আকাশপথে ব্যস্ততা বেড়েছে
অডিও শুনুন
মহামারি করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে দীর্ঘ তিন মাস বন্ধ ছিল আকাশপথের যোগাযোগ। জুন থেকে কোনো মতে জোড়াতালি শিডিউলে শুরু হয় উড়োজাহাজ চলাচল। পাঁচ মাসের মাথায় আগস্টের শেষ দিকে সরব হয় আকাশপথ।
এখন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে পুরোদমে শুরু হয়েছে ফ্লাইট চলাচল। প্রায় সারাদিনই উড়োজাহাজের ওঠা-নামায় ব্যস্ত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলে শতাধিক ফ্লাইট প্রতিদিন বিমানবন্দরে ওঠানামা করছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। আগের চেয়ে বেড়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যাও।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ফলে সংকোচিত হয়ে পড়ে আকাশপথ। গত ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় সংস্থাটি।
বর্তমানে দেশি-বিদেশি প্রায় ১০টির মতো এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয়ার পর যেসব এয়ারলাইন্স সপ্তাহে দুটি বা তিনটি ফ্লাইট নিয়ে চলাচল শুরু করেছিল তাদের প্রত্যেকেই গত এক মাসে ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করেছে।
রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে দোহা, দুবাই, লন্ডন ও কুয়ালালামপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে তারা।
বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স প্রতিদিন কক্সবাজারে তিনটি, চট্টগ্রামে পাঁচটি, সৈয়দপুরে পাঁচটি, যশোরে চারটি, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া চীন, কাতার ও মালয়েশিয়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করছে সংস্থাটি।
নভোএয়ার প্রতিদিন চট্টগ্রামে চারটি, কক্সবাজারে তিনটি, যশোরে চারটি, সৈয়দপুরে চারটি, সিলেট, বরিশাল ও রাজশাহীতে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশের রুটে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। বর্তমানে এমিরেটস সপ্তাহে সাতটি, তার্কিশ এয়ারলাইন্স পাঁচটি, কাতার এয়ারওয়েজ পাঁচটি, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স দুটি, মালিন্দো এয়ার দুটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এছাড়া ফ্লাই দুবাই, ইতিহাদ তাদের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়িয়েছে। এয়ার এরাবিয়া ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকেও যাত্রী নিয়ে শারজাহ’র উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া নতুন করে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছে ওমানভিত্তিক ওমান এয়ার, সালাম এয়ার ও বাহরাইনভিত্তিক গালফ এয়ার। সব মিলে ফ্লাইট বন্ধ রাখা অনেক এয়ারলাইন্সই বাংলাদেশের প্রতি আস্থা রেখে ফ্লাইট চলাচল শুরু করেছে।
গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে হঠাৎ করে বাংলাদেশসহ ২৩ দেশের নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার। তবে বিদেশি ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের নিয়ে চলাচল করছে কুয়ালালামপুরের ফ্লাইটগুলো।
বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, করোনার অস্থির সময় কাটিয়ে তারা আগের মতোই ফ্লাইট পরিচালনায় সক্ষমতা অর্জন করেছে। তবে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় আপাতত কম ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া হলে ফ্লাইট সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযাগ) মো. কামরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বেবিচকের অনুমতি পাওয়ার পর ইউএস-বাংলা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক রুটগুলোতে নানা বিধিনিষেধের কারণে প্রত্যাশিত সংখ্যক যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না।
তার্কিশ এয়ারলাইন্সের বাংলাদেশের সেলস অ্যান্ড ট্রাফিক অফিসার এজাজ কাদরি জাগো নিউজকে বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে প্রাথমিকভাবে তিনটি ফ্লাইট দিয়ে যাত্রা শুরু করে তার্কিশ এয়ার। বর্তমানে আকাশপথে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের আত্মবিশ্বাস অনেকাংশে বেড়েছে। এছাড়া কাজের তাগিদে অনেক প্রবাসী দেশ ছাড়ছেন। টিকিটের চাহিদাও বেড়েছে। ফ্লাইট সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চাহিদা বিবেচনায় ভবিষ্যতে ফ্লাইট সংখ্যা আরও বাড়ানো হতে পারে।
এদিকে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকে কোভিড-১৯ এর আগে বিভিন্ন দেশে ঘুরতে যাওয়ার টিকিট কেটে রেখেছিলেন। যেসব দেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা তুলেছে সেসব দেশে যেতে শুরু করেছেন ভ্রমণপিপাসুরা। তাদের মধ্যে তুরস্ক, দুবাই উল্লেখযোগ্য।
এআর/এমএআর/জেআইএম