অযত্ন অবহেলায় যশোরের বধ্যভূমিগুলো


প্রকাশিত: ০৪:১৩ এএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৫

যশোরে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিচিহ্ন বধ্যভূমিগুলো বেহাল অবস্থায় রয়েছে। অযত্ন অবহেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই স্মৃতিচিহ্নগুলো। অনেক বধ্যভূমির উপর বাড়িঘরও গড়ে উঠেছে।

৭১’এ মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে গোটা যশোর জেলার উপর পাক হানাদার ও দোসররা চালিয়েছিল নির্মম তাণ্ডব। বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধা, বুদ্ধিজীবীসহ নিরীহ শত শত মানুষকে ধরে এনে হত্যা করেছে বধ্যভূমিতে। শহরের অন্যতম বধ্যভূমি শংকরপুর রায়পাড়া এলাকায় হত্যা করা হয় অসংখ্য মানুষকে। দেশ স্বাধীনের পর এখান থেকে কয়েক ট্রাক মানুষের হাড় কঙ্কাল মিত্রবাহিনী ভারতে নিয়ে যায়। এই বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হলেও এটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে।

প্রতি বছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। কিন্তু বছরের অন্য দিনগুলোতে এই বধ্যভূমির খোঁজ নেয়ার অবকাশ থাকে না। এটি ছাড়াও যশোর শহর ও শহরতলী এলাকায় অন্তত ৫০টি বধ্যভূমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- বিরামপুর, ধোপাখোলা, খয়েরতলা, হর্টিকালচার সেন্টার, যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতাল, কোতয়ালি থানা চত্বর, বকচর, ব্যাপটিস্ট চার্চ, রূপদিয়া, রেলস্টেশন মাদরাসা, চৌগাছার ডাকবাংলো।

Jessor

ওই সময়ের প্রতক্ষ্যদর্শীদের বিবরণে জানা যায়, শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ধরে আনা ছাড়াও ট্রেনে করে অসংখ্য মানুষকে রায়পাড়া বধ্যভূমিতে নিয়ে আসা হতো। এরপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে তাদের এই বধ্যভূমিতে হত্যা করা হতো। সে সময় ওই এলাকা বনজঙ্গল ঘেরা এবং নির্জন হওয়ায় অসংখ্য মানুষকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে এই বধ্যভূমি থেকে কয়েক ট্রাক হাড়-কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পরে মিত্রবাহিনী তা ভারতে নিয়ে যায়।

বকচর এলাকায়ও হত্যা করা হয়েছে অনেক দেশপ্রেমিক বাঙালিকে। বকচরের নটবর বাবুর বাঁশবাগানে বিহারীরা কয়েকশ’ বাঙালিকে হত্যা করে। ধোপাখোলায় দু’জন রাজাকারকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসররা ২৩ বাঙালিকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে বিরামপুরেও বেশ কয়েকটি গণহত্যা চালানো হয়। ৬ ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর বিরামপুরের একটি কুয়ার মধ্য থেকে ১০টি মানুষের মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। আর ভৈরব নদের দড়াটান ব্রিজের পাশেও ফেলা হয়েছে অনেক মুক্তিকামী মানুষের মরদেহ। বিভিন্ন স্থানে হত্যার শিকার এই মানুষগুলোর মরদেহ সুইপাররা এখানে এনে ফেলতো। কয়েক বছর আগেও যশোরের ঢাকা রোড বাবলাতলা ব্রিজ সংলগ্ন ভৈরব নদের তীর থেকে বেশ কিছু কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।

Jessor

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই ব্রিজের নিচেও অসংখ্য মানুষকে হত্যা করে ফেলা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, যশোর জেনারেল হাসপাতাল, বকচর, কোতয়ালি থানা ও রেলস্টেশন মাদরাসা সংরক্ষিত এলাকায় হওয়ায় এখানকার বধ্যভূমি রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোও রয়েছে অযত্ন অবহেলায়। আর অন্য বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের তেমন উদ্যোগ নেই। অনেক বধ্যভূমির উপর ঘর বাড়িও নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্মৃতিচিহ্নগুলো।

Jessor

মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স-মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) বৃহত্তর যশোর জেলার (যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল) উপ-অধিনায়ক রবিউল আলম মুক্তিযুদ্ধের এই স্মৃতিচিহ্নগুলোকে সংরক্ষণের দাবি জানান। তিনি বলেন, এগুলো বাঙালির সংগ্রামের চিহ্ন। আর পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর নির্মমতার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। এগুলো সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে আগামী প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ভুলে যাবে। তাই তিনি বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।