ওষুধ সঙ্কটে লালমনিরহাটের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো


প্রকাশিত: ০৯:০৯ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৫

গ্রামীণ জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রতিটি গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করছেন। ক্লিনিকগুলোতে রয়েছে প্রবল ওষুধ সঙ্কট। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিস খোলা রাখার নিয়ম থাকলেও দুপুর একটার মধ্যে এসব ক্লিনিক বন্ধ করে চলে যান হেলথ প্রোভাইডারা (সিএইচসিপি)। রোগীরা এসব ক্লিনিক থেকে আশানুরূপ সেবা পান না বলে দাবি করেন ভুক্তভোগিরা।

comioniti
পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকে ল্যাপটপ ও মডেম প্রদানের মাধ্যমে তথ্যসেবা ব্যবস্থা চালু করে। তবে এসব ল্যাপটপ ও মডেম চালাতে পারেন না অনেক হেলথ প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে শনিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ইন্জি পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে ওষুধ না পেয়ে শিশু লিয়ন (৯), শাহিদা বেগম (২৫), বুলবুলী (৩৫), মিনো বালা (৩৬) ও শিশুবালা (৪০) বাড়ি ফিরছেন। ভেতরে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন নারী বসে আছেন ওষুধ নেয়ার জন্য। কিন্ত ওষুধ না থাকায় হেলথ প্রোভাইডার আঞ্জুমান আরাকে বলছেন, কবে ওষুধ আসবে, আর কবে পাব এমন প্রশ্ন করছিলেন।

হেলথ প্রোভাইডার  আঞ্জুমান আরা জাগো নিউজকে বলেন, গত পহেলা জুলাই দুই কাটুন ক্লিনিকের জন্য ওষুধ পেয়েছি। প্রতিদিন রোগী বেশি হওয়ার কারণে দুর্গাপূজার আগেই ওষুধ শেষ হয়ে গেছে। তবে ১ নভেম্বর আবার ওষুধ পাব বলে তিনি জানান।

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন হেলথ প্রোভাইডার, একজন পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও একজন স্বাস্থ্য সহকারী থাকার কথা থাকলোও ইন্জি পাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে দেখা গেছে এক মাসেও পরিবার পরিকল্পনা সহকারী ও স্বাস্থ্য সহকারী ক্লিনিকে আসেন না।

comioniti
ইন্জি পাড়া গ্রামের আশরাফ আলী (৪০), মফিজুল ইসলাম (৩৫), জাগো নিউজকে জানান, ওষুধ নিতে গেলে দুই টাকা করে দিতে হয়, টাকা না দিয়ে ওষুধ মেলে না। তারা আরও জানান, ওই ক্লিনিকে হেলথ্ প্রোভাইডার ছাড়া আর কাউকে কোনো দিন চিকিৎসা দিতে দেখেননি তারা।

এদিকে পাটগ্রাম উপজেলার জোংড়া ইউনিয়নের ঘোসপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ১১৯নং বাঁসকাটা বিলুপ্ত ছিটমহল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা মইফুদ্দিন মিয়া (৬৫) জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ ক্লিনিক থেকে সবধরনের ওষুধ পাই। কোনো অসুবিধা হয় না।

ঘোসপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে হেলথ্ প্রোভাইডার শাকিলা ফারহানা জাগো নিউজকে জানান, ক্লিনিকটি ১১৯নং বাঁসকাটা বিলুপ্ত ছিটমহলের কাছে হওয়ায় প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন বিভিন্ন বয়সী রোগী ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসেন। প্রতি মাসে রোগী চাহিদা বেশি হওয়ায় ওষুধ সঙ্কট দেখা দেয়।

সরেজমিনে পাটগ্রাম উপজেলার ১১২নং বাঁসকাটা বিলুপ্ত ছিটমহল অস্থায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। তবে অনেকে ওষুধ না পেয়ে ফিরিয়ে গেছেন। হেলথ প্রোভাইডার আলো আক্তার জাগো নিউজকে জানান, এক মাসে আগেই ওষুধ শেষ হয়ে গেছে তবে ওষুধ ১ নভেম্বর আসবে বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার তিনটি বিলুপ্ত ছিটমহলে গত ৬ সেপ্টম্বর থেকে তিনটি অস্থায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকে চালু হয়। এগুলো হলো উপজেলার বুড়িমারী ইউনিয়নের ১৩নং বিলুপ্ত ছিটমহল খরখরি, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ১৭নং বিলুপ্ত ছিটমহল পানি শালায় ও ১১২নং বাঁসকাটা বিলুপ্ত ছিটমহলে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপিত হয়।

comioniti
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৫টি উপজেলার মধ্যে ২টি পৌরসভা মিলে এ জেলার প্রায় ১৫ লক্ষ জনসংখ্যার বিপরীতে অস্থায়ী কমিউনিটি ক্লিনিকসহ রয়েছে ১৭১টি ক্লিনিক। জেলায় কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক লক্ষ  ১৫ হাজার সাধারণ জনগণ চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গোলাম মুহাম্মদ জাগো নিউজকে জানান, উপজেলায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো জনগণের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরও জানান, সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য এক কার্টুন ওষুধ দুই মাসের জন্য ব্যবহার করার নিয়ম রয়েছে। ওষুধ সঙ্কট হলে কিছুই করার নেই। হেলথ প্রোভাইডার যদি দুপুর একটার মধ্যে অফিস ছাড়েন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন আ স ম আব্দুছ ছামাদের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাহাকে পাওয়া যায়নি।

এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।