লক্ষ্মীপুরে কমিউনিটি ক্লিনিকে রোগীর আস্থা বেড়েছে
তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের দৌঁড়গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর লক্ষ্মীপুরসহ দেশব্যাপী কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছিল। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় এসব ক্লিনিক চালু করে।
এক সময়ের রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার এ কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো লক্ষ্মীপুরে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে। সেই সঙ্গে এসব ক্লিনিকে এখন রোগীদের আস্থা বেড়েছে।
এদিকে রোগীরা ক্লিনিকগুলোতে হাতের কাছেই চিকিৎসা-সেবা পেয়ে বেশ খুশি। এরমধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশী। তারা বিনামূল্যে পাচ্ছেন সরকারি ৩০ রকমের জরুরি ওষুধ। তবে সচেতন মহলের ভাষ্য, সরকারি-বেসরকারিভাবে কমিউনিটি ক্লিনিকের সেবার বিষয়ে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালালে আরও বেশি সুফল পাবে তৃণমূলের মানুষ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুরে ৫৮টি ইউনিয়নে বর্তমানে ১৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। এরমধ্যে সদরে ৭৫, রায়পুরে ৩৪, রামগঞ্জে ২৪,কমলনগরে ২১, রামগতিতে ২১ ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়াও কমলনগর উপজেলায় মেঘনা নদীর ভাঙনে তিনটি ক্লিনিক ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে পড়েছে।
জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি রোগীরা নিয়মিত এসব ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ নিচ্ছেন।
২০১৪ সালে জেলার ক্লিনিকগুলো থেকে শিশু স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ২৭ জন, মাতৃ-স্বাস্থ্য সেবা (এনএনসি/পিএনসি, পুরুষ) নিয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ১১৭ জন এবং সাধারণ নারী-পুরুষ রোগী ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ২৭ জন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে, রায়পুরের দক্ষিণ কেরোয়া কমিউনিটি ক্লিনিকে (সিসি নং ২৬) বিভিন্ন বয়সি নারী-পুরুষ ও শিশুদের ভিড়। রোগীরা ওই ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী সরস্বতী রানী সাহার কাছে নিজেদের সমস্যার কথা বলছেন। বক্তব্য শুনে- অবস্থা দেখে তিনি একে-একে ওষুধ দিচ্ছেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৮০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ নিয়েছেন। ওই ক্লিনিকের আশপাশ এলাকায় রোগীদের সমস্যা হলে ছুটে আসেন সরস্বতী রানীর কাছে।
দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের দিনমজুর নোয়াব আলীর স্ত্রী নুর জাহান কয়েক দিন ধরে চোখে সামান্য সমস্যা দেখছেন। তিনি ক্লিনিকে এসে সমস্যা বলার পর একটি ক্লোরামফেনিকল ড্রফট ও এক পাতা প্যারাসিটামল দেয়া হয়।
নুর জাহান জাগো নিউজের এই প্রতিবেদককে হাসি মুখেই বলেন, হেলার বউ (পুত্রবধূ) টিয়া (টাকা) দিছে ওষুধ খাইতাম। বেক (সব) সময় ইয়ান তোন ওষুধ নি। টিয়া লাগে না। সরকার একখান ভালা কাম কইরছে।
ওই ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী সরস্বতী রানী সাহা জানান, রোগীরা দূর-দূরান্ত থেকে এখানে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে আসেন। সরকারিভাবে বরাদ্ধ পাওয়া জরুরি ওষুধগুলো বিতরণ করা হয়। রোগী বেশি অসুস্থ হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে পরামর্শ দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোগীদের সেবা নেয়ার এমন চিত্র জেলার অধিকাংশ ক্লিনিকে। সরকারিভাবে সরবরাহ করা ওষুধের মান ভালো হওয়ায় অনেক রোগীই সদর হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক দেখিয়ে গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে ওষুধ নেয়।
মোল্লারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আবদুল লতিফ বলেন, তিনি অসুস্থ হলে রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসককে দেখান। পরে নিজের এলাকায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে চিকিৎসকের লেখা ওষুধ নেয়। সরকারিভাবে দেয়া ওষুধে তার দু-একটি না থাকলে তিনি তা ফার্মেসি থেকে কিনে নেন। সরকারি ওষুধের মান খুব ভালো হওয়ায় কম সময়ের মধ্যে রোগ সেরে ওঠে বলে জানান তিনি।
তবে অভিযোগ রয়েছে, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার কয়েকটি এলাকায় ক্লিনিকে গিয়ে লোকজনকে প্রায়ই তালা দেখতে হয়। এতে চরাঞ্চল খ্যাত ওই এলাকাগুলোর মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
কমলনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান বলেন, সরকারের সাফল্যের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রাখাও রয়েছে। এর সুফলও পাচ্ছে রোগীরা। এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে আরও বেশি জনগণ উপকৃত হবে।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা খালেদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নিয়মিত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো তদারকি করা হয়। দায়িত্বপ্রাপ্তরা রোগীদের দেখে সমস্যা শুনে রোগের ধরন অনুযায়ী বিনামূল্যে ৩০ রকমের ওষুধ দেন। এতে রোগীরা কমিউনিটি ক্লিনিকমুখী হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা সিভিল সার্জন ডা. গোলাম ফারুক ভূঁইয়া বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে মানুষ সেবা পাচ্ছে। সরকার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। সেখানে কারো দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএএস/এমএস