সায়েদাবাদ : এবারও মেলেনি কাঙ্ক্ষিত দর, শিডিউল কারচুপির অভিযোগ

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ১২:১১ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২১

অডিও শুনুন

রাজধানীর সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল ইজারায় পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু কোনোবারই কাঙ্ক্ষিত দর পায়নি সংস্থাটি। এবারও সরকার নির্ধারিত দরের ধারে-কাছেও যেতে পারেনি কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে এ বাস টার্মিনাল ইজারায় শিডিউল সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল না এবং একটি চক্রের কারণে এ দরপত্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৫ জুলাই বিষয়টি ডিএসসিসির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন শিডিউল না পাওয়া এক ঠিকাদার।

ওই ঠিকাদারের অভিযোগ, পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে লেখা ছিল, ‘এই দরপত্র সবার জন্য উন্মুক্ত’। কিন্তু বাস্তবে তা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওই চক্রটির বাইরে কেউ ডিএসসিসির দরপত্রে অংশ নিতে পারে না। কেউ অংশ নিলেও কাজ পায় না।

ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ জুন সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে টার্মিনাল ফি, টয়লেট, গোসলখানা ব্যবহার (চারটি), গাড়ি ধোয়া ফি ও কুলিমজুরি আদায় কাজের ইজারাদার নিয়োগে দরপত্র আহ্বান করেন ডিএসসিসির মহাব্যবস্থাপক (পরিবহন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। এক বছরের জন্য এ কাজে আট কোটি টাকা দর চাওয়া হয়। গত ১৮ জুলাই দরপত্রের শিডিউল সংগ্রহের শেষ দিন ছিল। এই সময় পর্যন্ত মাত্র দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শিডিউল কিনতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েছেন ‘৭ এলেভেন ঢাকা লিমিটেড’র স্বত্বাধিকারী জামাল উদ্দিন আহমেদ, তিন কোটি ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন ‘সাদ্দাম স্টেশনারি’র স্বত্বাধিকারী নিলয় মাহমুদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা বলেন, এখন সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে আড়াই কোটি টাকা কমে ‘৭ এলেভেন ঢাকা লিমিটেড’কে বাস টার্মিনালটি ইজারা দেয়ার প্রস্ততি চলছে। ইতোমধ্যে মেয়রের দফতরে ফাইল পাঠানো হয়েছে। মেয়র অনুমোদন দিলে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। যদিও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নির্ধারিত ওই দরের চেয়ে কমে কার্যাদেশ দেয়ার বিধান নেই। কারণ বাস টার্মিনাল সার্ভে করেই ওই দর নির্ধারণ করেছে মন্ত্রণালয়।

jagonews24

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের জন্য পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও সরকার নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি। এখন আইন অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বরাবর ফাইল পাঠানো হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করা যায়।’

শিডিউল বিক্রি নিয়ে কারচুপির অভিযোগ
গত ২৪ জুন প্রকাশিত ওই দরপত্র অনুযায়ী সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ইজারার শিডিউল ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ডিএসসিসির হিসাব বিভাগ, পরিবহন বিভাগসহ সব আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে বিক্রির কথা। কিন্তু ডিএসসিসির পরিবহন বিভাগ তার কোনোটিতেই শিডিউল পাঠায়নি বলে জানা গেছে।

বাস টার্মিনাল ইজারার শিডিউল না পেয়ে গত ২৫ জুলাই ডিএসসিসি মেয়র ও প্রধান নির্বাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ‘এইচ এইচ এন্টারপ্রাইজ’র মালিক মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই দরপত্র সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় যাই। কিন্তু কোথাও শিডিউল পাইনি। পরিবহন বিভাগে শিডিউলের জন্য গেলে ‘উ পরের নির্দেশ’ ছাড়া শিডিউল বিক্রি করা যাবে না বলে জানানো হয়। ‘উ পরের নির্দেশ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘জরুরি মিটিং আছে’ বলে নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সারাদিন অপেক্ষা করেও তার দেখা পাওয়া যায়নি।’

ঢাকা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইলিয়াস মেহেদী জানান, তার জানা মতে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ইজারার শিডিউল তাদের অফিসে দেয়া হয়নি। একই বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি ডিএসসিসির অঞ্চল-৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন সরকার।

jagonews24

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির দুজন কর্মকর্তা ও তিনজন ঠিকাদার জানান, নিজ দফতরে সব শিডিউল জমা রেখেছিলেন পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস। তিনি শুধু তার পছন্দের ওই দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে শিডিউল দিয়েছেন। অন্য ঠিকাদাররা শিডিউল চাইলে তাদের ‘দেব, দিচ্ছি’ বলে সময় পার করেছেন। এ দরপত্র নিয়ে মোটা অংকের অর্থের লেনদেনেরও অভিযোগ উঠেছে।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পরিবহন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় শিডিউল দেয়া হয়েছে। যারা বলছে, শিডিউল পায়নি, তারা খোঁজই নেয়নি।’

তার দফতর থেকে কেন সবার জন্য শিডিউল বিক্রি উন্মুক্ত ছিল না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘শিডিউল নিতে হলে আগে শিডিউল মূল্য বাবদ নির্ধারিত অর্থ ব্যাংক চালানের মাধ্যমে মেয়র বরাবর জমা দিতে হবে। কিন্তু অন্যান্য ঠিকাদাররা তা করেননি। তাই তাদের শিডিউল দেয়া হয়নি।’

যদিও ডিএসসিসির উন্মুক্ত দরপত্রের বিজ্ঞপ্তিতে আগে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে শিডিউল সংগ্রহ করে ব্যাংক চালান করার কথা বলা হয়েছে।

শিডিউল নিয়ে এমন নাটকীয়তার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এমএমএ/এইচএ/জিকেএস

এইচ এইচ এন্টারপ্রাইজ’র মালিক মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘গত ১৮ জুলাই দরপত্র সংগ্রহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় যাই। কিন্তু কোথাও শিডিউল পাইনি। পরিবহন বিভাগে শিডিউলের জন্য গেলে ‘উ পরের নির্দেশ’ ছাড়া শিডিউল বিক্রি করা যাবে না বলে জানানো হয়। ‘উ পরের নির্দেশ’ বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘জরুরি মিটিং আছে’ বলে নিজ কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। সারাদিন অপেক্ষা করেও তার দেখা পাওয়া যায়নি

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের জন্য পরপর তিনবার দরপত্র আহ্বান করেও সরকার নির্ধারিত দর পাওয়া যায়নি। এখন আইন অনুযায়ী করণীয় ঠিক করতে ডিএসসিসি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বরাবর ফাইল পাঠানো হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন, কী করা যায়

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।