বৃষ্টির অভাবে আমন আবাদে বিপর্যয়ের আশঙ্কা


প্রকাশিত: ০৬:২৭ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৫

বরেন্দ্র এলাকা হিসেবে পরিচিত নওগাঁর সাপাহার উপজেলা। এ উপজেলার বছরের একটি মাত্র ফসল আমন ধানের আবাদ। আর এর উপরই নির্ভর করে সারা বছরের ভরণ পোষণ। চলতি আমন মৌসুমে সাপাহারে আমন চাষাবাদে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা থাকলেও শেষ সময় এসে পানির অভাবে ফসলের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। পানির অভাবে অনেক জমির ধান পুড়ে গেছে।

বর্ষার শুরুতে ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল সাপাহারে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় কৃষকরা মনের খুশিতে আমনের আবাদ করেছিলেন। জমিতে ধান রোপণের পর বৃষ্টি হওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণ পানিও যুগিয়েছিল প্রকৃতি। ফলে সবুজ ধানে ভরে উঠেছিল মাঠ। কৃষকের মনে আনন্দের সঞ্চার হয় যে এবার ভালভাবে ফসল ঘরে উঠবে। কিন্তু শেষ সময় এসে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। আর ২-৩টি পানির সেচ জমিতে দিলে ফসল ভাল হবে। পানির অভাবে মাটি শক্ত হয়ে ধানের গাছগুলো হলুদ হয়ে গেছে। অনেক জমির ধান মারাও গেছে।

যে সকল এলাকায় পানি সেচের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানকার কৃষকরা অতিরিক্ত খরচ করে ডিপ শ্যালো থেকে মাঠে সেচ দিচ্ছে। আর যে সকল এলাকায় সেচের কোনো ব্যবস্থা নেই সে অঞ্চলের কৃষকরা কোনো রকমে পুকুর, খাল, ডোবা হতে একটু করে সেচ দিয়ে কোনো রকমে ধানগাছের জীবন বাঁচিয়ে রেখেছে। জমিতে সেচ দিতে না পেরে অনেকেই সৃষ্টিকর্তার উপর বৃষ্টির মুখ পানে চেয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছেন।

সাপাহার উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার বৃষ্টিপাত ভাল হওয়ায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে ১৭ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। স্বল্প পানিতে স্বল্প সময়ে যে ধানগুলো হয়, আবাদের জন্য কৃষকদের সে বিষয়ে পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু পানির অভাবে হয়তো লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া আর সম্ভব নয়।

উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের জয়দেবপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে জানান, এবার ২০ বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের আমন ধানের আবাদ করেছেন। পানির অভাবে ২ বিঘা জমির মতো ধান নষ্ট হয়েছে। জমিতে আর ২টি পানির সেচ দিতে হবে। কিন্তু পানির অভাবে হয়ত আর সম্ভব হবে না। বিঘা প্রতি ২০/২২ মণ হারে ফলন হলেও এবার ১২/১৪ মনের মতো হতে পারে।

কৃষক রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, ৩ বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। পানির অভাবে ১ বিঘা জমির ধান পুড়ে গেছে। কিন্তু ফসলে কোনো রোগবালাই নেই। জমিতে আবাদ করতে বিঘা প্রতি প্রায় ৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

এছাড়া উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের কুচন্দরী গ্রামের ইউসুফ আলী জানান, ৩ বিঘা জমিতে ফসল করেছেন। প্রথমদিকে বৃষ্টি ভালই ছিল। কিন্তু শেষ সময় এসে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় জমি শুকিয়ে মাটি ফেটে গেছে।

Naogaon-Paddy

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এএফএম গোলাম ফারুক হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এখন পর্যন্ত মাঠের ধানের অবস্থা ভাল। কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কৃষি অফিসের জনবল দিয়ে কৃষি পরামর্শ সেল খোলা হয়েছে। উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান সেলিম বিভিন্ন মাঠে মাঠে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকা চিহ্নিত করছেন। ফসলের কোনো ক্ষতি না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়ে ৫৬ হাজার ৮৯৮ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে।

এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।