একই বাতি বিমানবন্দর কিনেছে ৪৬ লাখে, রাসিক ৩২ লাখ টাকায়

প্রদীপ দাস
প্রদীপ দাস প্রদীপ দাস , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৩ পিএম, ২১ মার্চ ২০২১

প্রতি ইউনিট অটো লিফটিং হাই মাস পোল (বিশেষ ধরনের বাতি সম্বলিত খুঁটি)-এর প্রতিটি ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ২ টাকায় স্থাপন করেছে রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দর। সেই একই ধরনের প্রতিটি খুঁটি বসাতে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) খরচ করেছে ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিট পোলে রাসিকের চেয়ে ১৩ লাখ টাকা বেশি খরচ দেখিয়েছে শাহ মখদুম কর্তৃপক্ষ।

যেখানে রাসিকের এই ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকার দরপত্রকে বাজার দরের তুলনায় ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেখানে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ১৩ লাখ টাকা বেশি খরচের বিষয়টি পড়েছে আরও বড় প্রশ্নের মুখে।

রাসিকের ‘অস্বাভাবিক’ দরপত্রের অভিযোগটি আমলে নিয়ে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান (লিটন)। সেই কমিটির দেয়া প্রতিবেদনে একই লাইট শাহ্ মখদুম বিমানবন্দর ও রাসিকের দরপত্রে ১৩ লাখ টাকার পার্থক্যের সত্যতা উঠে এসেছে।

‘হাই মাস্ট লাইট টেন্ডারসহ অন্যান্য কাজে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ’ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে একটি অভিযোগ হলো, রাসিকের বিদ্যুৎ বিভাগ দেশের কোনো বিভাগ বা অফিসের রেট স্কেজিউল অনুসরণ অথবা কোনো কোম্পানির একক দর অথবা বাজার দর অনুসরণ না করে নিজের খেয়াল খুশিমতো এবং ঠিকাদারের চাহিদা অনুযায়ী কাজটির প্রাক্কলন করেছে। বর্তমান বাজার দর ও রেট স্কেজিউলের দরের চেয়ে অফিসিয়াল প্রাক্কলন পাহাড়সম বেশি।

এ বিষয়ে প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘আলোচ্য দরপত্র দলিল সংক্রান্ত নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, পিডব্লিউডি (গণপূর্ত অধিদফতর), এলজিইডি (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর) বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের রেট স্কেজিউল বইয়ে হাই মাস পোলের রেট নেই। এক্ষেত্রে রাজশাহী শাহ্ মখদুম এয়ারপোর্টে ২০ মিটার অটো লিফটিং হাই মাস পোল স্থাপনে দর পাওয়া যায় ৪৫ লাখ ৭০ হাজার ২ টাকা। রাসিকে অটো লিফটিং হাই মাস পোল স্থাপনের প্রাক্কলিত দর ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই দুই দর তুলনা করলে দেখা যায়, রাসিকের দরটি অপেক্ষাকৃত অনেক কম। এছাড়া আরও দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাইস স্কেজিউলে আলোচ্য অটো লিফটিং হাই মাস পোলের স্থাপনসহ একক দর উদ্ধৃত করেছেন ৩১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, যা সিটি করপোরেশনের দরের চেয়ে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ কম।’

গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর বিষয়টি তদন্ত করার জন্য রাসিক মেয়রের নির্দেশে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, তাদের আহ্বায়ক রাসিক প্রধান প্রকৌশলী মো. খায়রুল বাশার। কমিটির সদস্যরা হলেন নেসকোর রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান, রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান, রুয়েটের তড়িৎকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মামুনুর রশিদ এবং রাসিকের বিএওর সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম খান।

এ বিষয়ে মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এই আইটেমটা (অটো লিফটিং হাই মাস পোল) বাংলাদেশে আনকমন (অপ্রচলিত)। আমরা বিশ্লেষণ করেছি যে, আরও পারিপার্শ্বিক যেসব জায়গায় এটা বসানো হয়েছে, যেমন রাজশাহীর শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরে, ঢাকারও আরেকটি জায়গায়, সেই জায়গাগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছি। অন্যান্য জায়গায় আমি দেখেছি, সেগুলোর তুলনায় রাজশাহী সিটি করপোরেশন কম দরে কিনেছে।’

রাসিকের চেয়ে শাহ্ মখদুম বেশি দরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ওরা (শাহ্ মখদুম বিমানবন্দর) বেশি দরে কিনছে কীভাবে সেটা আমরা ওইভাবে বিবেচনায় নেইনি। ওদের অ্যানালাইসিস আমরা দেখি নাই। এখানকার (রাসিক) বিশ্লেষণে বেসিক রেট, তার সঙ্গে বিভিন্ন ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স, কাস্টম ডিউটি এগুলো আলাদা করে দেখানো ছিল। এগুলো এখানকার জন্য পেয়েছি আমরা। ওখানকারগুলো আমরা ওইভাবে আসলে দেখতে পাইনি। মানে ওদের কাছ থেকে আমরা ডকুমেন্টগুলো আমরা ওইভাবে নেইনি। শুধু রেটটা নেয়া হয়েছে। এখন শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরে প্রফিট মার্জিন কত রাখা হয়েছিল, কম না বেশি সেগুলো আমরা দেখিনি। শুধু কত টাকায় কাজটা আহ্বান করা হয়েছে, সেগুলো নিয়েছি।’

তদন্ত কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘এগুলো দেশে বানানো হয়নি। আমদানি করা হয়েছে, যদিও কাছাকাছি সময়ে।’

যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু
‘রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় লাইটগুলো স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের কেনাকাটা নিয়ে অভিযোগ উঠলে ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন রাসিক মেয়র।

তদন্ত কমিটি যেসব অভিযোগকে সামনে রেখে তদন্ত শুরু করেন, সেগুলো হলো- রাসিক ১৬ এম হাই মাস্ট পোল উইথ লাইটিং সিস্টেম সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য আহ্বান করা দরপত্রে যে দাফতরিক প্রাক্কলন করে তা বাজার দরের তুলনায় অস্বাভাবিক। একক দরদাতার গৃহীত দর গ্রহণে করপোরেশনের কয়েক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেই ঠিকাদারের হুমকিতে অভিযোগকারী বা অন্য কেউ দর জমা দিতে পারেনি। করপোরেশনের প্যাডে কাউন্সিলর বা কর্মকর্তারা এবং বে-নামে ঠিকাদাররা কীভাবে এই অভিযোগ করেন?

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তদন্তের বিষয়বস্তু ছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নেমপ্যাড কীভাবে কর্মচারী ও কাউন্সিলরের নামে ব্যবহার করা হলো? বেনামে ‘অসহায়’, ‘নির্যাতিত’ ঠিকাদারদের আনা অভিযোগ। বেনামে কাউন্সিলর ও কর্মচারীদের আনা অভিযোগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের পাঠানো অভিযোগপত্রের মতো একই ধরনের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণে আনা।

কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ
তবে একাধিক ঠিকাদার, কাউন্সিলর ও কর্মচারীদের আনা অভিযোগগুলোর কোনোটির ‘সত্যতা পাওয়া যায়নি’ উল্লেখ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। স্থানীয় সরকার বিভাগকে গত ৮ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে অবগত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠান রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিন।

প্রধান নির্বাহীর সই করা সেই অবহিতকরণ চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘রাসিকের মেয়র গঠিত ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি সাত পাতার প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনের নেমপ্যাড কীভাবে কর্মচারী ও কাউন্সিলরের নামে ব্যবহার করা হলো সে বিষয়ে রাসিকের অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সভায় এবং করপোরেশনের পরবর্তী সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তের জন্য উপস্থাপনের নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র। প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদন সদয় অবগতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে পাঠানো হলো।’

jagonews24

অভিযোগগুলোকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তদন্ত কমিটি।

প্রথম ক্যাটাগরির অভিযোগগুলো হলো
অভিযোগ ১ : দরপত্রে যেসব শর্ত ও কাজের অভিজ্ঞতা, টার্ন ওভার দেয়ার কথা ছিল তা ‘Haro Engineering & Construction’-এর না থাকলেও প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।

পর্যবেক্ষণ : দরপত্রে বর্ণিত যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে আলোচ্য দরপত্রের আইডি ৩৪৮২৬২ পর্যালোচনায় দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সবগুলো শর্ত পূরণ করেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের টিডিএসে বর্ণিত সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। স্ট্যান্ডার্ড টেন্ডার ডকুমেন্ট ফর প্রকিউরমেন্ট অব গুডসে টার্ন ওভারের শর্তারোপ করার সুযোগ নাই।

অভিযোগ ২ : বিগত ৫ বছরে ‘Haro Engineering & Construction’-এর ‘Gi High Mast Pole’ সরবরাহ ও স্থাপনের কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

পর্যবেক্ষণ : তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ হলো- দরপত্র দলিলে ‘Gi High Mast Pole’ সরবরাহের অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়নি।

অভিযোগ ৩ : দরপত্রে দেয়া অভিজ্ঞতার সনদ সঠিক নয়। এমনকি পাঁচ বছরের বৈদ্যুতিক সরবরাহ কাজে চাওয়া টার্ন ওভার নেই।

পর্যবেক্ষণ : তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ হলো দরপত্র দলিলের আইডি ৩৪৮২৬২ পর্যালোচনায় দেখা যায় শর্ত মোতাবেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞতার সনদ দাখিল করেছেন।

অভিযোগ ৪ : দরপত্রে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ঠিকাদার ক্যাটালগ দাখিল করেনি।

পর্যবেক্ষণ : দরপত্র দলের আইডি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্রের স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ক্যাটালগ দাখিল করেছেন।

দ্বিতীয় ক্যাটাগরিতে একটিই অভিযোগ রয়েছে। সেটি হলো- একটি মাত্র দরপত্র দাখিল হলেও পুনরায় দরপত্র আহ্বান না করে তা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কমিটির পর্যবেক্ষণ হলো- আলোচ্য দরপত্রে ই-জিপিতে দাখিল করা টেন্ডার ওপেনিং রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, দু’টি দরপত্র দলিল বিক্রি করা হলেও একটি দরপত্র দাখিল হয়েছে। পিপিআর ২০০৮ এর বিধি ৯৮ উপবিধি ২৯-এ উল্লেখ রয়েছে যে, ‘বিধি ৯০ অনুসরণক্রমে বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর দরপত্র দাখিলের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে একটি মাত্র দরপত্র দাখিলকৃত হইলেও ক্রয়কারী উক্ত একক দরপত্র মূল্যায়নের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির নিকট প্রেরণ করিবে।’

‘এছাড়া, উক্ত বিধির উপবিধি ৩০ এ বর্ণিত আছে, “মূল্যায়নের সময় যদি দেখা যায় যে, কোন একক দরপত্র সংশ্লিষ্ট দরপত্র দলিলে উল্লিখিত শর্তের অনুবর্তী (complaint) এবং উদ্ধৃত মূল্য দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্যের কাছাকাছি এবং বাজার মূল্যের সমতুল, তাহা হইলে দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি উক্ত একক দরপত্র বিবেচনা করিবার কারণ যুক্তিসহ ব্যাখ্যা করিয়া উক্ত দরপত্রসহ মূল্যায়ন প্রতিবেদন বিধি ৩৬ অনুসারে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করিবে”।

দরপত্র মূল্যায়ন কার্যবিবরণী যাচাই করে দেখা যায়, উক্ত কমিটি উপরে বর্ণিত বিধি, উপবিধি অনুসারে সঠিক সুপারিশ করেছেন এবং অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ এই সুপারিশ অনুমোদন করেছেন।’

jagonews24

আর তৃতীয় ক্যাটাগরির অভিযোগ এবং তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে রাজশাহীর গণপূর্ত জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবেদনে আমরা সামগ্রিকভাবে কথা লিখিনি। আইটেমভিত্তিক যেভাবে অভিযোগ এসেছে, আইটেম ধরে ধরে উত্তর দিয়েছি। তারপরও আমরা কাজের মান নিজ থেকে দেখেছি। বিশেষ করে সেগুলো নামিয়ে দেখেছি। যতটুকু দেখা সম্ভব দেখেছি। সব দেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে যে, এই জিনিসটা ঠিক আছে। সেটাই সামগ্রিকভাবে লেখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি আইটেম মেলানো হয়েছে। যে আইটেমগুলো গণপূর্তের রেট স্কেজিউলে আছে, সেগুলো রেট স্কেজিউলের তুলনায় কম রেট দিয়ে তারা টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। টেন্ডার যেভাবে করা হয়েছে, দরপত্র মোতাবেক তাদের কাজটা ওইভাবে আছে কি না, সেটাও আমরা দেখেছি। এটাও আমরা ঠিক পেয়েছি।’

‘আমরা বিশ্লেষণ করেছি যে, আরও পারিপার্শ্বিক যেসব জায়গায় বসানো হয়েছে, যেমন রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে, ঢাকারও আরেকটি জায়গায়; সেই জায়গাগুলোর সঙ্গে তুলনা করেছি। তারপর পিপিআরে ব্যত্যয় আছে কি না, অভিযোগ অনুযায়ী দেখা হয়েছে। যেমন একটা অভিযোগ ছিল মেকানিক্যালের লোক ইলেক্ট্রিক্যালের বিষয়গুলো দেখছে। যেহেতু তাদেরকে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দেয়া হয়ে গেছে, ডকুমেন্ট আছে, তদন্ত যারা করেছি তা তুলে ধরেছি,’ যোগ করেন প্রকৌশলী কামরুজ্জামান।

প্রধানদের বক্তব্যে অমিল
বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. এ বি এম শরীফ উদ্দিনকে ফোন করেন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। পরিচয় দেয়ার পর এ বি এম শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘হুঁ, বলেন প্লিজ।’ তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই তার উত্তর, ‘আমি একটা মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে আপনি বিদ্যুৎ বিভাগের লিটু সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন কেটে দেন।

অভিযোগের বিষয়ে রাসিকের জবাব না পেয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে জানিয়েছিলেন আইএমইডি পরিচালক।

‘রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পটি ২৯ সেপ্টেম্বর পরিদর্শনে গিয়েছিলেন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিচালক খলিল আহমেদ। এ সময় তিনি অভিযোগগুলোর বিষয়ে রাসিকের জবাব চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে তা দেয়া হয়নি। পরে এসে তিনি স্থানীয় সরকার বিভাগকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করে রাসিকের নির্বাহী প্রকৌশলীর (বিদ্যুৎ) দেয়া এক নথিতে বলা হয়েছে, আইএমইডির পরিচালক খলিল আহমেদ প্রকল্প পরিদর্শন সূচির আওতায় ‘রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ এবং ‘Supply of 1000 nos. ballast for 120W LDV light & LED decorative tree light’ শীর্ষক পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আনুমানিক বিকেল ৪টায় রাজশাহী বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। তারপর প্রধান প্রকৌশলীর গাড়িতে করে তাকে নগর ভবনের গেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয়। তিনি ‘রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও নর্দমাসমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ পরিদর্শনের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালককে সাথে নিয়ে প্রকল্পের সাইট পরিদর্শনে যান এবং প্রায় ২ ঘণ্টা সাইট পরিদর্শনের পর নগর ভবনের গেস্ট হাউজে আনুমানিক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফিরে আসেন।

তারপর তিনি হাই মাস লাইট সংক্রান্ত কাজের নথিপত্র দেখতে চান। ওই নথিটিও তাকে দেয়া হয়। তিনি ওই নথির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাসিকের জবাব চাইলে তাকে জানানো হয়, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের পত্রের বরাতে রাসিক মেয়রের অনুমোদনক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ওই কমিটি নথির সব তথ্যের ছায়ালিপি নিয়েছেন এবং অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছেন। ওই কমিটিতে বিভিন্ন দফতরের কারিগরি সদস্যরা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যে মতামত বা পর্যবেক্ষণ পাওয়া যাবে, সে আলোকেই অভিযোগ জবাব/প্রতিবেদন দিতে হবে। প্রধান প্রকৌশলীর পরামর্শ বা নির্দেশনাসহ যে জবাব দেয়া হবে বা যাবে তা মেয়র কিংবা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন গ্রহণের সময়ের অভাবে তাকে কোনো জবাব প্রস্তুত করে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করার জন্য বা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে মেয়র বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পাননি। পরদিন সকাল ৯টায় ঢাকার উদ্দেশে নগর ভবনের গেস্ট হাউজ থেকে রাসিকের গাড়িতে করে তিনি রাজশাহী বিমানবন্দরে যাত্রা করেন।’

ইতোমধ্যে গঠিত তদন্ত কমিটির হাই মাস লাইট সংক্রান্ত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

উপর্যুক্ত বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, আইএমইডির পরিচালককে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করা হলেও তার পরিদর্শন প্রতিবেদন প্রস্তুতির কাজ অসম্পন্ন থাকায় তিনি বিষয়টি স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করেছেন।

এ বিষয়ে রাজশাহীর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজশাহী মহানগরীর প্রধান প্রধান জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করতে অটো লিফটিং হাই মাস পোল বসানো হয়েছে। এতে খুঁটির ওপর লাইট আছে। লাইটগুলোর নিচে কন্ট্রোল, আর্থিং, বক্স, তার আছে। মেরামতের সময় চাইলে খুঁটিগুলোকে নিচে নামিয়ে দেয়া যাবে। সিঅ্যান্ডবি মোড়, কামরুজ্জামান চত্বর, সাহেব বাজার, তালাইমারি এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সেগুলো বসানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেকটা লাইট সেটআপের জন্য একই দর আহ্বান করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর যতগুলো লাইট সেটআপ বসানো হয়েছে, সবগুলোর জন্য একই দর। যদি তালাইমারিতে ১০ লাখ খরচ হয়, তাহলে সিঅ্যান্ডবি মোড়েও একই রকম অর্থ খরচ হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আইএমইডির পরিচালক খলিল আহমেদকে দুই দিনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পিডি/এসএস/এসএইচএস/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।