হাইকোর্টের নির্দেশনাও মানা হয় না
অডিও শুনুন
যৌন হয়রানি রোধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও গঠন হয়নি জেলাভিত্তিক মনিটরিং কমিটি। এছাড়া দেশের বহু সরকারি ও বেসরকারি অফিসে নারী নির্যাতন সেল গঠন করা হয়নি। ধর্ষণের মামলা, তদন্ত ও বিচার বিলম্বের জবাবদিহিতা নেই, হাইকোর্টের সাত নির্দেশনা কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ।
তদন্তে ৯০ দিন, বিচারে ১৮০ দিনের সময়সীমাও মানা হচ্ছে না। তাই উচ্চ আদালতে ধর্ষণের মতো আলোচিত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে আলাদা বেঞ্চ গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন আইনজীবীরা। ধর্ষণের ঘটনা রোধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে আইন সংশোধনকে সরকারের একটি ভালো উদ্যোগ বলেও মনে করছেন তারা। যদিও জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে।
উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি, মামলার বাদী বিশেষ করে পুলিশ যারা সাক্ষী দিতে আসেন, তারা সময় মতো না আসলে প্রমোশন স্থগিত করা, ধর্ষণ মামলায় হাইকোর্টে আলাদা বেঞ্চ গঠনের আহ্বান জানান আইনজীবীরা।
সিরাজগঞ্জের রূপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির রায় হয়েছে ২০১৮ সালে। ডেথ রেফারেন্স হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসলেও দুই বছর ধরে তা ফাইলবন্দি রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। মামলাটি এখন শুনানির অপেক্ষায়।
বনানীর দ্য রেইনট্রি হোটেলে আলোচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাটি সাড়ে তিন বছরেরও অধিক সময় পার হয়েছে। এখনও শেষ হয়নি বিচার। কিন্তু আইন অনুযায়ী বিচার হলে মামলার তদন্ত ও বিচারিক আদালতের কার্যক্রম শেষ করতে সর্বোচ্চ নয় থেকে ১০ মাস সময় লাগার কথা ছিল। কিন্তু এখনও বিচার চলছে।
এমন অনেক ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মামলার বিচার শেষ হতে বিচারিক আদালতে বছরের পর বছর কেটে যাচ্ছে। ধর্ষণ মামলার বিচারে গতি আনতে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের প্রতি সাত দফা নির্দেশনা দেন। কিন্তু সেই নির্দেশনা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিচারিক আদালতের রায় পাওয়ার পর বিচারপ্রার্থীকে যেতে হচ্ছে উচ্চ আদালতে। সেখানে অপেক্ষার প্রহর আরও অনেক বেশি। উচ্চ আদালতে এ ধরনের বিশেষ মামলার বিচারে কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। ফলে, বছর পেরিয়ে যুগ শেষ হলেও বিচারপ্রার্থীদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। যদিও সম্প্রতি এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে উচ্চ আদালত। ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়াই পারিপার্শ্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণ মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সাজা বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। রায়টি হাইকোর্টের একটি যুগান্তকারী রায় বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবীরা।
শিল্পপতি লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন তাসনিম রহমানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হতে দেড় যুগ সময় লেগেছে। এমন অনেক মামলার বিচার পেতে বিচারপ্রার্থীদের এক যুগ, এমনকি দেড় যুগও অপেক্ষা করতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে গড়ে প্রতিদিন চারটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। অথচ দায়ের করা মামলার মাত্র তিন ভাগ অপরাধী শাস্তি পাচ্ছেন। বিচার বিলম্বের কারণে অনেক আসামি পার পেয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে ফৌজদারি বিচারের ব্যবস্থা এখন অনেকটাই অকার্যকর। ফলে ধর্ষণের মতো বর্বরোচিত ঘটনা বেড়েই চলেছে।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বলা আছে, ‘আসামি হাতেনাতে ধরা পড়লে তদন্ত করতে প্রথমে ১৫ দিন ও পরে ৩০ দিন এবং সর্বোচ্চ ৪৫ দিনে তদন্ত শেষ করতে হবে। আসামি হাতেনাতে ধরা না পড়লে ট্রাইব্যুনাল থেকে তদন্তের আদেশপ্রাপ্তির তারিখ থেকে প্রথমে ৬০ দিন এবং পরবর্তীকালে ৩০ দিনে অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৯০ দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। অন্যথায় তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা তদন্তের আদেশ প্রদানকারী ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করতে হবে।’
তদন্ত শেষ না হওয়ার কারণ বিশ্লেষণে দেখা যায়, তদন্ত কর্মকর্তার কারণেই তদন্তে বিলম্ব হচ্ছে। বিলম্ব হলে তা ওই তদন্ত কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এই অদক্ষতা ও অসদাচরণ তার বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে লিপিবদ্ধ করা হবে এবং উপযুক্ত ক্ষেত্রে চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
আবার ধর্ষণের মামলা বিচারের ক্ষেত্রেও আইনে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা উল্লেখ রয়েছে। আইনে বলা হয়েছে, ‘মামলা বিচারের জন্য হাতে পাওয়ার পর থেকে ট্রাইব্যুনালকে ১৮০ দিনের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। আবার বিচার শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা চালিয়ে যেতে হবে। এই সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি না হলে ট্রাইব্যুনালকে এর কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কাছে দাখিল করতে হবে; যার একটি অনুলিপি সরকারের কাছে পাঠাতে হবে।’
‘অনুরূপ ক্ষেত্রে পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকেও এর কারণ লিপিবদ্ধ করে একটি প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে দাখিল করতে হবে; যার একটি অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টে পাঠাতে হবে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর যথাযথ কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিচারের ক্ষেত্রে আইনের এই বিধানও প্রতিপালন হচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ে বিচার শেষ না হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক, প্রসিকিউটর বা পুলিশ, কোনো পক্ষই তার কারণ উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত কোনো প্রতিবেদন দাখিল করছেন না। ফলে কেউই কোনো জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন না।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘জবাবদিহিতার বিষয়টি আইনের একটি রিকোয়ারমেন্ট, এটি করতেই হয়। তবে, ব্যাপারটি হচ্ছে, আমি যদি বলি হ্যাঁ করে বা না করে, তা হলে জেনারেলাইজড (সাধারণীকরণ) হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো করে, আবার করে কিনা সেটি দেখতে হবে।’
‘ধর্ষণ মামলার বিচার আইনে নির্ধারিত সময়ে শেষ কেন হচ্ছে না, এটি জেনারেলাইজড কোনো বিষয় নয়। অনেক সময় দেখা যায় বাদী মামলা চালাতে চান না। তবে এখন মনে হয় বিচারে গতি এসেছে। নুসরাত হত্যার বিচারের পর সবাই সজাগ হয়েছেন।’
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনির জাগো নিউজকে বলেন, নিম্ন আদালতে ধর্ষণ মামলার বিচারের ক্ষেত্রে কার্যকর হচ্ছে না হাইকোর্টের দেয়া দিকনির্দেশনা। উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলার বাদী বিশেষ করে পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য যারা সাক্ষী, তারা সময় মতো না আসায় মামলা নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর আইন সংশোধন করে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ের পর উচ্চ আদালতে আসা মামলাগুলো নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে আলাদা বেঞ্চ গঠন করা যায় কি-না, প্রধান বিচারপতির কাছে তার একটি প্রস্তাব উপস্থাপনের চিন্তা রয়েছে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে।’
সঠিকভাবে পালন হয় না হাইকোর্টের নির্দেশনা
নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ধর্ষণ মামলার বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্ট ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তিতে সাত দফা নির্দেশনা দেন। নির্দেশনাগুলো হলো-
ক. আইনে নির্ধারিত সময়সীমা অর্থাৎ বিচারের জন্য মামলা পাওয়ার দিন থেকে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলার বিচার শেষ করতে হবে।
খ. মামলার শুনানি শুরু হলে তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি কর্মদিবসে একটানা মামলা পরিচালনা করতে হবে।
গ. মামলার ধার্য তারিখে সাক্ষীর উপস্থিতি ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য প্রতি জেলায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন), সিভিল সার্জনের একজন প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটরের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করতে হবে। পাবলিক প্রসিকিউটর কমিটির সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকবেন এবং কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতি মাসে সুপ্রিম কোর্ট, স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাবেন। যেসব জেলায় একাধিক ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সেসব জেলায় সব ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটররা মনিটরিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। তাদের মধ্যে যিনি জ্যেষ্ঠ তিনি সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন।
ঘ. ধার্য তারিখে রাষ্ট্রপক্ষ সঙ্গতকারণ ছাড়া সাক্ষীকে আদালতে উপস্থিত করতে ব্যর্থ হলে মনিটরিং কমিটিকে জবাবদিহি করতে হবে।
ঙ. মনিটরিং কমিটি সাক্ষীদের ওপর দ্রুত সময়ে যাতে সমন জারি করা যায় সে বিষয়টিও তদারকি করবেন।
চ. ধার্য তারিখে সমন পাওয়ার পর অফিশিয়াল সাক্ষী যেমন- ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডাক্তার বা অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সন্তোষজনক কারণ ছাড়া সাক্ষ্য প্রদানে উপস্থিত না হলে ট্রাইব্যুনাল ওই সাক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ এবং প্রয়োজনে বেতন বন্ধের আদেশ প্রদান বিবেচনা করবেন। এবং
ছ. আদালতের অভিমত এই যে, অবিলম্বে সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
হাইকোর্টের এই সাত দফা নির্দেশনা শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ রয়েছে বলে আদালত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে ধর্ষণ মামলার বিচারে গতি ফেরেনি।
মামলার নিষ্পত্তির হারও কম
রূপাকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চারজনের ফাঁসির রায় হয়েছে ২০১৮ সালে। ডেথ রেফারেন্স হিসেবে মামলাটি হাইকোর্টে আসলেও দুই বছর ধরে তা ফাইলবন্দি রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজী মাদরাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামির ডেথ রেফারেন্স ও মামলার যাবতীয় নথি হাইকোর্টে আসে। মামলাটি এখন শুনানির অপেক্ষায়। জানা গেছে, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বেঞ্চ গঠন করে দেয়ার পরই শুনানি শুরু হবে।
২০১৭ সালে বনানীর ২৭ নম্বর রোডের রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের মামলায় তদন্ত শেষে ওই বছরের ৭ জুন পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার (আইও) তদন্ত কর্মকর্তা। একই বছরের ১৩ জুলাই আদালত অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আসামিদের বিচার শুরু করেন। আলোচিত এই ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নির্ধারিত সময়ে তদন্ত শেষ করতে না পেরে বারবার সময় নেন। পরে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল- ২ এ মামলাটির বিচার শুরু হয়। এখন মামলাটি ট্রাইব্যুনাল- ২ থেকে ৭ নম্বর ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয় বিচারের জন্য। ইতোমধ্যে দুবার বিচারক পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে চতুর্থ বিচারক আলোচিত এই মামলায় বিচার পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে শুরু হয় করোনার প্রভাব। এখন মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ধর্ষণ মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত না হওয়ার ফলে আসামিরা জেল থেকে বেরিয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ন্যায়বিচার পাওয়া যায় না। এসব মামলার দ্রুত তদন্ত করে তাড়াতাড়ি বিচার করতে হবে। সাক্ষী দ্রুত না আনলে বিচারে বিলম্ব হয়। দেখা যায় বিচারক পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন বিচারে বিলম্ব হয়। বিচার করে সাজা হয়ে গেলে তারা আর বের হতে পারেন না।
সিনিয়র এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘যদি হাইকোর্ট নির্দেশনা দিয়ে থাকে, তা মানা না হয়, তা হলে সেটা হবে আদালত অবমাননা। কেউ যদি বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন, নিশ্চয়ই হাইকোর্ট প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’
‘হাইকোর্টে মামলার জটের ফলে ধর্ষণ মামলায় আলাদা বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে। একই সঙ্গে, সরকার আইন সংশোধন করে যেটা মৃত্যুদণ্ড করেছেন, সেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এর ফলে অনেকাংশে ধর্ষণের প্রবণতা কমবে’— আশা করেন এই আইনজীবী।
মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, ‘কেন ধর্ষণের ঘটনায় বিচার হয় না, কেন বিচারে দীর্ঘসূত্রতা— এটি সবার জানা। বারবার এ বিষয়ে কথা হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয় না। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনায় দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই এই ধরনের অপরাধ কমানোর একমাত্র পথ। আইনে আছে ১৮০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। তারপরও উচ্চ আদালতকে নির্দেশনা দিতে হয়েছে। এরপরও দ্রুত ধর্ষণের বিচারে তেমন নজির স্থাপিত হয়নি, এটি দুর্ভাগ্যজনক।’
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘বিচার সঠিকভাবে না হওয়ায় ধর্ষণের বিষয়গুলো বেশি ঘটছে। আইনে আছে, বিচার শেষ করতে হবে ১৮০ দিনের মধ্যে। বিশেষ ক্ষেত্রে কিছুটা সময় নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মামলা শেষ হতে ১০ থেকে ২০ বছরও লেগে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনাগুলোর শাস্তি হতে হবে দৃশ্যমান। এজন্য ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিচারে নিয়োজিত তিনটি সংস্থাকে (বিচারক, পুলিশ ও আইনজীবী) কঠোর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। এই তিন সংস্থার সমন্বিতভাবে যার যে কাজ তা করতে হবে। স্বল্পসময়ে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনটি সংস্থার সমন্বয়ে দ্রুত একটি ভালো ফল বা ভালো রায় আসতে হবে। এছাড়া পর্নোগ্রাফি রোধ আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।’
এফএইচ/এমএআর/পিআর