কারাবন্দিদের ফোনে কথা বলার সুযোগ: ৮ মাসেও হয়নি প্রকল্পের পুনর্গঠন

প্রদীপ দাস
প্রদীপ দাস প্রদীপ দাস , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৮:২৮ এএম, ২৪ আগস্ট ২০২০

অডিও শুনুন

কারাগারে বন্দিদের ফোন ব্যবহারের সুবিধা বিশ্বের অনেক দেশে আছে। তবে নেই বাংলাদেশে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ না হলে বন্দিদের মধ্যে হতাশা, পলায়নপ্রবণতা বা নানারকম দুশ্চিন্তার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কারাবন্দিদের ফোনের মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টি করতে দেশে প্রথমবারের মতো একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেয়া এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে কারা অধিদফতর।

এ প্রকল্পের ওপর ২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের কিছু জায়গায় অপূর্ণতা, অসঙ্গতি, ত্রুটি, বাড়তি ব্যয় ধরা পড়লে সেসব সংশোধন করে পুনরায় প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর জন্য বলা হয়। তারপর আট মাস পেরিয়ে গেল। কিন্তু এখনও তা পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

কারা অধিদফতর পুনর্গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তারা আবার তা পরিকল্পনা কশিমনে পাঠাবে। প্রকল্প যাচাইয়ের পর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পরিকল্পনা কশিমন তা জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করবে। এরপর কমিটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় তা অনুমোদন পেলে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু করতে পারবে কারা অধিদফতর। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, চলতি বছরই প্রকল্পটি একনেকে পাস হবে।

karagar

এ বিষয়ে কারা অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পটি এখনও একনেকে অনুমোদন হয়নি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটি পাঠিয়েছিলাম, তারা আমাদের কিছু অবজারভেশন দিয়েছিল। তারপর আমরা আবার পুনর্গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে কিছু অবজারভেশনসহ আমাদের কাছে আবার এসেছে। ওটা আমরা কারেকশন করে আবার পাঠাব। এটা তো কেবল এলো, গতকাল (১৯ আগস্ট) না হয় আজকে (২০ আগস্ট) পেয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন অবজারভেশন। দেখি, পুনর্গঠন করে দিয়ে দেব। এ প্রকল্পে আপাতত বড় ধরনের কোনো সমস্যা দেখছি না। এ বছরই একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ইতোমধ্যে সীমিত পরিসরে কারাগারে ফোনবুথ চালু করা হয়েছে বলে জানান কারা অধিদফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সকল কারাগারে স্বজন লিংক স্থাপিত হবে। এ প্রকল্প প্রস্তুতের কাজ চলমান। তবে ইতোমধ্যে বন্দিদের জন্য প্রতি কারাগারে ফোনবুথ চালু করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়।

সূত্র জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পিইসি সভায় কারা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং ৫৫টি জেলা কারাগারসহ মোট ৬৮টি কারাগার রয়েছে। কারাগারে বর্তমানে ৪০ হাজার ৬৬৪ ধারণক্ষমতার বিপরীতে প্রায় ৯০ হাজার বন্দি রয়েছেন, যা ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭-৮ হাজার বন্দির সঙ্গে কমপক্ষে ২০ হাজার আত্মীয়-স্বজন সাক্ষাৎ করে থাকেন।

karagar

প্রকল্পের পটভূমি তুলে ধরে ওই সভায় বলা হয়, ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল কেরানীগঞ্জে নির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেন- ‘যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কারাবন্দিদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলার সুযোগ সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রোগ্রামের সার্ভিস ইনোভেশন ফান্ডের মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে ২০১৮ সালের ২৮ মার্চ পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে কারাগারে ফোনবুথ স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণের লক্ষ্যে ‘দেশের সকল কারাগারে স্বজন লিংক স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৪৯ কোটি ৯৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে।

কারা অধিদফতরের প্রতিনিধিরা সভায় আরও জানিয়েছিলেন, ১৮টি কারাগারে পাঁচ বুথ বিশিষ্ট ৩৪টি ভবন এবং ৫০টি কারাগারে তিন বুথ বিশিষ্ট ৬৫টি ভবনসহ ৬৮টি কারাগারে মোট ৯৯টি ভবনে সর্বমোট বুথ সংখ্যা হবে ৩৬৫টি। ইতোমধ্যে অনুমোদিত কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান কারাগারগুলোর মধ্যে অনেকগুলো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।

এ কারণে বন্দির সংখ্যা বিবেচনায় প্রস্তাবিত বুথের সংখ্যা পুনর্নির্ধারণ এবং প্রস্তাবিত ৬৮টি কারাগারের মধ্যে নতুনভাবে ৬৭টি কারাগার এবং টাঙ্গাইল কারাগারের জন্য প্রয়োজনে বর্ধিত সুবিধা সংস্থান আলোচ্য প্রকল্পের আওতাভুক্ত করে প্রত্যেক কারাগারে নারী বন্দিদের জন্য আলাদা বুথের সংস্থান করার প্রস্তাব করা হয় সভায়।

Narayanganj-2

প্রকল্পটিতে যেসব অসঙ্গতি ধরা পড়ে

পিইসি সভা সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত ডিপিপিতে কারা অধিদফতরের বিদ্যমান জনবলের সহযোগিতায় প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিধায় প্রকল্পে জনবল বাবদ কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে না মর্মে উল্লেখ করা হয়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সুরক্ষা সেবা বিভাগের প্রতিনিধি বলেছিলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে এবং প্রকল্প সমাপ্তির পর কার্যক্রম চলমান রাখার জন্য জনবলের প্রয়োজন। জনবলের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে অর্থ বিভাগের জনবল নির্ধারণ কমিটির সুপারিশসহ এ খাতের ব্যয় প্রাক্কলিত ও সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ সংশোধন এবং প্রকল্পের কার্যক্রম টেকসইকরণের লক্ষ্যে যথাযথ এক্সিট প্ল্যান প্রণয়নপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

প্রকল্পের ক্রয় পরিকল্পনায় একাধিক ক্রয় পদ্ধতি এবং ২১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা খরচে ৯৯টি ফোনবুথের ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়। এ বিষয়ে পিপিআর-২০০৮ এর আলোকে একটি নির্দিষ্ট ক্রয়পদ্ধতি উল্লেখ করে ক্রয় পরিকল্পনা প্রণয়নের বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। এছাড়া বৈদেশিক শিক্ষা সফরের জন্য প্রস্তাবিত অস্ট্রেলিয়া/ব্রাজিল এবং কানাডা/আর্জেন্টিনার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞ এশিয়ানভুক্ত দেশ সফরের জন্য নির্বাচন করে এ খাতে ব্যয় ৪০ লাখ টাকার জায়গায় ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণে সভায় একমত পোষণ করা হয়।

প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প পরিচালকের জন্য একটি জিপ গাড়ি, প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াতের জন্য একটি ডাবল কেবিন পিকআপ, প্রকল্পের মালামাল পরিবহনের জন্য দুটি মাইক্রোবাস সংগ্রহের যৌক্তিকতা এবং প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়। বিস্তারিত আলোচনা শেষে একটি জিপ গাড়ি, একটি ডাবল কেবিন পিকআপ ও একটি মাইক্রোবাসের সংস্থান রাখা এবং বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী প্রকল্প পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে সভায় একমত পোষণ করা হয়। এছাড়া পিইসি সভায় আরও বেশকিছু অসঙ্গতি, অপূর্ণতা ও বাড়তি ব্যয় প্রস্তাবে ধরা পড়লে সেসবও সংশোধনের কথা বলা হয়।

পিডি/এইচএ/এমএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।