শঙ্কা এবার বই মেলা নিয়ে!
বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বই মেলা। ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবছরই অমর একুশে বই মেলার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে লেখক, প্রকাশক ও ব্লগারদের ওপর একর পর এক হামলার ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য বই মেলায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদিও বই মেলা আমাদের প্রাণের উৎসব, শত ভয় ভীতি উপেক্ষা করে এতে মানুষ অংশগ্রহণ করে। কিন্তু এবারের বই মেলা পুরোপুরি ভয় মুক্ত হবে না, আসন্ন বই মেলা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
এ বছর বই মেলা চলাকালীন সময়ে মুক্তমনা লেখক অভিজিত রায়ের খুনের পর থেকে ভয় ও শঙ্কা তৈরি হয়। তারপর বেশ কয়েকজন ব্লগার খুন হলেন, যারা বই লিখেন। এরপর আবার হামলা শুরু হয়েছে প্রকাশকদের ওপর। তাই বই মেলাতে প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন বই মেলা সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রকাশক লেখকদের মধ্যে কিছুটা শঙ্কা ভীতি তৈরি হয়েছে। এটা দূর করতে হবে। তা না হলে বই মেলাতে কিছুটা প্রভাবতো পড়তেই পারে।
তবে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জোর দিয়ে বলেন, আমরা শিগগিরই প্রকাশকদের সঙ্গে বসব। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহনীর সঙ্গেও বসব। প্রয়োজনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। যাতে সবাই ভয় ভীতি থেকে মুক্ত থাকতে পারেন। বই মেলায় আসতে পারেন। লিখতে পারেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, বই মেলার নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের অগ্রিম পরিকল্পনা রয়েছে।
সূত্রগুলো বলছে, অগ্রিম তালিকা প্রকাশ করে ধারাবাহিকভাবে ঘরে বা কার্যালয়ে ঢুকে কুপিয়ে খুনের ঘটনায় আতঙ্ক বোধ করছেন দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী জনগোষ্ঠী। সঙ্গে তাদের বইয়ের প্রকাশকরাও। পরিবার ও স্বজনদের চাপে পড়ে ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়েছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ স্থায়ীভাবে বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অবশ্য বিদেশে গিয়েও হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সবশেষ সোমবার রাতে বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন রম্য লেখক আহসান কবীর। আনসার আল ইসলাম তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে টুইট বার্তা ছেড়েছে।
প্রায় এক বছর ধরেই একের পর এক হুমকি ও পুলিশের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় বিদেশ যাওয়ার দিকে ঝুঁকছেন তারা। বিশেষত পাড়ি দিচ্ছেন ইউরোপের দেশ জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়ে ও সুইডেনে। এছাড়া অনেকে কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। তবে সেই নিরাপত্তা কাজে আসছে না। ভয়ে অনেক লেখক প্রকাশক বাসা থেকে বর্তমানে বের হচ্ছেন না।
বাংলা প্রকাশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হুমায়ূন কবীর ঢালী টেলিফোনে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের মধ্যেতো শঙ্কা আছে। শঙ্কা দূর করে প্রকাশক ও প্রকাশনার সঙ্গে জড়িতদের নিরাপত্তা দেয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বই মেলায় প্রভাব খারাপ পড়ুক তেমন কোন চিত্র আমরা দেখতে চাই না। বই মেলা আমাদের সবার। আমরা বই প্রকাশ করতে চাই। আমরা শিগগিরই বসব। বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবো কি করা যায়।
প্রকাশনার সঙ্গে যুক্তরা বলছেন, স্বাভাবিকভাবেই অসাম্প্রদায়িক ইস্যুতে লেখা বই প্রকাশ করার আগে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করবে। একইভাবে লেখকরাও লিখতে ভয় পাবেন। যার ফলে বই মেলায় এধরনের বইয়ের একটা অদৃশ্য সংকট তৈরি হবে।
এসএ/এআরএস/পিআর