‘হাতের আন্দাজে’ চলছে ঢাকার গণপরিবহন
অডিও শুনুন
গতি সামলাতে না পেরে বনানী-মিরপুর ফ্লাইওভারে উবারচালক মোহাম্মদ আল আমিনকে ধাক্কা দেয় উত্তরাগামী একটি বাস। রাস্তায় ছিটকে পড়ে আহত হন তিনি। ভেঙে যায় আল আমিনের মোটরসাইকেল।
শুধু এই একটি দুর্ঘটনাই নয়, রাজধানীতে বেপরোয়া গতির বাসগুলো হরহামেশাই ঘটাচ্ছে এমন দুর্ঘটনা। গতি দেখার জন্য বাসে সচল স্পিডো মিটার (গতিপরিমাপক) থাকার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসেই এই মিটার অকেজো। আবার কোনো কোনো বাসে স্পিডো মিটার-ই নেই।
রাজধানীর মিরপুর, মতিঝিল, বাড্ডাসহ একাধিক রুটের অর্ধশতাধিক গণপরিবহন ঘুরে দেখেছে জাগো নিউজ। ৫০টি বাসের মধ্যে মাত্র দুটি বাসে সচল স্পিডো মিটার পাওয়া গেছে এসময়। বিষয়টিকে উদ্বেগের বলছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। যদিও গণপরিবহন চালকদের দাবি, ইঞ্জিন আর চাকা ঠিক থাকলেই আর কোনো সমস্যা হয় না তাদের।
গণপরিবহন ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ অকেজো স্পিডো মিটারে জমেছে ধুলো। আবার কোনো বাসে ছিল না এই যন্ত্র। তবে চালকদের এসব নিয়ে নেই কোনো মাথা ব্যথা।
আহত উবারচালক আল আমিন বলেন, ‘গত মাসের ৮ তারিখে সন্ধ্যায় ফ্লাইভারে ওঠার আগে উত্তরাগামী একটা বাস পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। আমি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে যাই, আর আমার মোটরসাইকেল রাস্তায় সজোরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে আমার হাত-পায়ের চামড়া ছিলে গেছে। ভাগ্য গুণে হয়তো বেঁচে গেছি।’
তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারে ওঠার আগে গাড়ি সাধারণত স্লো করে। ফ্লাইওভারে আস্তে চালানোর নিয়ম। কিন্তু বাসটি কোনো কিছুই মানেনি, টেনে গেছে। আল্লাহর রহমতে আমার বড় কিছু না হলেও মোটরসাইকেলের ব্রেক, হ্যান্ডেল ভেঙে গেছে। এখন বন্ধুর মোটরসাইকেল নিয়ে খ্যাপ (ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালানো) দিচ্ছি।’
ঢাকার গণপরিবহনে অধিকাংশ অকেজো স্পিডো মিটারে জমেছে ধুলো, ফলে চালকরা গাড়ি চালান হাতের আন্দাজে
একটি যানবাহন কত গতিতে চলছে তা দেখায় স্পিডো মিটার। এটি সাধারণত চালকের আসনের সামনে বসানো থাকে। যন্ত্রটি দেখে চালক বুঝতে পারেন তার যানটি কত গতিতে চলছে। গতি দেখে রাস্তাভেদে চালক গতি বাড়াতে কিংবা কমাতে পারেন।
এ বিষয়ে গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘অরগানাইজড গণপরিবহনের জন্য এই স্পিডো মিটার অত্যন্ত জরুরি। এটা না থাকলে চালক তার যানটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না। চালক জানতে পারবেন না কত গতিতে তার যানটি চলছে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্পিডো মিটার যানবাহনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গাড়িটি কতো গতিতে চলছে সেটা চালকের জানা দরকার। একটা রাস্তায় তো স্পিড লিমিট থাকে, সেটা ক্রস করছে কি-না কিংবা কোন রাস্তায় কত গতিতে গাড়ি চালানো যায় এইগুলো জানার জন্য, বোঝার জন্য স্পিডো মিটার খুব দরকার।’
স্পিডো মিটারের ধার ধারেন না চালক, হাতের আন্দাজই সব
এদিকে স্পিডো মিটার না থাকার পরও বাস চালাতে অসুবিধা হয় না বলে দাবি করেছেন চালকরা। মিরপুর-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচলকারী খাজাবাবা পরিবহনের চালক মো. সজল জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্পিড মিটারের দরকার হয় না। ১০-১২ বছর ধইরা গাড়ি চালাই। একটা আন্দাজ আছে। কখন স্লো করতে হইবো বুঝতে পারি। কেবল ইঞ্জিন, চাক্কা ঠিক থাকলেই হইলো।’
একই রুটের শিকড় পরিবহনের চালক হাসিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মেইন হইলো চাক্কা আর ইঞ্জিন। সেইগুলো ঠিক থাকলেই গাড়ি নামাতে পারি। কয়টা গাড়িতে স্পিড ঠিক আছে দেখেন। সমস্যা হইলে তো আর গাড়ি চলতো না।’
স্পিডো মিটার না থাকার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে জানিয়ে কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘আমাদের ম্যাক্সিমাম গাড়ির স্পিডো মিটার নষ্ট থাকে, এজন্য চালক কতো গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে সে বুঝতে পারে না। ফলে অনেক সময় স্পিড কন্ট্রোল করতে না পেরে চালক অ্যাক্সিডেন্ট করে।’
ঢাকার গণপরিবহনের অধিকাংশ অকেজো স্পিডো মিটারে জমেছে ধুলো
বুয়েটের এই সহকারী অধ্যাপক আরও বলেন, ‘এই যন্ত্রটা না থাকলে গতিসীমার লঙ্ঘন হতে পারে। যেখানে গতিসীমা ৪০ সেখানে হয়তো চালক চলছে ৫০ কিংবা ৭০ কিলোমিটারে চালায়। এটা চালক বুঝতে পারে না। স্পিডো মিটার না থাকলে চালক গাড়িটির গতি বুঝতে পারে না। ওভার স্পিড হলেও বুঝতে পারে না কিংবা বিপদজ্জনক স্পিডে চলছে কি-না, সেটাও বুঝতে পারে না।’
ফিটনেসহীন গণপরিবহন বাড়াচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনা
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, নভেম্বর মাসে মোট ৫১৭টি দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত ও ৬৭৮ জন আহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় ৫৪৪টি যানবাহন আক্রান্ত হয় যার মধ্যে বাসের সংখ্যা ৮২। ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য বাস দায়ী। ট্রাফিক আইন না মানা, সড়ক নিরাপত্তায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন যান সড়কে দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ড. শামছুল হক বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে। এগুলো যাত্রীসেবার মান কমানো, ঝুঁকির মাত্রা বাড়ানোর পাশাপাশি যাত্রীকে গণপরিবহন বিমুখ করছে। মানুষ এখন ব্যক্তিগত গণপরিবহনের দিকে ঝুঁকছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহরে যদি ছোট গাড়ির আধিক্য বেড়ে যায়, তাহলে টেকসই শহর গঠনের যে স্বপ্ন সরকার দেখছে সেটা সম্ভব হবে না। এখানে অভিভাবক হিসেবে যেসব রেগুলেটরি অরগানাইজেশনের দেখার দরকার ছিল, তারা কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। গণপরিবহনকে মেরুদণ্ড হিসেবে না করতে পারায় এটা কিন্তু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।’
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত মাসের তুলনায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে। সড়কে গতি ওঠানোর নেশার পাশাপাশি বাসগুলোর বেপরোয়া গতির কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটছে। অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বর মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নয় জন বেশি মারা গেছেন। ১২৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪১ জন মারা গেছেন। এছাড়া অক্টোবরে ৯৪ জন পথচারী মারা গেলেও নভেম্বরে মারা গেছেন ১২৬ জন।’
‘স্পিডো মিটার’র ধার ধারেন না, হাতের আন্দাজেই ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালান অনেক চালক
কাজী সাইফুন নেওয়াজ বলেন, ‘স্পিডো মিটার যে থাকে না তা নয় শুধু, গাড়ির ইন্ডিকেটর, লুকিং গ্লাস, হেডলাইটও থাকে না। এসবের কারণেও সড়কে দুর্ঘটনা হয়। গাড়ির ফিটনেস না থাকলে চাকা ফেটে ব্রেক ফেল করে, চেসিস কিংবা স্প্রিং ভেঙে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’
নিরাপদ সড়ক চাই’র (নিসচা) মহাসচিব সৈয়দ এহসান উল হক কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘স্পিডো মিটার না থাকায় চালক গতি বুঝতে পারে না। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। লক্কড়-ঝক্কড় বাসগুলো রাজধানী থেকে অপসারণ জরুরি। এগুলো সরলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলে এই সমস্যা দূর হবে। তবে এখানে আইনের যথাযথ প্রয়োগ লাগবে।’
বাস মেরামতে অনীহা মালিকদের
বিহঙ্গ পরিবহনের এক চালক বলেন, ‘গাড়ির মালিক তো আর একজন না। কারও হয়তো ১০টা গাড়ি রোডে চলে। আবার কারও একটা গাড়ি আছে। যার গাড়ি সেই যদি যত্ন না নেয় তাহলে আমরা কী করবো?’
তিনি আরও বলেন, ‘বিহঙ্গে বিগত পাঁচ বছরে নতুন কোনো গাড়ি আসে নাই। মিরপুর, মতিঝিল রুটেও নতুন কোনো গাড়ি আসছে কি-না আমার জানা নেই।’
মালিকরা বলছেন, বাস ব্যবসায় আগের মতো মুনাফা নেই। তার ওপর চাঁদাবাজি ও মামলায় অনেক টাকা নষ্ট হয়। এজন্য মেরামত কিংবা নতুন গাড়ি কেনার সামর্থ তাদের হয়ে ওঠে না।
আল মক্কা পরিবহনের অন্যতম মালিক আলম বলেন, ‘আমার পাঁচটা বাস। সবগুলার আমি যত্ন নিই। নিজে মেকানিক রেখে কাজ করাই। এতে লাভ কম হয় বাসগুলো ভালো থাকে। অনেক সময় হেলপার কিংবা চালক গ্লাস ভেঙে ফেলে। এগুলো ভাঙেই। রোডে চললে একটা দুইটা ক্ষতি হবেই।’
মানভেদে একটি স্পিডো মিটারের দাম আড়াই থেকে পাচঁ হাজার টাকা হলেও সেগুলো মালিকরা কিনে দিতে চায় না বলে অভিযোগ চালকদের। ইতিহাস পরিবহনের চালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গাড়ি নিয়ে বের হইলে কোনো ড্যামেজ হইলে আমরাই নিজের পকেট থেকে দেই। গ্লাস ভাঙা, লুকিং গ্লাস ভাঙলে নিজেদের পকেট থেকে দিতে হয়। চাকা কিংবা ইঞ্জিনের কোনো সমস্যা হলে মালিক ঠিক করে দেয়।’
চালকরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরতে পুলিশ মামলা দেয় না; মামলা দেয় রাস্তার মধ্য থেকে কিংবা সিগন্যালে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠালে
খাজা বাবা পরিবহনের চালক সজল বলেন, ‘স্পিডো মিটার কিংবা ইন্ডিকেটর ঠিক আছে কি নাই মালিকের এইসবে খেয়াল নাই। প্রতিদিন রাইতে একবার আর দিনে একবার গাড়ি চেক হয়। কোনো সমস্যা হইলে তখন ঠিক কইরা দেয়।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিগগিরই নতুন গাড়ি রাস্তায় নামছে। পুরোনো গাড়িগুলো আর থাকবে না। তখন আর এই সমস্যাটা থাকবে না। পাঁচ বছরের পুরোনো গাড়িগুলো বাদে বাকি গাড়ি রাস্তা থেকে বিদায় নেবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী ২২টি কোম্পানির আওতায় চলে আসবে রাজধানীর সব গণপরিবহন। তখন নতুন গাড়ি এসে পুরোনো ফিটনেসহীন বাসগুলোকে রিপ্লেস করবে।’
‘লেগুনা-ছোট বাসে দূরত্ব কম তাই এসব লাগে না’
মিরপুরের ৬০ ফিট থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত প্রায় ৪০টি লেগুনা চলাচল করে। এর মধ্যে বেশিরভাগই চলাচলের অনুপযোগী। তবুও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে গাড়িগুলো রাস্তায় নামছে বলে দাবি চালক-মালিকদের।
লেগুনাচালক আমান বলেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাড়িগুলোর অবস্থা এক্কেবারে খারাপ। সব মিলিয়ে ৮-১০টা গাড়ি আছে নতুন। বাকিগুলো চলার মতো না। তবে আমাদের দূরত্ব কম। এক টানেই চলে যাই। স্পিড মিটারের দরকার হয় না।’
তিনি বলেন, ‘সারাদিনে মালিক আর কয় টাকা পায়? গাড়ির জমা নেয় ৬০০ টাকা। এর মধ্যে আবার গাড়ির কাজ করানো লাগে। এই যন্ত্রগুলো ছয় মাসও ঠিক থাকে না। নতুন আনার পর মাত্র ছয় মাস ভালো থাকে তারপরে নষ্ট হয়ে যায়। আবার এমনও হইছে, গাড়ি ১৫ দিন চালানোর আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। নষ্ট হলে কেউ আর নতুন করে এটা লাগায় না। বহুত গাড়িতে এই যন্ত্রটা নাই।’
ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী অনেক বাসে লুকিং গ্লাস পর্যন্ত নেই
এই লেগুনাচালক আরও বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ির জন্য পুলিশ মামলা দেয় না। অপরাধে দিয়ে দেয়। যেখানে সেখানে পার্কিং করলে কিংবা নির্ধারিত স্থান ছাড়া যাত্রী ওঠালে নামানোর সময় পুলিশের চোখে পড়লে মামলা খাই।’
মিরপুর ১ থেকে মিরপুর ১৪ নম্বরে চলাচলকারী ফাস্ট টেন গাড়ির চালক হাসান বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর হইলো এই লাইনে গাড়ি চালাই। তবে এখন পযর্ন্ত কোনো দুর্ঘটনা দেখি নাই। আমাদের রুট ছোট, এক টানেই চলে যাই। কোনো গাড়িতে এসব নাই।’
অভিযানের মধ্যেই চলছে লক্কড়-ঝক্কড় গাড়ি
রাজধানীতে ট্রাফিক পুলিশ ও বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) মোবাইল কোর্ট ফিটনেসবিহীন যানবাহন ধরতে প্রতিনিয়ত কাজ করলেও নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন যান।
বিআরটিএর ফেব্রুয়ারি মাসের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের পর থেকে রাজধানীর সড়কে দুই লাখ ৯২ হাজার ৫৯৫টি ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলছে। যদিও ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরতে পুলিশ মামলা দেয় না বলে বাসচালকরা বলছেন। ফিটনেস না থাকার কারণে পুলিশ মামলা দেয় না জানিয়ে চালক মো. সজল বলেন, ‘মামলা দেয় রাস্তার মধ্য থেকে কিংবা সিগন্যালে গাড়ি থামিয়ে লোক ওঠালে। গতকালকে ছয় হাজার টাকার মামলা দিছে রাস্তা থেকে লোক ওঠানোর কারণে।’
বিআরটিএর উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরতে আমাদের মোবাইল কোর্ট প্রতিনিয়ত কাজ করছে। ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষ থেকেও মোবাইল কোর্ট হচ্ছে। যেসব বাসের স্পিডো মিটার নেই, রোড পরমিট নেই কিংবা যেগুলো রং চটা, সেগুলো ধরতে আমাদের মোবাইল কোর্ট রেগুলার হচ্ছে।’
লোকবল সংকটের কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ফিটনেসবিহীন গাড়ি চিহ্নিত করা যাচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমাদের মাত্র ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট। এতো বড় শহরে ১০ জন ম্যাজিস্ট্রেট কতটুকু কী করতে পারেন? লোকবল যদি বাড়ে তাহলে এই সমস্যা সুরাহায় অগ্রগতি হবে।’
পল্লবী ট্রাফিক জোনের পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) বিমল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে আমরা সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিদিনই প্রায় চার থেকে পাঁচটা মামলা দিচ্ছি। ফিটনেসবিহীন গাড়ি ধরতে আমরা তৎপর আছি।’
ড. শামছুল হক বলেন, ‘দুর্ঘটনা এড়াতে যানবাহনে যেসব সেফটি ম্যাটেরিয়াল, দরকার সেগুলো আমাদের গণপরিবহনে নেই। আমাদের এখানে সব কিছু ডিসঅরগানাইজড (অগোছালো)। মালিকদের কাছে থেকে কোনো সুপারভিশন নাই। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিষয়গুলো যারা দেখবেন তাদের সক্ষমতাও নাই। গণপরিবহন এখন এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে একজন ভদ্রলোক এখন এটাতে চড়তে দুই-একবার ভাবেন। বাধ্য হয়েই তারা গণপরিবহনে চড়ছেন। পুওর লেভেল অব সার্ভিসে মানুষজন এখন মোটরসাইকেলে শিফট হচ্ছে। না হলে সিএনজি কিংবা রাইড শেয়ারিংয়ে চলে যাচ্ছে। না হলে কার লোনে কিনে ফেলছে।’
এ অবস্থার উন্নয়নে সমন্বিত পদক্ষেপের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মেট্রো কিংবা বুলেট ট্রেন ডোর টু ডোর সার্ভিস দেবে না। গণপরিবহনকে ঢেলে সাজানোর কোনো বিকল্প নেই। এ অবস্থার উত্তরণে সব পক্ষের সঙ্গে বসে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এসএম/এমআরআর/এইচএ/এমএস