নতুন গ্যাস সংযোগ আর নয়, অগ্রিম টাকাও ফেরত দেবে তিতাস

মুসা আহমেদ
মুসা আহমেদ মুসা আহমেদ
প্রকাশিত: ০৯:০০ এএম, ০৬ জানুয়ারি ২০২১

অডিও শুনুন

তিন বছর আগে ডেমরার কোনাপাড়ায় ছয়তলা একটি বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন আফজাল হোসেন। সেই নির্মাণাধীন বাড়ির জন্য তখন গ্যাস সংযোগ চেয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে আবেদন করেন তিনি। সে সময় ডিমান্ড নোটের টাকাও জমা দিয়েছিলেন আফজাল। কিন্তু এখনো গ্যাস সংযোগ পাননি। উল্টো তিতাস এলাকায় আর কোনো নতুন সংযোগ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

আফজাল জানান, দুই বছর আগে বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সংযোগ না থাকায় ফ্ল্যাট ভাড়া দিতে পারছেন না। কবে গ্যাস দেয়া হবে, তাও স্পষ্ট করে বলছে না তিতাস কর্তৃপক্ষ। অথচ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ওই বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ব্যাংকের সুদের টাকা দিতে না পারলে তারা বাড়িই নিয়ে যাবে।

তিতাস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৯ সালের ২১ মে এক আদেশে আবাসিক, সিএনজি ও বাণিজ্যিক স্থাপনায় নতুন গ্যাস সংযোগ না দিতে নির্দেশনা জারি করে সরকার। ওই সময়ের আগে যারা ডিমান্ড নোটের (অগ্রিম) টাকা জমা দিয়েছেন, সম্প্রতি তাদের টাকা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগ। এখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

যদিও টাকা জমা দিয়ে কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ভবিষ্যতে হয়তো সরকার আবার গ্যাস সংযোগ দিলে তারা আগ্রাধিকার পাবেন। এখন সে সম্ভাবনাটাও শেষ হয়ে গেছে।

জানা যায়, গ্যাস-সংকটের কারণে ২০০৯ সালের ২১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগ বন্ধের নির্দেশ দেয় জ্বালানি বিভাগ। ২০১১ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে নতুন গ্যাস সংযোগের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে যাচাই-বাছাই করে নতুন সংযোগ দেয়া হতো। ২০১৩ সালের শেষ দিকে কিছু সংযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর জ্বালানি বিভাগ থেকে মৌখিকভাবে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দিতে মানা করা হয়।

গত বছরের ২১ মে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিতাসের আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং সিএনজি সংযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয় জ্বালানি বিভাগ।

সবশেষ গত ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তিতাসের প্রধান কার্যালয়ে নতুন গ্যাস সংযোগের বিষয়ে জানতে গিয়েছিলেন মোহাম্মদপুর বছিলার বাসিন্দা কামরান পারভেজ। আলাপকালে তিনি জাগো নিউজকে জানান, বছিলায় তার একটি চারতলা নতুন বাড়িতে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিতাসের সংযোগ না পাওয়ায় সবাইকে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। সংসারে খরচও বেশি হচ্ছে। তাই গ্যাস সংযোগের জন্য চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু তিনি কোনোভাবেই সংযোগ পাচ্ছেন না।

রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান তিতাস বৃহত্তর ঢাকা, ময়মনসিংহ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গ্যাস মজুদ কম থাকায় নতুন সংযোগ দেয়া না হলেও এই এলাকায় প্রায় পৌনে তিন লাখ গ্রাহক অবৈধভাবে সংযোগ নিয়েছেন। এখন এসব অবৈধ লাইন বিচ্ছিন্ন, রাজধানীতে গ্যাস লাইন সংস্কার, গ্যাস অপচয় রোধে মিটার স্থাপনে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী ইকবাল নুরুল্লাহর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তার সাড়া মেলেনি।

তবে তিতাসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকেই আবাসিকে গ্যাসের সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতে গ্যাসের সরবরাহ বা মজুত বাড়লে নতুন সংযোগ দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে জ্বালানি বিভাগ।’

এমএমএ/এমএইচআর/এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।