বাজারজুড়ে নকল আর অবৈধ ডায়মন্ড

সাঈদ শিপন
সাঈদ শিপন সাঈদ শিপন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২১
বাজারে যে নকল ডায়মন্ড পাওয়া যায়, তা সাধারণ চোখে ক্রেতাদের পক্ষে চেনা সম্ভব নয়

অডিও শুনুন

দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে নকল ও অবৈধ ডায়মন্ড। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতারাও শিকার হচ্ছেন প্রতারণার। নকল ও অবৈধ ডায়মন্ডের দৌরাত্ম্য বন্ধে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) উদ্যোগ নিলেও তাতে ফল মিলছে না। এসব ডায়মন্ড বিক্রি হচ্ছে দেদারছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অবৈধ স্বর্ণ ও ডায়মন্ড বৈধর জন্য ২০১৯ সালের জুনে যৌথভাবে মেলা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। সে সময় ডায়মন্ড বৈধ করে একশ’র কম প্রতিষ্ঠান। অথচ বর্তমানে ঢাকা শহরেই পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

তারা বলছেন, ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি জুয়েলারির দোকানে ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান কোথায় ডায়মন্ড পাচ্ছে? কারণ স্বর্ণের মতো ব্যাগেজ রুলে আসার কোনো সুযোগ নেই ডায়মন্ডের। অন্যদিকে ডায়মন্ড বৈধ করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম। সুতরাং সরকারের উচিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলো বৈধ ও আসল ডায়মন্ড বিক্রি করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখা।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজারে একদিকে যেমন অবৈধ ডায়মন্ড রয়েছে, তেমনি রয়েছে নকল ডায়মন্ড। নকল ডায়মন্ডের মধ্যে রয়েছে- ‘মেসোনাইড’, ‘সিভিডি’, ‘ল্যাব মেইড/ম্যান মেইড’ এবং ‘এডি’ পাথর। সাধারণ চোখে দেখে ক্রেতাদের পক্ষে এসব নকল ডায়মন্ড চেনা সম্ভব নয়। অনেক প্রতিষ্ঠান এগুলো আসল বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে।

Diamond-3.jpg

অনেক প্রতিষ্ঠান আসল বলে নকল ডায়মন্ডের গহনা বিক্রি করছে

এদিকে বাজুস সূত্রে জানা গেছে, নকল ও অবৈধ ডায়মন্ডের দৌরাত্ম্য বন্ধে বাজুস একটি নীতিমালা করেছে। সেই সঙ্গে সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ৩০ জানুয়ারির মধ্যে ডায়মন্ডের গহনার ব্যবসা করা বাজুসের সদস্য সব প্রতিষ্ঠানকে মজুত ডায়মন্ডের বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে বাজার থেকে নকল ডায়মন্ড মেসোনাইড, সিভিডি, ল্যাব মেইড/ম্যান মেইড এবং ‘এডি’ অপসারণ করতে হবে।

এ বিষয়ে বাজুস সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার আগরওয়ালা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা আমাদেরও প্রশ্ন, এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে? মেলায় ঘোষণা দিয়ে ডায়মন্ড বৈধ করে ৬০ থেকে ৭০টির মতো প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এখন ঢাকা শহরের প্রায় প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি হচ্ছে। আমরা বাজুসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডায়মন্ড আমদানির প্রমাণপত্র, সেলস পারমিশন, ডিলার বা সাপ্লাইয়ারদের কাছে ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ, ফাইল বা মেলায় স্টক ডিক্লারেশনের কাগজপত্র দিয়ে বৈধতা নিশ্চিত করতে বলেছি।’

নকল ডায়মন্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই ক্রেতারা যেন প্রতারিত না হন। ক্রেতাদের সর্বোত্তম সেবা দেয়ায় আমাদের লক্ষ্য। এ জন্য মেসোনাইড, সিভিডি, ল্যাব মেইড/ম্যান মেইড এবং এডি আমরা বাজার থেকে অপসারণ করতে বলেছি। পাশাপাশি ১ থেকে ৫০ সেন্টের মধ্যে সব ডায়মন্ডের গহনার কালার ও ক্লিয়ারিটির সর্বনিম্ন মানদণ্ড হবে ‘আইজে’ এবং ‘এসআই টু’। ৫০ সেন্টের ওপর সব ডায়মন্ডের গহনার ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’

Diamond-3.jpg

ছাড় দেয়া ডায়মন্ড পণ্য বেশি দাম ধরেই বিক্রি করা হয়

আগরওয়ালা বলেন, ‘প্রতারণা বন্ধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নামের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নাম পরিহার করে স্বতন্ত্র নামে নিজ নিজ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র আপডেট করে বাজুস কার্যালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে আগের সদস্য আইডি ঠিক থাকবে এবং নাম পরিবর্তনে কোনো রকম ফি দিতে হবে না।’

এদিকে একাধিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, অবৈধ ও নকল ডায়মন্ডের একটি বড় অংশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ছাড় দিয়ে বিক্রি করেন। কম দামে ডায়মন্ডের পণ্য পাচ্ছেন, এমন ভেবে অনেক সময় ক্রেতারা প্রতারিত হন। কারণ বাজারে যেসব নকল ডায়মন্ড বিক্রি হয় তা হুবহু আসল ডায়মন্ডের মতো দেখতে। ফলে ছোট ক্রেতারা আসল নাকি নকল ডায়মন্ড কিনছেন তা বুঝতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভেনাস জুয়েলার্সের কর্ণধার ও বাজুসের সাবেক সভাপতি গঙ্গাচরণ মালাকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বাজারে নকল ডায়মন্ড বলে কিছু নেই। তবে ডায়মন্ডের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে। কম টাকায় তো ভালো মানের ডায়মন্ড পাওয়া যাবে না। মেসোনাইড, সিভিডি, এডি ডায়মন্ড না। আমরা ক্রেতাদের কাছে এগুলো তথ্য গোপন করে বিক্রি করি না।’

Diamond-3.jpg

সাধারণ চোখে ক্রেতাদের পক্ষে নকল ডায়মন্ড চেনা সম্ভব নয়

ব্যাগেজ রুলে তো দেশে ডায়মন্ড আসে না। তাহলে এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে— এমন প্রশ্ন করা হলে এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘হ্যাঁ, ব্যাগেজ রুলে ডায়মন্ড আসার সুযোগ নেই। সরকারকে যথাযথভাবে শুল্ক দিয়েই বাইরে থেকে ডায়মন্ড আনতে হবে। এখন প্রায় প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ড বিক্রি হচ্ছে। এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে তা আমি বলতে পারবো না। এসব ডায়মন্ডের বৈধতা সরকারের দেখা উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনেক সময় ক্রেতারা কম দামে ডায়মন্ডের পণ্য কিনতে চান। আমি তাদের পরামর্শ দিই, ১০ হাজার টাকা দিয়ে ডায়মন্ডের পণ্য না কিনে স্বর্ণ কেনা উচিত। ১০ হাজার টাকা দিয়ে তো ভালো ডায়মন্ড পাওয়া সম্ভব নয়। এর থেকে এডি পাথর ভালো। কারণ এডি পাথর ডায়মন্ডের মতোই ঝকঝকে। এছাড়া ছাড় দিয়ে যারা ডায়মন্ডের পণ্য বিক্রি করেন, তারা বাড়তি দাম ধরেই ছাড় দেন। সুতরাং ক্রেতারা ছাড় পাচ্ছেন— এমন ধারণা করে ডায়মন্ডের পণ্য কিনলে ঠকবেন।’

এ বিষয়ে দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘ডায়মন্ডের পণ্যে কী পরিমাণ ছাড় দেয়া যাবে, সে বিষয়ে আমরা একটা গাইডলাইন করে দিয়েছি। বিশেষ উপলক্ষে শোরুমে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ এবং অনলাইনে সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ ছাড় দেয়া যাবে। এ ছাড়ের ব্যাপ্তি হবে সর্বোচ্চ ১৫ দিন। বছরব্যাপী শোরুমে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ এবং অনলাইনে ১৭ শতাংশ ছাড় দেয়া যাবে।’

এমএএস/এমএসএইচ/এইচএ/এমএস

এখন প্রায় প্রতিটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ডায়মন্ড বিক্রি হচ্ছে। এতো ডায়মন্ড কোথা থেকে আসছে তা আমি বলতে পারবো না। এসব ডায়মন্ডের বৈধতা সরকারের দেখা উচিত

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।