সুরক্ষানীতি মেনে চলবে গণপরিবহন, ঈদে বাড়ছে না ভাড়া
অডিও শুনুন
ঈদুল আজহায় চলাচল করবে গণপরিবহন। তবে সরকারি নির্দেশনা, মানতে হবে সুরক্ষানীতি। পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকতে হবে গণপরিবহনে। ঈদ উপলক্ষে নতুন করে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি তুললেও তা মেনে নেয়নি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ- বিআরটিএ। বরং চলাচলের অনুমতির শর্তগুলো কঠোরভাবে মানার নির্দেশনা দিয়েছে সংস্থাটি।
গত সোমবার বিআরটিএ কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিক সংগঠন, বিআরটিএ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে দুই সিটে একটি ফাঁকা রাখায় লোকসান হচ্ছে উল্লেখ করে ভাড়া বৃদ্ধির দাবি উত্থাপন করা হলেও তা কর্ণপাত করেনি বিআরটিএ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনাকালীন ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে গত ৩ মে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। আসন্ন ঈদুল আজহায় প্রথমে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার সিদ্ধান্ত হয়। তবে সুরক্ষানীতি বাস্তবায়নের শর্তজুড়ে দিয়ে গণপরিবহন চলাচলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে সরকার।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এভাবে হবে এবারের ঈদযাত্রা (ফাইল ছবি)
বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, বিআরটিএ-এর সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, সুরক্ষানীতি মেনেই গণপরিবহন চলবে। সুরক্ষানীতি মানার জন্য আমরা মালিকপক্ষকে চিঠি দেব।
তিনি আরও বলেন, ‘শর্ত অনুযায়ী, এক সিট খালি রেখে বাস চলছে। কিন্তু তাতে মালিকদের লোকসান হচ্ছে। এমনিতেই যাত্রী কম, ঈদে তো আরও বেশি লোকসানের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ ফিরতি যাত্রী থাকবে না। এভাবে চলাচল করা খুবই কঠিন। তবুও আমরা সেটা মানার এবং বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।’
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এভাবে হবে এবারের ঈদযাত্রা (ফাইল ছবি)
উত্তরবঙ্গ রুটে চলাচলকারী একটি পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আবু সালেহ্ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এক সিট খালি রেখে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে ৬০ শতাংশ। এতে আসলে যাত্রীদের বাড়তি টাকা গুনতে হলেও লোকসান মালিকদেরই হচ্ছে। কারণ ঢাকা থেকে গাইবান্ধার ভাড়া ৪৫০ টাকা। দুই সিটে ৯০০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু শর্ত অনুযায়ী, দুই সিট মিলে ভাড়া হচ্ছে ৮০০ টাকা। সিটপ্রতি ১০০ টাকা কমেছে। এর মধ্যে করোনার সংকটে এমনিতেই যাত্রী কম। ঈদে তো আরও যাত্রী কমে যাবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে বাস চলবে। কিন্তু কীভাবে চলবে সেটা নিয়ে আমরা মালিকরা চিন্তিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারও পোষালে ঈদে বাস চালাবে, না পোষালে চালাবে না। আমাদের উত্তরবঙ্গে গাড়ির ট্রিপ ছিল শতাধিক। সেখানে এখন চলছে ১৭টি। পরিস্থিতি বলতে পারেন খুবই খারাপ। এই জায়গা থেকে বাড়তি ভাড়ার দাবি উত্থাপন করা হলেও বিআরটিএ তা কর্ণপাত করেনি।’
বিআরটিএ-এর বৈঠকে অংশ নেয়া সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আগের নির্দেশনার মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদেও সামাজিক দূরত্ব ও সুরক্ষা নিশ্চিত করে গণপরিবহন চলবে। রাস্তায় যেখানে খানাখন্দ রয়েছে, যানজট থাকছে, সেখানে ঈদের আগেই বাড়তি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে। সওজ, ট্রাফিক বিভাগ, হাইওয়ে পুলিশকে সেদিকে নজর দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন সচিব মহোদয়।’
এমন ঈদযাত্রা এবার হয়তো দেখা যাবে না (ফাইল ছবি)
বিআরটিএ-এর উপ-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মাদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত ৩ মে যে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে শর্ত দিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, সেগুলো ঈদেও মানতে হবে। একজন যাত্রীকে বাস বা মিনিবাসের পাশাপাশি দুটি আসনের একটি আসনে বসিয়ে অপর আসনটি অবশ্যই ফাঁকা রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসারে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনোভাবেই সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে উল্লিখিত মোট আসন সংখ্যার অর্ধেকের বেশি যাত্রী বহন করা যাবে না এবং দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী বহন করা যাবে না।
বিআরটিএ-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, সরকার এবার তিনদিনের বেশি ছুটি দিচ্ছে না। তাছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মস্থলেই থাকতে বলেছে। এমনিতে যাত্রী কম। সবমিলে ঈদকেন্দ্রীক এবার গণপরিবহনে চাপ কম থাকবে। যাদের ঈদে বাড়ি যাওয়া খুব দরকার, তারা যাবে। পরিবহনের মালিকদের যদি পোষায় গাড়ি চালাবে। লোকসান হলে চালাবে না। কিন্তু ভাড়া আর বৃদ্ধি করা যাবে না।
এমন ঈদযাত্রা এবার হয়তো দেখা যাবে না (ফাইল ছবি)
এদিকে পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এবার তারা ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। প্রতি ঈদেই কমপক্ষে ২০/২৫ দিন আগে থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট একেবারেই ভিন্ন। মহামারি করোনা যেন সবকিছুই পাল্টে দিয়েছে।
গত ৩০ জুন রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে গণপরিবহনে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে বলা হয়, ‘গণপরিবহনসহ সব ধরনের যানসমূহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করে চলাচল করবে’।
জেইউ/এমএআর/এমএস