কেউ রাখেনি দয়াল চাকমার খবর


প্রকাশিত: ০৪:৫০ এএম, ০৭ ডিসেম্বর ২০১৫

একাত্তরের রণাঙ্গনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্সনায়েক মুন্সী আব্দুর রউফ। রাঙামাটি জেলা সদরের অদূরে নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট এলাকায় সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে হানাদারদের হাতে যিনি নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন সেই বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলের বুকে নির্জনে চিরনিদ্রায় শায়িত।

সেই দিন এই বীরশ্রেষ্ঠকে তাৎক্ষণিক সম্মান প্রদর্শন করে সমাহিত করার সুযোগ হয়েছিল দয়াল কৃষ্ণ চাকমা নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার। তিনি আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু তার খবর রাখেন না কেউ। তবে এ পবিত্রতম কাজটি সম্পাদন করতে পেরে নিজেকে মহাভাগ্যবান ও গর্বিত মনে করেন বুড়িঘাটের সেই দয়াল কৃষ্ণ চাকমা। তিনি বুড়িঘাটের ভাঙামুড়া গ্রামের ঈশ্বর চন্দ্র চাকমার ছেলে।

দয়াল কৃষ্ণ চাকমা বলেন, ৭১ সালের ২০ এপ্রিলের ওই যুদ্ধে তিনি ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী। সেইদিন রণাঙ্গনের পাশে জঙ্গলে একটি গাছে ওঠে যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। শহীদ হওয়ার একদিন পরই মুন্সী আব্দুর রউফের পবিত্র মরদেহ খুঁজে নিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সমাহিত করেছিলেন। সেই থেকে আজও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থলটি পবিত্র রাখতে স্বযত্নে ও সসম্মানে সংরক্ষণ করে পাহারা দিয়ে আসছিলেন গর্বিত দয়াল কৃষ্ণ চাকমা। কিন্তু কেউ তার কোনো খোঁজ-খবর নেন না। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী প্রশাসন বা কর্তা ব্যক্তিদের কেউ কোনো খবর না নিলেও দিনের পর দিন শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থলটি পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন দয়াল কৃষ্ণ চাকমা। স্বজাতির কিংবা রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু তার অহংকার একটাই সেটি হলো মুন্সী আব্দুর রউফ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরশ্রেষ্ঠ।

দয়াল কৃষ্ণ চাকমা বলেন, তার কিছুই চাওয়ার নেই। নিঃস্বার্থভাবে বাংলা মায়ের এমন এক বীর সন্তানের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর যে ভাগ্য তার জুটেছে সেটাই একমাত্র অহংকার। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের মা সৈয়দা মুকিদুন্নেছা বেগম রাঙামাটি এসে তাকে নিজের সন্তানের মতো বলে যে স্বীকৃতি দিয়েছেন সেটাই তার সবচেয়ে বড় পাওয়া। বড় কৃতিত্ব।

Chakma

উল্লেখ্য, মহান বিজয়ের পর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটিতে শহীদ হওয়া মুন্সী আব্দুর রউফকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু তখন কারও জানা ছিল না যে, এ বীরশ্রেষ্ঠের সমাধিস্থলটি কোথায়। সেই দিনের যুদ্ধে কমান্ডার হিসেবে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু। তার সহায়তায় স্বাধীনতার প্রায় ২৬ বছর পর ১৯৯৬ সালে এ বীরশ্রেষ্ঠের সমাধি স্থলের সন্ধান মেলে। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) নির্দেশ দেন বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থলটি খুঁজে বের করার। তার নির্দেশে বিডিআরের রাঙামাটি সেক্টর দয়াল কৃষ্ণ চাকমার সহায়তায় বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সী আব্দুর রউফের সমাধিস্থল খুঁজে বের করেন। এরপর সেখানে নির্মিত হয় শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতিসৌধ। এছাড়া রাঙামাটি শহরের পুরাতন শহীদ মিনার সংলগ্ন কাপ্তাই হ্রদের কোল ঘেঁষে একটি স্মৃতিস্তম্ভ এবং সাপছড়ি এলাকায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয় শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফের স্মৃতিসৌধ।  

এসএস/এআরএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।