জনগণ ও কর্মীদের ব্যাংক হবে মিডল্যান্ড
দেশের ইতিহাসে প্রথম ব্যাংক হিসেবে মালিকানার একটি অংশ বা শেয়ার কর্মীদের দিচ্ছে মিডল্যান্ড ব্যাংক। চতুর্থ প্রজন্মের এই ব্যাংক প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অংশ হিসেবে কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের ৩৫ লাখ শেয়ার দেবে। সেই সঙ্গে ব্যাংকটিতে জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে শিগগির আইপিওতে শেয়ার ছাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকেও কর্মীদের শেয়ার দেয়ার অনুমোদন পেয়েছে ব্যাংকটি। কর্মীদের মালিকানার অংশ দেয়া ব্যাংকটি আইপিও কার্যক্রমও গুছিয়ে নিয়েছে। ২৮ এপ্রিলের মধ্যে বিএসইসিতে আইপিও আবেদন করার লক্ষ্যে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।
এ পরিস্থিতিতে আইপিও প্রক্রিয়া এবং কর্মীদের শেয়ার দেয়ার বিষয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান-উজ জামান। পাশাপাশি ব্যাংক খাতের বিভিন্ন বিষয় নিয়েও কথা বলেন তিনি।
জাগো নিউজ : কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দেয়া, এ পরিকল্পনাটা আপনারা কীভাবে নিলেন?
আহসান-উজ জামান: আমরা আমাদের ব্যাংককে জনগণের মালিকানার প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছি। সেই সঙ্গে এটি কর্মীদেরও ব্যাংক হবে। আমাদের দেশে আপনি আরেকটি ব্যাংকও পাবেন না যেটাতে কর্মীদের মালিকানা আছে। কর্মীদের প্রতিষ্ঠানের মালিকানা দেয়ার কনসেপ্ট বিদেশে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি। আমরা বিশ্বাস করি কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা পেলে তাদের দায়বদ্ধতা বেড়ে যাবে। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের ভালোবাসা বাড়বে।
আমরা চেয়েছি জনগণ যেমন আমাদের ব্যাংকের মালিকানা পাবেন, তেমনি কর্মীরাও মালিকানা পাক। এতে জনগণের পাশাপাশি ব্যাংকে কর্মীদের মালিকানাও প্রতিষ্ঠিত হবে। এর মাধ্যমে জনগণ ও কর্মীদের ব্যাংক হয়ে উঠবে মিডল্যান্ড ব্যাংক।
জাগো নিউজ: এর ফলে কী ধরনের সুফল পাবেন বলে আশা করছেন?
আহসান-উজ জামান: এটা (কর্মীদের শেয়ার দেয়া) নতুন ধারণা। এটাকে সবার উৎসাহ দেয়া উচিত। আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। সেই সঙ্গে বর্তমান কমিশন (বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) এটা গ্রহণ করেছে। এতে কর্মীরা কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ হবেন। তারা কাজের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হবেন। এতে প্রতিষ্ঠানের মুনাফার সক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মুনাফার সক্ষমতা বাড়লে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন।
জাগো নিউজ: এতে কি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে?
আহসান-উজ জামান: আমি বিশ্বাস করি কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের মালিকানার একটি অংশ নেয়ায় তা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। কর্মীরাই কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ভালো বোঝেন। সুতরাং তারা যদি বিশ্বাস রাখেন, তাহলে জনগণও বিশ্বাস রাখার কথা যে এই কোম্পানি ভালো করবে।
ব্যাংকের কর্মীরা যে শেয়ার পাবেন তা দুই বছর লক-ইন থাকবে (এই সময়ের মধ্যে তা বিক্রি করা যাবে না)। তাদের বিশ্বাসটা এতোখানি যে, তাদের আশা দুই বছর পুঁজিটা জমা থেকে এটা আরও বাড়বে। অন্যদিকে সাধারণ জনগণ কিন্তু যখন খুশি তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিতে পারবেন। ধরেন দাম পড়ে যাচ্ছে তাহলে কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে তাদের অর্থ তুলে নিতে পারবেন। কিন্তু আমাদের কর্মীরা শেয়ার দাম ১০ টাকার নিচে গেলেও দুই বছরের মধ্যে বিক্রি করতে পারবেন না।
জাগো নিউজ: কর্মীদের কাছ থেকে কী ধরনের সাড়া পেয়েছেন?
আহসান-উজ জামান: কর্মীদের যে পরিমাণ সাড়ে পেয়েছি তাতে আমরা অভিভূত। আমরা যখন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম তখন কিছু ঝুঁকি ছিল। কর্মীরা শেয়ার কিনতে কেমন আগ্রহী হবেন তা আমরা জানতাম না। কিন্তু আমরা দেখলাম যারা সাধারণ কর্মচারী তারাও শেয়ার পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
জাগো নিউজ: কর্মীদের শেয়ার কেনার জন্য আপনারা কোনো ঋণ বা অর্থের জোগান দিচ্ছেন কি?
আহসান-উজ জামান: আইপিও শেয়ার কেনার জন্য আমরা কর্মীদের কোনো ঋণ দিচ্ছি না। কর্মীরা ঋণ করে শেয়ার কিনবেন, আমরা এই ধারণার সঙ্গে একমত নই। আমরা বিশ্বাস করি বিনিয়োগ করা উচিত সঞ্চয় থেকে।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি ভালো লভ্যাংশ দেয়ার পরও অনেক ব্যাংকের শেয়ার দাম অবমূল্যায়িত অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারে আসা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন কি?
আহসান-উজ জামান: আমরা শেয়ারবাজারে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি গত বছর। বর্তমান পরিবেশ ব্যাংক খাতের ঝুঁকি স্পষ্ট করলেও আমরা বিশ্বাস করি সুসংহত সংস্কৃতি ও চমৎকার করপোরেট গভর্ন্যান্সের মতো মৌলভিত্তি সম্পন্ন ব্যাংকগুলো সব সময় ভালো করবে।
জাগো নিউজ: বর্তমানে অনেক ব্যাংক সমস্যার মধ্যেও রয়েছে।
আহসান-উজ জামান: আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বাস করি। দেশের অর্থনীতির মূলনীতিগুলো বেশ শক্তিশালী। আর অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি ব্যাংক খাত। সুতরাং ব্যাংক ভালো করার কথা। যারা নিয়মানুযায়ী নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবে তারা অবশ্যই ভালো করবে। আমরা প্রফিটের (মুনাফার) চেয়ে তারল্যকে সব সময় বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ ব্যাংকের টাকা জনগণের টাকা। গ্রাহক চাওয়া মাত্রই তার টাকা ফেরত দিতে হবে। এ বিষয়টি আমরা সব সময় গুরুত্ব দিয়েছি। যে কারণে দেখেন অনেক ব্যাংক তারল্য সমস্যার মধ্যে পড়লেও আমরা কিন্তু কখনো এ সমস্যায় পড়িনি। আমাদের খেলাপি ঋণের হারও কম।
জাগো নিউজ: পুঁজিবাজারে এলে জবাবদিহিতা বেড়ে যায়। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে আসতে আগ্রহী হয় না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আহসান-উজ জামান: আমাদের ব্যাংক মুনাফা করছে। আমরা চাই এ মুনাফার অংশ উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও পাক। এ কারণে আমরা পুঁজিবাজারে আসছি। পুঁজিবাজারে আসার কারণে জবাবদিহিতা বেড়ে যাবে। এজন্য অনেকে পুঁজিবাজারে আসতে চায় না। তবে আমরা জবাবদিহিতার মধ্যে আসতে চাইছি।
জাগো নিউজ: বিএসইসির কাছে কি আইপিও আবেদন জমা দিয়েছেন?
আহসান-উজ জামান: না, আমরা এখনো বিএসইসিতে আইপিও আবেদন জমা দেইনি। একটি প্রান্তিক শেষ হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে ওই প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে আইপিও আবেদন করা যায়। সে হিসাবে ডিসেম্বর প্রান্তিকের প্রতিবেদন দিয়ে আমাদের ২৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদন করার সুযোগ আছে। আমরা এর আগেই আবেদন করতে পারবো বলে আশা করছি। আইপিও আবেদনের সবকিছুই আমাদের প্রস্তুত আছে।
জাগো নিউজ: বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে আপনার পরামর্শ কী?
আহসান-উজ জামান: আপনি যদি বিনিয়োগ করেন, তাহলে বিনিয়োগটা এক-দুই মাসের জন্য হওয়া উচিত নয়। অনন্তপক্ষে বিনিয়োগটা দু-তিন বছরের জন্য হওয়া উচিত।
এমএএস/এইচএ/এএসএম