শীতে করোনার সংক্রমণ কমতে পারে, বাড়তে পারে মৃত্যু
শীতে মানব শরীরের উপরিভাগে রক্তের সঞ্চালন অনেকটা কমে যায়। এর অর্থ হচ্ছে, শরীরের চামড়ার নিচে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষের সংখ্যাও কমে যাওয়া। শীতে আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় চামড়ার নিচে ক্ষত হয়। এ ধরনের ক্ষত নাকেও হয়। করোনাভাইরাস নাক দিয়ে প্রবেশ করায় নাকের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। ক্ষত হওয়া নাক দিয়ে ভাইরাস খুব সহজেই প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া শীতকালে শ্বাসতন্ত্র ও চামড়ার রোগ বেশি হয়। এসব কারণে শীতে মানুষ শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল থাকে। যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে শীতে বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে করোনায় মৃত্যুর হার কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লকডাউন যথাযথভাবে কার্যকর না হওয়ায় প্রচুর মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এসেছে। শীত আসতে আসতে আরও প্রচুর মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আসবে। তাই শীতে সংক্রমণ কমতে পারে। ইউরোপ-আমেরিকায় শীতে শঙ্কা থাকলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ততটা নেই বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অণুজীববিজ্ঞানী এবং গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত এন্টিজেন্ট ও এন্টিবডি কিটের উদ্ভাবক দলের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।
বাংলাদেশে কাজের অনুমতি না থাকায় সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে চলে যান ড. বিজন। সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলে তিনি ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে আছেন। গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সেই হোটেল থেকে জাগো নিউজের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে যুক্ত হন। এ সময় শীতে করোনার সংক্রমণ, টিকা আসতে দেরি হলে কী করণীয়, সুয়ারেজে করোনার উপস্থিতি কতটা বিপজ্জনকসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য সেটি তুলে ধরা হলো-
জাগো নিউজ : আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। বাংলাদেশেও পরিস্থিতির অবনতির শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও করোনা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশে শীত মৌসুমে করোনা কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে?
বিজন কুমার শীল : সময়োপযোগী একটি প্রশ্ন। সারা পৃথিবীতে শীত মৌসুম ও করোনা পুনর্প্রাদুর্ভাব হওয়ার যে একটা শঙ্কা বিরাজ করছে, সেটা টেলিভিশন খুললেই দেখা যায়। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে ইতোমধ্যে করোনার সংক্রমণ অনেকটা বেড়েছে, যা মাঝখানে একটু কম ছিল। এটা নিয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ এখন আতঙ্কিত। বাংলাদেশেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, শীতকালে একটা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। আমি যে জিনিসটা আলাপ করতে চাই সেটি হলো, শীতকালে কেন ভাইরাসের জটিলতা বেশি হতে পারে, এর কয়েকটা পয়েন্ট বলি।
উদ্ভাবিত করোনা টেস্ট কিট হাতে ড. বিজন কুমার শীল
প্রথমত. শীতকালে সাধারণত তাপমাত্রা কমে যায়, সঙ্গে সঙ্গে বাতাসের আর্দ্রতা বা হিউমিলিটি কমে যায়। এই দুটি ফ্যাক্টর ভাইরাসের জন্য খুবই অনুকূলে। ভাইরাস দীর্ঘ সময় এই আবহাওয়ায় টিকতে পারে, বেঁচে থাকে। যেটা গরম আবহাওয়া বা হিউমিলিটি যদি বেশি থাকে, তাহলে ভাইরাস খুব বেশি সময় বাতাসে থাকতে পারে না। মারা যায়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক কী? আপনারা জানেন, শীত যখন পড়ে তখন কিন্তু মানব শরীরের উপরিভাগে রক্ত সঞ্চালন অনেকটা কমে যায়। রক্ত সঞ্চালন কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, শরীরের চামড়ার নিচে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষের সংখ্যাও কমে যাওয়া।
দ্বিতীয়ত, যখন আর্দ্রতা কমে যায়, তখন চামড়ার নিচে ক্ষত হয়। যেটা নাকেও হয়। যেহেতু ভাইরাসটা নাক দিয়ে প্রবেশ করে, সুতরাং নাকের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যাওয়া এবং ক্ষত হওয়ার জন্য ওইদিক দিয়ে ভাইরাস খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে। ফলে মানুষ শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়।
তৃতীয়ত, শীতের সময় মানুষ একত্রিত থাকে, ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। ভাইরাস কিন্তু ঘরের ভেতরেই চলাফেরা করে। এজন্য পরিবারের একজন সদস্য আক্রান্ত হলে তিনি অতি সহজেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাসটা ছড়িয়ে দিতে পারেন। কম তাপমাত্রায় দীর্ঘসময় বাঁচতে পারে, রোগীদের শরীরে প্রবেশের সময় পায় বেশি এবং বদ্ধ ঘরের মধ্যে সে ঘোরাফেরা করে— এই তিনটি কারণে শীতকালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।
এছাড়া শীতকালে শ্বাসতন্ত্র ও চামড়ার রোগ বেশি হয়। করোনাভাইরাস যেহেতু শ্বাসতন্ত্রকে বেশি আক্রান্ত করে, সুতরাং করোনার প্রাদুর্ভাব ও তার জটিলতা শীতকালে বেশি হবে বলে আমার মনে হচ্ছে।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থা কী? ইউরোপে মাঝখানে করোনার সংক্রমণ অনেকটা কমে গিয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে, সেই সময় তাদের দেশে লকডাউন বেশ ভালোভাবে কাজ করে এবং সংক্রমণ কমতে থাকে। এখানে একটা সমস্যা ছিল যে, শীতপ্রধান দেশে গ্রীষ্মকালে মানুষ খুব ভ্রমণ করে। ইউরোপ, আমেরিকার রাজধানী শহরগুলোতে তারা বেশি ভ্রমণ করে। যেসব মানুষের মধ্যে নন-ক্লিনিক্যাল ইনফেকশন ছিল, তারাও ভ্রমণ করেছে। ফলে হঠাৎ করে এখন করোনার সংক্রমণ বেড়েছে। ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই সংক্রমণ বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে, মানুষের ব্যাপক চলাচল। লকডাউন উঠে যাওয়ায় মানুষের চলাচল বেড়েছে, নন-ক্লিনিক্যাল ইনফেকশন ছড়িয়েছে, মাস্ক ব্যবহার কমেছে, স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা অনেকটা শিথিল হয়েছে, ফলে সংক্রমণ নতুন করে ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশে হয়েছে যেটা, লকডাউনটা ঠিকভাবে কাজ করেনি। বাংলাদেশের মানুষ মাঝখানে একটু ভয়ে ছিল। তারা দেখল, করোনার কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপকভাবে মানুষের যে মৃত্যু হয়েছে, সেটা বাংলাদেশে হয়নি। ফলে অনেকে লকডাউনকে নজরে আনেননি এবং তারা ব্যাপকভাবে চলাফেরা করেছেন, যা ঢাকা শহর দেখলে বোঝা যায়। ব্যাপক চলাচলের কারণে ভাইরাসটা হরাইজন্টাল স্প্রেড (আড়াআড়িভাবে ছড়িয়েছে) করেছে। সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, আমাদের দেশে কিন্তু ক্লিনিক্যালি ইনফেক্টেড রোগীর সংখ্যা অনেকটা কম; নগণ্য। সংকটাপন্নরা ক্লিনিকে যাচ্ছেন। বাকি মানুষগুলো কিন্তু যাচ্ছেন না। না যাওয়ার সংখ্যা অনেক। এই অনেক সংখ্যার লোকদের একটা ভালো ভূমিকা আছে আমাদের জন্য।
আমাদের দেশে সাধারণত ডিসেম্বরের আগে শীত খুব একটা হয় না, নভেম্বরে খুব একটা শীত পড়ে না। অবশ্য ইদানিং কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। মাঝখানে দুই মাস সময়। এই সময়ে আমাদের দেশে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর মধ্যে হার্ড ইমিউনিটি বা এন্টিবডি ডেভেলপ করবে। যে এন্টিবডিকে ক্রস করে ভাইরাস খুব একটা স্প্রেড করতে পারবে না। বাতাসে, পানিতে ভাইরাসের পরিমাণ কমে আসবে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাবে। কিন্তু যাদের মধ্যে ইনফেকশন (করোনায় আক্রান্ত) হবে, তাদের শারীরিক অবস্থা বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে খারাপ হতে পারে। এটা আমার একটা অ্যাসেসমেন্ট (মূল্যায়ন)। এটা আমি প্রেডিক্ট (পূর্বানুমান) করতে পারছি।
জাগো নিউজ : কেন এমন পূর্বানুমান?
বিজন কুমার শীল : ইউরোপে করোনা সংক্রমণ ফেব্রুয়ারিতে শুরুর পর জুনের দিকে কমে গেছে। সেপ্টেম্বর থেকে আবার বাড়া শুরু করেছে। মাঝখানে একটা গ্যাপ ছিল। আমাদের এখানে কিন্তু সেই গ্যাপটা ছিল না। আমাদের দেশে সংক্রমণ চলছে। এতে কিন্তু অধিকাংশ মানুষের মধ্যে এন্টিবডি এসেছে। যাদের মধ্যে এন্টিবডি এসেছে, তারাই কিন্তু আমাদের শীতকালে রক্ষা করবে। কারণ ভাইরাস থাকতে হলে তো একটা হোস্ট লাগে, সেই হোস্ট সে পাবে না। যত হোস্ট কমবে, ভাইরাসের পরিমাণ কমবে, সংক্রমণ কমবে। তবে যারা এখনও আক্রান্ত হননি, তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া দরকার এখনই।
মাস্ক ব্যবহারটা বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে আইন করতে হবে। মাস্কই এখন একমাত্র উপায়, যার মাধ্যমে শীতকালে মানুষ রক্ষা পাবে।
শীতকালে যারা আক্রান্ত হবেন, তাদের অবস্থাটা একটু খারাপ হতে পারে। তাদের শারীরিক পরিস্থিতি গ্রীষ্মকালের চেয়ে একটু খারাপ হবে। কারণ শরীরের ইমিউনিটি অনেকটা কমে আসবে। যার জন্য হয়তো পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে। কিন্তু মোট আক্রান্ত ধীরে ধীরে আরও কমে আসবে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে বাড়বে, কিন্তু বাংলাদেশে কমবে।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশে সংক্রমণ কমেছে, কিন্তু মৃত্যু তো কমেনি…
বিজন কুমার শীল : যাদের কোমরবিডিটি, হাইপার টেনশন, ডায়াবেটিস, কিডনি ও অ্যাজমা সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে করোনা আরেকটু বেশি খারাপ হবে। এ ধরনের সমস্যা যাদের আছে, তাদের প্রথম থেকেই সাবধান হতে হবে।
আমি যেটা বারবার বলে আসছি এবং এখনও বলব, সেটা হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। কারণ যে ভাইরাসের এখনও ভ্যাকসিন নেই, কার্যকর চিকিৎসা নেই, সেখানে প্লাজমাই একমাত্র ফ্যাক্টর। প্লাজমার মধ্যে নিউক্লাইন এন্টিবডি থাকতে হবে পর্যাপ্ত পরিমাণে এবং প্রাথমিক অবস্থায় যদি দেয়া হয়, তাহলে কিন্তু সে রোগীকে বাঁচানো সহজ। কিন্তু শেষ পর্যায়ে গিয়ে প্লাজমা দেয়া হলে কাজ করবে না। ইউরোপ-আমেরিকায় ৪০ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমানো গেছে শুধু প্লাজমা দিয়ে। বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ মানুষ করোনা থেকে সেরে উঠেছেন, তারও অধিক মানুষের মধ্যে এন্টিবডি এসেছে। প্লাজমার বিষয়ে দেরি করা উচিত হবে না।
জাগো নিউজ : তাহলে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে কি-না?
বিজন কুমার শীল : আমার মনে হয়, মৃত্যুর হার হয়তো একটু বাড়তে পারে। তবে এখন থেকেই ভাবতে হবে। এটা হলো বিজ্ঞান, বিজ্ঞানকে স্বীকার করতে হবে। বৈজ্ঞানিক আলোচনা করতে হবে, বিজ্ঞানের মাধ্যমে এগোতে হবে। এখন থেকে যদি সাবধান হওয়া যায়, তাহলে কিন্তু মৃত্যু হার নাও বাড়তে পারে। কমতেও পারে। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে এগোতে হবে। নিউ-ক্লায়েজিং এন্টিবডি থাকতে হবে। গত ছয় মাসে আমাদের একটা শিক্ষা হয়ে গেছে। অনেক কিছু আমরা জানতে পেরেছি। সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। তাই শীত এলেও মৃত্যুর হার কমানো যাবে। তবে এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। সিদ্ধান্ত এখন থেকেই নিতে হবে এবং প্রটোকলগুলো সেভাবে ঠিক করে রাখতে হবে। যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া হলে মৃত্যু বাড়তে পারে।
জাগো নিউজ : টিকা আসতে দেরি হলে জনসাধারণের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়তে পারে?
বিজন কুমার শীল : টিকার ব্যাপারে প্রথম থেকেই আমি একটা কথা বলে আসছি যে, মানুষের জন্য টিকা অত সহজ হবে না। টিকা অনেক সময় নেয়। বিশেষত, নিরাপত্তাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কার্যকারিতা ৫০ শতাংশ হলে সমস্যা নেই, কিন্তু নিরাপত্তা হতে হবে শতভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) যে সভাপতি, স্বাস্থ্যখাতের যিনি পরিচালক, তাদের একটা গোলটেবিল বৈঠক শুনছিলাম সিএনএনে। এফডিএ’র পরিচালক বললেন, আর যাই হোক, নিরাপত্তাকে আমি কোনোভাবেই ছাড় দেব না। আমাদের বিজ্ঞানী আছেন, তারা বহুবার এটাকে চেক করছেন। চেক করে যদি তারা মনে করেন এটা নিরাপদ, তখন আমি এটার অনুমোদন দেব। সুতরাং টিকার নিরাপত্তা দেখতে একটু সময় লাগবে। টিকার প্রতিক্রিয়া ১০ দিন, ২০ দিন নয়, এর প্রতিক্রিয়া হয়তোবা ছয় মাস পরে দেখা যেতে পারে। জরুরি কারণে হয়তোবা তারা দুই বা তিন মাস দেখছে। এজন্য একটু দেরি হবে।
হয়তো ২০২১ সালের মধ্যে টিকা এসে যাবে। তাহলে শীতকালে আমরা তো পাচ্ছি না। পেলে খুব ভালো, না পেলে ব্যবস্থা নিতে হবে। শীতকালে রেসপিরেটরি রোগ বেশি হয়। তার মধ্যে সাধারণ ঠান্ডা বা ফ্লু কিন্তু বেশি হয়। ফ্লুয়ের কিন্তু খুব ভালো টিকা আছে। ৫০ বছর ধরে সারা দুনিয়ায় এটা চলছে। এই মুহূর্তে যেটা করা উচিত, যাদের মধ্যে কোমরবিডিটি আছে, যারা সঙ্কটাপন্ন, তাদের কিন্তু বাধ্যতামূলকভাবে ফ্লুর টিকা দিয়ে দেয়া উচিত, যাতে ফ্লু ও করোনা একসঙ্গে আক্রমণ না করে। এটা হলে কিন্তু মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হবে।
প্রথমে ফ্লুর টিকা দিলে ফ্লু থেকে বাঁচলেন। আর করোনা থেকে বাঁচার জন্য স্বাস্থ্যবিধিই বড় জিনিস। মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। যদিও দূরত্ব বজায় রাখা জটিল এই মুহূর্তে। মাস্ক যদি ব্যবহার করা হয় এবং ভালো মাস্ক, দুই টাকার মাস্ক নয়। আমি সবসময় বলে আসছি, সুতির মাস্ক, তিন স্তরের। এই মাস্ক কিন্তু ৯০ শতাংশের বেশি ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। এই মাস্ক ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ ভাইরাস প্রবেশ করবে, তা রোগ তৈরি করতে পারবে না। শীতকালের আগে বা শীতের সময় যেন কেউ কোনোভাবেই মাস্ক ছাড়া না থাকে বাইরে। বাড়িতে ঢুকে যেন গার্গল করে। যাতে ভাইরাস ঢুকলেও সুবিধা না করতে পারে। নাকের ভেতর ময়লা জমলে পরিষ্কারের ব্যবস্থা আছে। নিয়মিত নাকের ভেতরটা পরিষ্কার করা যেতে পারে।
শীতকালে বিয়ে বেশি হয়, সে বিষয়েও নজর রাখতে হবে। বড় জমায়েত যেন না হয়। এসব করলে টিকা ছাড়াই শীতকাল পাড়ি দেয়া সম্ভব হবে। স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থাকে কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যাবে না।
আরেকটা কথা বলে রাখি, আমাদের যে ভ্যাকিনেশন রুটটা ইন্ট্রা মাস্কুলার। আর আমাদের সংক্রমণ হয় ইন্ট্রা নেজাল বা ওরাল। সাধারণত টিকায় এন্টিবডি রক্তে তৈরি হয়। যেখানে টিকা আছে, মেমোরি সেলটা তার আশপাশে থাকে। কিন্তু ন্যাচারাল ইনফেক্টেড ব্যক্তির ক্ষেত্রে মেমোরি সেলটা রেসপিরেটোরির আশপাশে থাকে। ওরা খুব সহজে ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে। ভাইরাস ঢুকবে। টিকা দেয়ার পরও ভাইরাস শারীরে ঢুকবে, বেড়েও উঠবে। কিন্তু যখন রক্তে ঢুকবে তখনই সে আর এগোতে পারবে না। এটা হয়তো আক্রান্ত ব্যক্তি জানতে পারবে না। সুতরাং রেসপিরেটরি রুটে যদি টিকা দেয়া যেত, যারা বড় বড় বিজ্ঞানী তারা ভাবছেন এটা নিয়ে। চায়না বোধহয় ভাবছে এটা নিয়ে। যাতে ন্যাচারাল রুটে প্রটেকশন থাকল, আবার রক্তেও প্রটেকশন থাকল। দুটোকে প্রটেকশন করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশে ফ্লুর টিকা আছে কি-না?
বিজন কুমার শীল : বাংলাদেশে ফ্লুর টিকা আছে। হয়তো সচরাচরর মানুষজন নেয় না। তবে এখনই সরকারকে ভাবতে হবে, যখন দরকার হবে তখনই যেন পর্যাপ্ত টিকা সরবরাহ করা যায়।
জাগো নিউজ : মলের মাঝে করোনার উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। এটা কতটা ক্ষতিকারক?
বিজন কুমার শীল : করোনাভাইরাস মানে আমরা মনে করি, রেসপিরেটরি রুটে ইনফেকশন করে। এটা আরেকটা সাইটে ইনফেকশন করে, সেটা হলো গ্যাস্ট্রোইন্ট্রোশনাল রুট বা অন্তনালী। এখানে ভাইরাস তৈরি করার মতো যথেষ্ট সেল আছে। অধিকাংশ করোনায় আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে পেটের সমস্যা হয়। যাদের খুব সামান্য হয়, তারা পেটের সমস্যা খুব একটা বুঝতে পারেন না। সামান্য একটু পেটে ব্যথা হতে পারে বা হালকা পাতলা পায়খানা হয় বা নাও হতে পারে।
ফিকাসোবোলাতে যথেষ্ট পরিমাণে ভাইরাস থাকে। যেমনটা থাকে থু থুতে। ফেব্রুয়ারির ২১-২২ তারিখে আমার ফেসবুকে আপলোড করেছিলাম যে, ফিকাসোবোলায় বা ইউরিনে (প্রস্রাবে) ভাইরাস থাকছে, এর মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। এটা সম্প্রতি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সহকর্মী ড. ফিরোজ আহমেদ ও তার গ্রুপ শনাক্ত করেছেন।
এখন প্রশ্ন হলো, ভাইরাসগুলো যে সুয়ারেজে (মলে) আছে, এর কী প্রভাব পড়তে পারে? এর কয়েকটি প্রভাব হতে পারে। যদি এটা খাবার পানিতে মিশে যায়, তাহলে ভাইরাসটি ওই পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এখানে একটা সুবিধা আছে, ভাইরাসটা অত্যন্ত ডেলুউড (দুর্বল) হয়ে যাচ্ছে। এত ডেলুউড হবে যে, এটা হয়তো ইনফেকশন করার পর্যায়ে না থাকলেও গ্যাস্ট্রো ইন্ট্রোশনাল ট্র্যাকে আক্রমণ করতে পারে। যাদের একটু দুর্বল ইমিউনিটি আছে, তাদের ক্ষতি করতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ক্ষতি করবে না। কারণ ভাইরাসটি অত্যন্ত ডেলুউড হয়ে যাচ্ছে। যদি কোনো সুয়ারেজে ভাইরাস পাওয়া যায়, সেটা নির্দেশ করে ওই এলাকায় আক্রান্ত ব্যক্তি আছে।
এখন খাওয়ার পানিতে পাওয়া যাচ্ছে কি-না, সেটাও পরীক্ষা করা উচিত। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এ নিয়ে ইতোমধ্যে একটা প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তারা কাজ শুরু করেছে। হয়তো শিগগিরই প্রতিবেদন পাওয়া যাবে যে, সুয়ারেজ থেকে ভাইরাসটা ব্যবহারযোগ্য পানিতে প্রবেশ করতে পেরেছে কি-না। এটা থেকে বোঝা যাবে জনস্বাস্থ্যের ওপর কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারছে।
আমার বিশ্বাস, ভাইরাসটা যত ডেলিউড হবে, ততই এর আক্রান্ত করার সক্ষমতা কমে যাবে। অর্থাৎ এটা খুব বেশি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে না। তবুও জানার দরকার আছে, আমাদের খাওয়ার পানি কতটুকু ভাইরাসমুক্ত।
জাগো নিউজ : বাংলাদেশে করোনা যখন আক্রমণ করে, এর মূল আঘাতটা এসেছিল ঢাকায়। এখানকার প্রায় সবাই সাপ্লাই পানি ব্যবহার করেন। যদি পানির মাধ্যমে করোনা ছড়াতো তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো। কিন্তু অতটা বিধ্বংসী হয়নি। এ বিষয়ে কী বলবেন?
বিজন কুমার শীল : ভাইরাসটা কোটি কোটি গ্যালন পানিতে ছড়িয়ে যাবে। সুতরাং তখন তার যে আক্রান্ত করার সক্ষমতা, সেটা ধীরে ধীরে কমে যাবে। শুধু এটা ন্যাচারাল ভ্যাকসিনের মতো কাজ করবে। শরীরে ভাইরাস ঢুকলে এটা রেসপিরেটরি রুটে যাবে না, গ্যাস্ট্রো রুটেই যাবে। কারও হয়তো পেটের সমস্যা হতে পারে। সেখান থেকে ন্যাচারাল ইমিউনিটি (প্রাকৃতিকভাবে করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা) চলে আসবে মানুষের শরীরে। এটার একটা ভালো দিকও এটা। খারাপ দিক হলো, কারও ইমিউনিটি দুর্বল হলে তাদের ক্ষতি করতে পারে। সর্বোপরি এটা খুব একটা দুশ্চিন্তার কারণ নয়।
জাগো নিউজ : আপনি তো সম্প্রতি বাংলাদেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন। কেন গেলেন?
বিজন কুমার শীল : আমি যে চলে এসেছি, আসার প্রয়োজন ছিল। আমার আসার কথা ছিল গত ২৯ জুলাই। কারণ, আমার স্ত্রী একটা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গেছিল। তখনই আমি বাংলাদেশে অবস্থিত সিঙ্গাপুর হাইকমিশনে লিখেছিলাম যে, আমি সিঙ্গাপুরে আসতে চাই। ওই সময় তারা ব্যবস্থা নিয়েছিল, তবে বিশেষ একটা কারণে তখন আমার আসা হয়নি।
তারপর যখন দেখলাম, আমার ভিসায় লেখা কাজ করতে পারব না, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমি কাজ থেকে বিরত হলাম। দেখলাম যে, আমি সাত মাস বাড়ির বাইরে আছি। করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে আমি বুঝতে পারিনি যে, এতদিন কেটে গেছে। তখন ভাবলাম, এই সুযোগে বাড়ি থেকে ঘুরে আসি। আসলে আমার এখনও এক বছরের ট্যুরিস্ট ভিসা আছে। যত সময় খুশি তত সময় থাকতে পারব, কিন্তু কাজ করতে পারব না।
আমি ইচ্ছা করেই চলে আসলাম। এই গ্যাপে রেস্ট হলো আর কী। আর বাসার সবাই একটু চিন্তিত। অনেক কথাবার্তা আসছে। আমি কিন্তু রাগ করে আসিনি বা বাধ্য হয়েও চলে আসিনি। ইচ্ছা করেই এসেছি। এর মধ্যে যদি আমার ওয়ার্ক পারমিট হয়ে যায়, তাহলে আমি আবার বাংলাদেশে যাওয়ার চিন্তা করব।
আর আসার সময় আমি মানুষের যে ভালোবাসা পেয়েছি, আমি যখন বিমানে উঠলাম, দেখলাম আমাকে যারা চেনেন তারা আমাকে যথেষ্ট সমাদর করেছেন। তাদের কেউ কেউ বললেন, যদি করোনা হয় তাহলে আমরা কী কী খেতে পারি? আমার সঙ্গে থাকা একটা ভিটামিন সি ও জিঙ্ক ট্যাবলেট একজনকে দিয়ে আসলাম।
এখানে একটা কথা বলে রাখি, আমার পরামর্শে গণস্বাস্থ্য ভিটামিন সি ও জিঙ্ক তৈরি করছে। কিছু তৈরি করেছে। আমরা সেগুলো চেক করেছি। করোনার সময় আমরা খেয়েছিও। এটির অনুমোদনের জন্য আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে সরকারের কাছে। এই ভিটামিন সি ও জিঙ্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না। কিন্তু গণস্বাস্থ্যে আমরা খেয়ে দেখেছি। দীর্ঘ তিন থেকে চার মাস খেয়েছি। আমার সহকর্মীরা সবাই খেয়েছেন। খুব ভালো উপকারও পেয়েছেন।
যদিও আমি সাতটা মাস গবেষণাগারে বন্দি ছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আমাকে খুবই ভালোবেসেছেন। আমি চেষ্টা করব জন্মভূমির জন্য কাজ করার।
জাগো নিউজ : বিমানবন্দরে আপনি পাঁচ ঘণ্টা আগে গিয়েছিলেন। এত আগে যাওয়ার কারণ কী ছিল?
বিজন কুমার শীল : ওনারা বলেছিলেন আগে যেতে। সিকিউরিটি আছে, পিসিআর টেস্ট দেখে… এজন্যই হয়তো তারা বলেছিলেন পাঁচ ঘণ্টা আগে আসতে। যদিও সিঙ্গাপুর সরকার করোনা টেস্টের কোনো মূল্য দেয়নি। তারা বলছেন, যেই আসুক আমরা তাকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখি। সেই হিসাবেই আমি কোয়ারেন্টাইনে আছি। হয়তো আগামী দু-তিন দিন পর আমার টেস্ট হবে। এটা নেগেটিভ হলে আমি বাড়িতে যেতে পারব। আমার বিশ্বাস, আমি নেগেটিভ হবো। কারণ আমার শরীরে যথেষ্ট এন্টিবডি আছে। সেটাকে ভিত্তি করে বলতে পারি, আরও ২-৪ বছরের মধ্যে আমার করোনা হবে না।
জাগো নিউজ : আপনার স্ত্রীর অসুস্থতার কথা বললেন। তার এখন কী অবস্থা?
বিজন কুমার শীল : কোয়ারেন্টাইনে থাকায় কারও সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। এটাই নিয়ম। এটা অবশ্যই মানতে হবে। টেলিফোনে আমার মেয়ে ও স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু জিনিসপত্রের দরকার ছিল, আমার স্ত্রী এসে দিয়ে গেছে। সে ভালো আছে।
জাগো নিউজ : এখন তো কিছু সময় হাতে পেলেন। সময়টা কীভাবে কাজে লাগাবেন?
বিজন কুমার শীল : অনেক কাজ পড়ে আছে। যে কাজগুলো করেছি গত সাত মাসে, সেগুলোর পাবলিকেশনের সুযোগ পাইনি। গবেষণাগারে ঢুকলে আর কোনো কাজই করা যেত না। এখন যেহেতু গবেষণাগারের বাইরে আছি, এখন ওইগুলো লেখালেখি করছি। শিগগিরই এগুলো প্রকাশ করব। পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে চলে যাবে এগুলো। কিছু কিছু ফাইন্ডিংস আছে, যেগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেগুলো পৃথিবীকে শিক্ষা দিতে পারবে– এ ধরনের ফাইন্ডিংস আমাদের আছে। সেগুলো লিখছি। আমি বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার আগেই আশা করি সব প্রকাশ হয়ে যাবে। বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর মানুষ দেখতে পাবেন, গত সাত মাসে আমরা কী করেছি।
আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, এমনও সময় গেছে আমরা রাত ৪টা পর্যন্ত কাজ করেছি। ওই সময় আমরা অসম্ভব শক্তি পেয়েছিলাম। মানুষের কাছে আমাদের কিট যাবে– এই অনুপ্রেরণায় আমরা দিনের পর দিন, রাত-দিন কাজ করেছি। আমাদের টিমের সবাই দিন-রাত কাজ করেছে। বলতে পারেন, অভূতপূর্ব একটা গ্রুপ ছিল আমাদের।
আপনারা জানেন, আমরা ভাইরাসের স্যাম্পল নিয়ে কাজ করেছি। কেউ ভয় পাইনি। আমরা স্যাম্পল ইন-অ্যাক্টিভেট করেছি, কিন্তু ইন-অ্যাক্টিভ করার আগ পর্যন্ত আমাকে হ্যান্ডেল করতে হয়েছে।
আমার একটা ঘটনা আছে, যা অনেকে জানেন না। সেটা হচ্ছে, এই ভাইরাস কিন্তু আমার শরীরে ঢুকে পড়েছিল একবার। আমার আঙুলে ঢুকে গেছিল। সবাই ভয় পেয়েছিল। এত বড় ঝুঁকিও আমরা হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলাম শুধু মানুষের কাছে আমাদের কিট যাবে, সারাপৃথিবীর মানুষ দেখবে, এমন প্রত্যাশায়।
জাগো নিউজ : হাতের করোনা ইনফেকশন থেকে কীভাবে মুক্ত হলেন?
বিজন কুমার শীল : আমরা যখন স্যাম্পল পাই, তখন সেটাকে আমরা ইন-অ্যাক্টিভেট করি। একটা প্রক্রিয়া আছে ইন-অ্যাক্টিভ করার। ইন-অ্যাক্টিভেশন করার প্রক্রিয়ার মধ্যে হঠাৎ করে আমার একটা ভাইরাস বৃদ্ধাঙুলে ঢুকে পড়ে। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন, তিনি অনেকটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। আমি বললাম, ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমি জানি কীভাবে এটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২০০৩ সালের অভিজ্ঞতা আছে বিধায় আমি ভয় পাইনি। আসলে কিছু হয়নি। যেখানে ভাইরাস ঢুকেছিল, সেখানে শক্ত হয়েছিল। ভাইরাসটা বের হয়ে যেতে পারেনি। এটা আন-ন্যাচারাল রুট। ভাইরাস সাধারণত রেসপিরেটরি আর গ্যাস্ট্রো রুটে গ্রো করে। যে সেলের মধ্যে ভাইরাসটা ঢুকেছিল, সেই সেলে এন্টিবডিও ছিল। আমি টেস্ট করেছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট করেছিলাম। দেখেছি যে, ঝুঁকি নেই। কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু আমার ভেতরে এন্টিবডি ডেভেলপ করেছে।
জাগো নিউজ : আমরা আলোচনার শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি। সবার উদ্দেশ্যে যদি আপনার কিছু বলার থাকে…
বিজন কুমার শীল : কাজের শুরু থেকে সবার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছিলাম। এই অকুণ্ঠ সমর্থন না পেলে আমরা এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। আমার যে টিম ছিল, সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। পাশাপাশি দেশবাসীর যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেটা আমি অনুভব করেছিলাম বিমানবন্দরে এসে, সেটার মূল্য দেয়ার ক্ষমতা আমার কোনো দিনও হবে না। এ জন্মে পারব না। পরের জন্মে পারব কি-না, তাও জানি না। কিন্তু সবার সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি, এটা আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিটটা সবার হাতে গেলে আমি খুশি হবো। অন্ততপক্ষে আমাদের কষ্টের ফলটা যেন দেশের মানুষ পায়। আমাদের কিট পৃথিবীর যেকোনো কিটের সমকক্ষ।
বাংলাদেশে তৈরি করেছি বলে এই কিট খারাপ, এমন কথা নয়। আমাদের সঙ্গে যে বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন, তারা বিশ্বমানের। আমাদের রি-এজেন্টগুলোও বিশ্বমানের। আমরা আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেছি, কোনো ঘাটতি রাখিনি। এ ধরনের টেস্ট কিট বিশ্বে আমাদেরটাই প্রথম। আমরা আশা করছি, এর মূল্যায়ন আমরা পাব। আর এন্টিবডি টেস্টের মূল্য আগামী ১০ বছর পর্যন্ত থাকবে।
পিডি/এমএআর/এমএস