২ টাকার বিনিময়ে কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা


প্রকাশিত: ১০:২৫ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৫

গ্রামের হতদরিদ্র নারী ও পুরুষরা মাত্র দুই টাকায় স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন। সেবার পাশাপাশি বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে ওষুধ। সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিকের কল্যাণে হতদরিদ্রদের স্বাস্থ্য সেবা এখন হাতের কাছে। গ্রামের হাতুরে ডাক্তারের কাছে না যাওয়া মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে।

নীলফামারী জেলার ছয়টি উপজেলার ৬০টি ইউনিয়ন ও চারটি পৌরসভায় বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে ১৭২টি। সরকারিভাবে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে এসব কমিউনিটি ক্লিনিক। তিস্তার দুর্গমচরসহ কিছু কিছু ক্লিনিক কর্মীরা ইচ্ছেমতো পরিচালনা করছে মর্মে একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়।

অনেক স্থানে কমিউনিটি কেয়ার হেলথ প্রােভাইডার (সিএইচসিপি) নিয়মিত কেন্দ্রে না আসার রোগীদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

সরেজমিনে রোববার নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মকুটপুর ইউনিয়নের মেলাপাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকে বেলা সোয়া ১১টা পর্যন্ত তালা ঝুলতে দেখা যায়। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি কেয়ার হেলথ প্রােভাইডার মোসলেমা আক্তার বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে এসে অফিসের তালা খোলেন। এক ঘণ্টা থেকে আবার বিভিন্ন অযুহাতে চলে যান। সকাল ৯টায় সেখানে আসা রোগী আকলিমা আক্তার (৩৫), মুক্তা বেগম (৩), নাসরিন আক্তার (২৫) চিকিৎসার জন্য এসে কেন্দ্র বন্ধ পেয়ে ঘুরে যান।

ক্লিনিকের পার্শ্ববর্তী বাড়ির রশিদুল ইসলাম (৫০) জাগো নিউজকে বলেন, মোসলেমা আপাতো প্রতিদিন সকালে আসে আজকে কেন যেন আসতে পারে নাই।

এসময় কথা হয় নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা.আব্দুর রশিদের সঙ্গে। এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নীলফামারীর ছয়টি উপজেলার ১৭২টি কেন্দ্র সকাল ৯টা থেকে চালু রয়েছে। মেলাপাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে প্রসঙ্গে বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না। বিষয়টি আমি ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে অবগত করে দেখি উক্ত কর্মী কী ছুটি নিয়েছেন না বিভিন্ন অযুহাতে কেন্দ্রটি বন্ধ রেখেছে।

ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. হিরম্ব কুমার রায় জাগো নিউজকে জানান, আমি ঢাকায় ট্রেনিংয়ে আছি। মেলাপাঙ্গা কমিউনিটি কেন্দ্রটি বন্ধের বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।

Community-
এরপর সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে মোটরসাইকেলে এসে হাজির হন মোসলেমা আক্তার। মোসলমা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাচ্চা অসুস্থ থাকায় আসতে দেরি হয়েছে। সকাল ৯টার ক্লিনিক কখন খোলেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি মাঝে মাঝে আসতে না পারলে স্বাস্থ্য সহকারী বেলাল হোসেন সকালে এসে খোলেন।

আজকে বেলাল হোসেন কোথায় আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বলতে পারবো না। গত মাসে কতজন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন এ বিষয়টিও তিনি বলতে পারেনি। উক্ত কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি আরিফুজ্জামানকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে চেষ্টা করেও বন্ধ পাওয়ায় মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সকাল ১১টায় মৌজা পাঙ্গা কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা যায়, কমিউনিটি কেয়ার হেলথ প্রােভাইডার অমিত হাসান শিশুর চিকিৎসা দিচ্ছে। মাত্র দুই টাকার টিকিটে মেলা পাঙ্গা গ্রামের আনন্দ রায়ের তিন বছরের মেয়ে বৃষ্টি রায় জর ও সর্দির চিকিৎসা নিতে পারছে।

আনন্দ রায় জাগো নিউজকে বলেন, আগে হাতুরে ডাক্তারের কাছে যেতে হতো। এখন বাড়ির পাশে কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় বাচ্চাদের সমস্যা হলে ২ টাকার টিকিটে ভালো চিকিৎসা ও বিনামূল্যে সরকারি ওষুধ পাচ্ছেন। এসময় কথা হয় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী মোকছেদ আলীর (৫৬) সঙ্গে।

Community
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমাশা ও জ্বরের কারণে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। গত শনিবার উক্ত কেন্দ্রে ১৯ জন ও গত অক্টোবর মাসে চিকিৎসা নিয়েছে ৭২৩ জন রোগী। কমিউনিটি কেয়ার হেলথ প্রােভাইডার অমিত হাসান জাগো নিউজকে জাননে, সরকারিভাবে ৩০ প্রকারের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেন্দ্রটি খোলা থাকে।

নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে বলেন, সরকারিভাবে ১৭২টি কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারি ওষুধ সরবরাহ রয়েছে। প্রতিমাসে ওষুধের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করা হচ্ছে।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।