আলোচনায় অতিরিক্ত ডিআইজি ওমর ফারুকের বাধ্যতামূলক অবসর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৬ পিএম, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুককে

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত ডিআইজি) শেখ ওমর ফারুককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার। সিআইডির ঢাকা মেট্রো উত্তরের দায়িত্বে থাকা ফারুক আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি এবং মডেল মৌ ও পিয়াসার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর তত্ত্বাবধান করছিলেন। তার পাশাপাশি পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার আরও এক কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। তিনি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির এপিবিএন ৬-এর অধিনায়ক মো. আবদুর রহিম।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বিসিএস ১২তম ব্যাচের এ দুই কর্মকর্তার অবসর-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই বিষয়টি সবমহলের আলোচনায় রয়েছে। বিশেষত ওমর ফারুককে কেন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হলো, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সবাই।

ওমর ফারুকের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি চাকরিতে যোগদান করেন। এরই মধ্যে প্রায় ২৯ বছর চাকরি করেছেন তিনি।

একটি সূত্রে জানা যায়, মডেলদের গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মামলার অগ্রগতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বেফাঁস কিছু কথা বলেন শেখ ওমর ফারুক। তার এ ধরনের বক্তব্য পুলিশ বাহিনীর নীতিনির্ধারক এবং সরকারের শীর্ষ মহল ভালোভাবে নেয়নি। এছাড়া তাকে বিএনপি ভাবাদর্শের কর্মকর্তা হিসেবে দেখেন কেউ কেউ। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের জেলা নেত্রকোনার এসপির দায়িত্ব পালন করেছিলেন ওমর ফারুক। বিএনপি আমলে ‘প্রাইজ পোস্টিং’ও পেয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করে পুলিশে আসা এই কর্মকর্তা। ফারুক গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বাবরের আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন বলে বিশ্বাস করতেন অনেকে।

আরেকটি সূত্র বলছে, অনেক দিন ধরেই ওমর ফারুককে অবসরে পাঠানোর ব্যাপারে গুঞ্জন ছিল। মডেলদের ঘটনায় ফারুকের বেফাঁস বক্তব্য ও কর্মকাণ্ড তাকে চাকরি থেকে অবসর পাঠানোর প্রক্রিয়াকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

Pori.jpg

মাদকের মামলা জামিন পেয়ে কারামুক্ত হয়েছেন চিত্রনায়িকা পরীমনি

মডেলদের গ্রেফতারের পর রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওমর ফারুক বলেছিলেন, পরীমণি, পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তারা ব্ল্যাকমেইলিংসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছেন। যদি প্রভাবশালী কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না। যেসব নাম পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে যারা এসব অপরাধে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

৮ আগস্ট তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরীমনির বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কয়েকটি ব্যাংকের এমডি-চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার অভিযোগ গণমাধ্যমে আসার পর তা তদন্ত করছে সিআইডি

পরদিন ৯ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, চিত্রনায়িকা পরীমনি, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌর বাসায় যাতায়াত ছিল এমন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তিদের কোনো তালিকা করা হচ্ছে না।

ওমর ফারুকের ওই বক্তব্যের সঙ্গে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের পার্থক্যেই তার বিষয়ে বাহিনীর অবস্থান কিছুটা স্পষ্ট হয়ে যায় সংশ্লিষ্টদের কাছে।

Pori.jpg

বাধ্যতামূলক অবসরে যেতে হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুককে

এর মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমনির জামিন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য থাকলেও হাইকোর্ট এ শুনানি ৩১ আগস্ট করার আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পরীমনির জামিন শুনানি করেন। শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। ১ সেপ্টেম্বর সকালে কারামুক্ত হন পরীমনি

পরে বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) এক আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মামলার দুই তদন্ত কর্মকর্তাকে (আইও) আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সশরীরে উপস্থিত হতে বলেন। এছাড়া ওই মামলায় তাকে তিন দফায় রিমান্ডের আদেশ দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট বিচারকের কাছে ব্যাখ্যাও চান

কী কারণে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে জানতে চাইলে শেখ ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ অবসরের কারণের বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি আমাকে। সরকারি কর্মকর্তাদের ২০-২৫ বছর চাকরির বয়স হয়ে গেলে সরকার যদি মনে করে অবসরে পাঠাবে তা করতেই পারে। এছাড়া অবসরের অন্য কোনো কারণ আছে কি-না আমার জানা নেই।’

জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনঞ্জয় দাসের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চাকরি ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি ২০১৮ (২০১৮ সালের ৫৭ নং আইন)-এর ৪৫ ধারার বিধান অনুযায়ী জনস্বার্থে তাদের সরকারি চাকরি থেকে অবসর প্রদান করা হলো। কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক অবসরজনিত সব সুবিধা পাবেন।

টিটি/এইচএ/এমএস

এ অবসরের কারণের বিষয়ে কেউ কিছু বলেনি আমাকে। সরকারি কর্মকর্তাদের ২০-২৫ বছর চাকরির বয়স হয়ে গেলে সরকার যদি মনে করে অবসরে পাঠাবে তা করতেই পারে। এছাড়া অবসরের অন্য কোনো কারণ আছে কি-না আমার জানা নেই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।