জলবায়ু পরিবর্তনের রাজনীতি


প্রকাশিত: ০১:২৬ পিএম, ০২ ডিসেম্বর ২০১৫

জাতিসংঘের ২১তম জলবায়ু সম্মেলনে অংশ নিতে প্যারিসে বিশ্বের ১৫০টি দেশের প্রধানরা জড়ো হয়েছেন। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে চেষ্টা করাই এ সম্মেলনের লক্ষ্য।

যদি এই উদ্দেশ্য সফল হয়, তাহলে ২০২০ সাল পর্যন্ত চুক্তিটি কার্যকর থাকবে। একই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় ঠেকাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা যদি একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে আগামী ‘দুই সপ্তাহ’ মানবতার সর্বশেষ্ঠ সময় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কিন্তু মুদ্রার উল্টো পিঠে আরেকটি প্রশ্ন রয়েছে, আদৌ কি সবার জন্য একটি বাধ্যতামূলক চুক্তি হচ্ছে? যদি হয়ও তাহলে এটি শুধুমাত্র কাগজে চুক্তি হবে না তো? নাকি একটি মূল্যবান চুক্তি হতে যাচ্ছে!

paris

জলবায়ু পরিবর্তনের খবরে মানুষ খুব কমই আশাবাদী হয়। তাপমাত্রা অথবা গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বিজ্ঞানীদের ধারণার চেয়েও দ্রুতগতিতে বাড়ছে। চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরো বিধ্বংসী ও ক্ষতিকর হবে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই বিষয়টিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার কখনোই পর্যাপ্ত দেখা যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক সব আলোচনা সব সময় হতাশায় শেষ হয়েছে।

এর আগে ২০১৩ সালে পোলান্ডে জলবায়ু সম্মেলনে অঙ্গীকার বাস্তবায়নে বেশ কিছু আগ্রহী দেশের তালিকা তৈরি হয়েছিল। স্বেচ্ছায় তৈরি এই তালিকাভূক্ত দেশগুলোর অঙ্গীকারের আলোকে বৈশ্বিক জলবায়ূ চুক্তি নিয়েই কিছু আলোচনা চলছে প্যারিসে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য (যেমন অর্থ এবং প্রযুক্তিগত বিষয়াদি) ওই অঙ্গীকারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল।

paris

যেমন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮ সদস্য দেশ ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ ১৯৯০ সালের চেয়ে ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে, কেনিয়া আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সহায়তা, বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির আলোকে ৩০ শতাংশ কমাতে রাজি হয়। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য সেই সময়ে ১৩৫টি দেশের তৈরি করা সেই অঙ্গীকারনামা এবার ছুড়ে ফেলা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ওই অঙ্গীকার অনুযায়ী একমাত্র ইথিওপিয়া এবং মরক্কো তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে কমিয়ে আনতে উপযুক্ত ছিল।

যুক্তরাজ্যের ম্যানচেষ্টার ইউনিভার্সিটির গবেষণা সহযোগী ভিক্টরিয়া জনসন আল-জাজিরাকে বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির কুফল হিসেবে আমরা ইতোমধ্যে খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এবং সামুদ্রিক উচ্চতার ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলা করছি।

paris

তিনি বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা যতটা না বৈজ্ঞানিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক, এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও এর প্রভাবের সম্পর্ক এক নয়।

তিনি আরো বলেন, জলবায়ু চুক্তির প্রথম ধাপ হচ্ছে এর অঙ্গীকার। বৈশ্বিক এই চুক্তি মানা বাধ্যতামূলক করতে এখনো অনেক বিষয় ঠিক করা হয়নি। কিসের ভিত্তিতে গ্যাস নিঃসরণ পর্যবেক্ষণ করা হবে? অঙ্গীকার বাস্তবায়ন এবং পুনর্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কি? জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং অঙ্গীকার বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় অর্থ পাবে কি? এসব বিষয়ে অর্থনৈতিক জায়ান্ট দেশগুলোর প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দেশ এবং জোটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতিবিদ নিকোলাস স্টার্নের মতে, প্যারিস চুক্তি মানা বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক হবে না। কেননা এক্ষেত্রে দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি পূরণে বিশ্বাসযোগ্য কোনো নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।

paris

তবে এই চুক্তি বাধ্যতামূলক হোক বা না হোক, ১৯০টি দেশ অথবা একক কোনো দেশের সরকারের সক্ষমতা থাকুক বা না থাকুক অথবা রাজনৈতিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি শুধুমাত্র সরকারি আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে না থাকলেও এটি আগামী দিনের বিশ্বের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।

এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাকে অনেকেই সমস্যা হিসেবে দেখছেন। ব্যাপক নিঃসরণ কমাতে প্রয়োজনীয় নীতি তৈরির ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্ব এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার সক্ষমতা হারানোর আশঙ্কা করছেন রাজনীতিবিদরা। এই আশঙ্কা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বর্তমান তদারকি ব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। প্যারিস সম্মেলনের অঙ্গীকারের অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্বের জনগণ।

এসআইএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।