দেশ স্বাধীন করেও বড় পরাধীন তারা!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৮:২৮ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫

নিদারুণ কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে মেহেরপুর আশরাফপুর গ্রামের ইদ্রিস আলী ও নোয়াখালিপাড়া গ্রামের তাহের আলীর। পরাধীনতার হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে ৭১ সালে জীবন বাজি রেখে ৮ নম্বর সেক্টর থেকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আঘাতপ্রাপ্ত হন দু`জনই।

বর্তমানে বয়সের ভারে অনেকটাই ন্যুয়ে পড়া তাহের আলী ভ্যান চলিয়ে অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছেন। অন্যদিকে, ইদ্রিস আলী মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলায় প্রায় ১১শ` মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে সদরে রয়েছে প্রায় ৪শ` ৫০ জন।  অসহায় অবস্থায় দিন যাপন করেছন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা।

আশরাফপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী। ছেলে সন্তান নিয়ে ভালোই দিন কাটছিল তার। কিন্তু এক বছর আগে হঠ্যাৎই ধরা পড়ে ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধি। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দিন গুণছেন তিনি। মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে অর্থের অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।

Meherpur

বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত হয়ে নোয়াখালি পাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলী রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। এক দুর্ঘটনায় রিকশাটি ভেঙে যাওয়ায় অন্যের একটি ভ্যান নিয়েছেন। হাত ভেঙে যাওয়ায় এক মাস ধরে কাজ করতে পারছেন না তিনি। বর্তমানে অসহায় ও অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পরিবার দু’টি। ক্রমশই রোগ শোক ও বয়সের ভারে অক্ষম হয়ে পড়ছেন তারা।

প্রতিবেশি হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, তাহের আলী একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের দেশের গর্ব। আগে রিকশা চালিয়ে দিন চলতো তার। কিন্তু এখন হাত ভেঙে বিছানায় পড়ে আছেন বলে দেখার কেউ নেই।

ক্যান্সারে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলীর ছেলে সেলিম হোসেন জাগো নিউজকে জানান, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, এক বছর ধরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে বিছানাগত হয়েছেন। টাকার অভাবে আমরা তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। যদি কেউ সহযোগিতা করতেন তাহলে আমার বাবা কিছুদিন বেঁচে থাকতে পারতেন।

মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলীর স্ত্রী জলি খাতুন জাগো নিউজকে জানান, আমার স্বামী এখন কিছুই করতে পারেন না। ছেলে মেয়ের খরচ চালিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে অনেক ঋণের মধ্যে পড়ে গেছি। এখন সংসারও চলছে না ঋণও শোধ করতে পারছি না।

Fredomfiter

মুক্তিযোদ্ধা তাহের আলী জাগো নিউজকে জানান, বয়স হয়ে গেছে। আগে রিকশা চালাতম। রিকশা ভেঙে যাওয়ায় এখন ভ্যান চালান। সরকার থেকে যে ভাতা পাই তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ দিয়ে সংসার কোনোরকমে চলে যায়।

ক্যান্সারে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী জাগো নিউজকে জানান, ক্যান্সারের মতো মরণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় ২৮ দিন চিকিৎসা নিয়ে আসলাম। টাকার অভাবে এখন নিজের চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এখন খেটে খেতেও পারি না। খুবই কঠিন অবস্থায় দিন পার করতে হচ্ছে। যদি কোনো স্বহৃদয়বান ব্যক্তি আমাদের দিকে একটু সুনজর দিয়ে তাকান তাহলে আমার চিকিৎসা করাতে পারি। চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন কিন্তু এখন আমি অসহায়ভাবে দিন কাটাচ্ছি।

মেহেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বশির আহম্মেদ জাগো নিউজকে জানান, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী ক্যান্সারে ভুগছেন। অনেকে ভ্যন রিকশা চালিয়ে অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। জেলা কমান্ডারের তহবিলে কোনো টাকা না থাকায় তাকে সহযোগিতা করতে পারছি না। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার চিকিৎসা এবং অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতার জন্য বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।