চিকিৎসক আসেন না খুলনার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে


প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ০৩ নভেম্বর ২০১৫

খুলনার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন লাখ লাখ হতদরিদ্র মানুষ। আর অধিকাংশ ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে চিকিৎসক ও ওষুধের প্রবল সংকট। অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এসব ক্লিনিক। যার ফলে মানুষের পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে গরু-ছাগল। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ক্লিনিক চত্বরে অবাধে চরে বেড়াচ্ছে গরু-ছাগল।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা, জবাবদিহিতার অভাব ও মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত ক্লিনিকের মধ্যে ১৪টি জমির অভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র জানা যায়, জেলায় মোট ২০৯টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আর প্রস্তাবিত ক্লিনিকের সংখ্যা ২৩৩টি। এর মধ্যে দাকোপ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৯টি, রূপসার পাঁচ ইউনিয়নে ২০টি, তেরখাদার ছয় ইউনিয়নে ১৩টি, দিঘলিয়ার ছয় ইউনিয়নে ১৪টি, ফুলতলার চার ইউনিয়নে ৯টি, ডুমুরিয়ার ১৪ ইউনিয়নে ৪০টি, পাইকগাছার ১০ ইউনিয়নে ৩৬টি, কয়রা উপজেলার সাত ইউনিয়নে ২৪টি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এছাড়া কয়রার পাঁচটি, পাইকগাছার দুইটি, দিঘলিয়ার দুইটি, দাকোপ উপজেলার পাঁচটি ক্লিনিক জায়গা নির্ধারণের অভাবে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তৃণমূল পর্যায়ের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর উদ্যোগ নেয়। আর সে ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত ২০৯টি ক্লিনিক স্থাপিত হয়েছে। তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসব ক্লিনিক স্থাপন করা হয়েছে তার ৫০ ভাগও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কার্যকর করার জন্য মাঠপর্যায়ে স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর কাজের সমন্বয়ের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা হচ্ছে না। সেবাদানকারীদের অনুপস্থিতির কারণে অধিকাংশ ক্লিনিক বিধিমত কাজ করছে না। আর জবাবদিহিতার কোনো বালাই নেই।

কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে জানতে চাইলে পাহাড় সমান অভিযোগ করেন কয়রা উপজেলার ৪নং কয়রা গ্রামবাসী।

তারা জাগো নিউজকে জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত ক্লিনিকে কেউ আসে না। ডাক্তার তো মাঝে মাঝে কোনো সপ্তাহে আসেই না। এমনকি তাদের কাছ থেকে অধিকহারে অর্থও আদায় করা হয়।

বটিয়াঘাটার জলমা ইউনিয়নের স্কুল শিক্ষক আহসান কবীর জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সহকারীর সঙ্গে ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের সমন্বয় খুবই দুর্বল। ক্লিনিকগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের ভূমিকা চোখে পড়ে না।

এদিকে, গত বছর স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ডাক্তারদের সপ্তাহে একদিন এসব ক্লিনিকে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে সব ক্লিনিকে ডাক্তাররা যাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

এ ব্যাপারে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. মো. ইয়াছিন আলী সরদার জাগো নিউজকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা চলছে। অধিকাংশ ক্লিনিকে ডাক্তাররা যাচ্ছেন। ডাক্তার যাতে যান সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এখনও ১৪টি স্থানে কমিউনিটি ক্লিনিক নেই। জমির অভাবে ক্লিনিক তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ওই সব ওয়ার্ডে ঠিকমত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যাচ্ছে না। তবে বিষয়টি আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

সিভিল সার্জন আরো বলেন, কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। দরিদ্রতা, অসচেতনতা, নিরক্ষরতা ও নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা এর প্রধান কারণ। জেলায় স্বাস্থ্য ঝুঁকির শীর্ষে এ তিন উপজেলায় জমি না পাওয়ায় ২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ হয়নি। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে গর্ভবতী মা ও শিশু স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসে জেলার প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীদের ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস (এনএনসি) প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

এছাড়া যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক হওয়ায় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে। জেলার প্রতিটি উপজেলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন করে স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

তবে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমে জনবল সঙ্কটের বিষয় স্বীকার করে তিনি বলেন, যে জনবল রয়েছে তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে একটু সমস্যা হয়। কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সাধারণ মানুষ দরিদ্রতা, অসচেতনতা, নিরক্ষরতা ও নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা থেকে কিছুটা বঞ্চিত হচ্ছেন।

আলমগীর হান্নান/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।