাত্রসংগঠনের কর্মসূচি না থাকায় হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতি নিয়েই বেশি মাথা ঘামান। ছাত্রদের সমস্যা, ক্যাম্পাসের সমস্যা নিয়ে খুব একটা কোনো ছাত্রসংগঠনকে কর্মসূচি দিতে দেখা যায় না। সবাই জাতীয় রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন, সবাই আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু যে ক্যাম্পাসে তারা রাজনীতি করেন, সেই ক্যাম্পাসের সমস্যা, শিক্ষার সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে কোনো ছাত্রসংগঠন সেমিনারেরও আয়োজন করে না। ঐতিহাসিক দিনগুলো পালন করার তাগিদ তারা মোটেও অনুভব করে না।’

তিনি বলেন, ‘এমনিতেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের কাছে ছাত্ররাজনীতি আজকাল তেমন আকর্ষণীয় নয়। ছাত্ররাজনীতি এ ধারায় চলতে থাকলে এর আকর্ষণ সাধারণ ছাত্রসমাজের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে যাবে।’

এসইউজে/এইচএ/এমএস

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে লেখালেখি করলে ‘বিদ্রোহী’ আখ্যা দেওয়া হয়। সেজন্য লিখি না। কিন্তু বিবেকের তাড়নায় না লিখেও পারি না। নির্বাহী সংসদের অর্ধেকেরও বেশি নেতা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। বাকি অর্ধেক নেতা মধুর ক্যান্টিনে এবং টিএসসিতে আড্ডা দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। নেতৃত্বের সাংগঠনিক গুণাবলি বিকাশের ন্যূনতম সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। প্রায় চার বছর অতিবাহিত হচ্ছে অথচ নির্বাহী সংসদের কাউকেই কোনো দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি

একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পাওয়ার পরেও দু’বছর পার হলো। তবুও বিশেষ পরিস্থিতির অবসান হলো না। কথা বলতে গিয়েও বলি না। কারণ বিদায় মুহূর্তে বিদ্রোহী, ষড়যন্ত্রকারী, অনুপ্রবেশকারী হিসেবে নিজেকে দেখতে চাই না

আমরা বারবার বলেছি, ঘরে বসে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের কমিটি হয় না। কমিটি করতে হলে ইউনিটে যেতে হবে, সম্মেলন করতে হবে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কমিটি দিতে হবে। এরা (ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ঢাকায় বসে বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এটা তো অনৈতিক। এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে একমত নই। তাদের এসব বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রামে বক্তব্যে বারবার বলা হয়েছে। তারা এই অনৈতিক কাজটি করেই যাচ্ছে। আমরা এসব কর্মকাণ্ডে তাদের প্রতি অখুশি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।