তিন প্রশ্নের কোনোটির উত্তর ‘হ্যাঁ’ হলেই বিমানযাত্রা বাতিল
দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল চালু হওয়ার দিনক্ষণ এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে যেদিন থেকে চালু হবে সেদিন থেকেই শুরু হবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা কার্যক্রম। এর অংশ হিসেবে ফ্লাইটে যাওয়ার আগে চেক-ইন করার সময় একজন যাত্রীকে তিনটি প্রশ্ন সম্বলিত একটি ফরম দেয়া হবে। প্রশ্ন তিনটির একটিরও উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে ওই যাত্রী আর ফ্লাইটে চড়তে পারবেন না। এছাড়া যাত্রীর দেহের তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা এর চেয়ে বেশি থাকলেও বাতিল হবে যাত্রা।
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে দেশের বিমান চলাচল নিরাপদ করতে বিমানবন্দর, এয়ারলাইন্সসহ এ খাতের সংশ্লিষ্টদের ৩৫টি নির্দেশনা দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। নির্দেশনাগুলোর অন্যতম হচ্ছে এই ফরম পূরণ করা।
ফরমে যাত্রীর নাম, বয়স, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, বর্তমান ঠিকানা, এয়ারলাইন্সের নাম, ফ্লাইট নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, শরীরের তাপমাত্রা, মোবাইল ও ই-মেইল নম্বর নেয়া হবে।
এরপর তাকে তিনটি প্রশ্ন সম্বলিত ফরম পূরণ করতে হবে। প্রথম প্রশ্ন, আপনার কি জ্বর বা কফ হচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, আপনার কি জ্বর এবং শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? তৃতীয় প্রশ্ন, গত ১৪ দিনে কোভিড-১৯ বা এই রোগের কোনো উপসর্গ থাকার কারণে আপনাকে কোনো বিমানবন্দরে বোর্ডিং থেকে রিফিউজ (ফেরত পাঠানো) করা হয়েছে কি-না?
তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ সূচক বক্সে। কোনো একটি প্রশ্নের উত্তরও যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলেই ওই যাত্রীর সেই ফ্লাইটে ভ্রমণ বাতিল হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যানের জারি করা এ নির্দেশনায় চেক-ইন, ইন-ফ্লাইট সার্ভিস, ক্রুদের নিরাপত্তা, সার্বিক দিকনির্দেশনা, এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা, ক্রুদের কোয়ারেন্টাইন ম্যানেজমেন্ট, এয়ারক্রাফট মেনটেইনেন্স, কেবিন এয়ার ফিল্টারেশন, অক্সিজেন মাস্ক সংক্রান্ত নির্দেশনা, ফ্লাইটে সন্দেহজনক রোগী পেলে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।
চেক-ইনকালীন নির্দেশনা
চেক-ইনের সময় কাউন্টার ও আশপাশের সহযোগীদের সার্বক্ষণিক মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, ডিস্পোজেবল ক্যাপ পরতে হবে। এছাড়া কাউন্টারের পাশে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
সামাজিক দূরত্ব মেনে যাত্রীকে চেক-ইনের লাইনে দাঁড়াতে হবে। চেক-ইনের আগে যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা মাপা হবে। তাপমাত্রা ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে তাকে বোর্ডিং পাস বা বিমানে ওঠার অনুমতি দেয়া যাবে না।
প্রতিবার যাত্রার আগে ডিসইনফেকট্যান্ট ছিটিয়ে ফ্লাইট জীবাণুমুক্ত করতে হবে
চেক-ইনের সময় যাত্রীকে নিরাপত্তা ব্রিফ দিতে হবে, সাথে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিতে হবে।
প্যাসেঞ্জার হেলথ কার্ড জমা নিতে হবে। কার্ডের তিনটির মধ্যে যে কোনো প্রশ্নের ‘হ্যাঁ’ হলে বোর্ডিং বাতিল করতে হবে।
ইন-ফ্লাইট সার্ভিস বিষয়ক নির্দেশনা
দেড় ঘণ্টার নিচে কোনো ফ্লাইটে খাবার পরিবেশন করা যাবে না। তবে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য সীমিত আকারে পানি ও জুস থাকবে, যা আগে থেকেই ইনটেক রাখতে হবে।
দেড় ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টার ফ্লাইটের যাত্রীদের শুকনা খাবার দিতে হবে, যা প্লেনে ওঠার আগেই দিতে হবে।
ফ্লাইটের সময় যদি চার ঘণ্টার বেশি হয় তবে ফ্লাইটের মধ্যে তাপমাত্রা মাপার যন্ত্র রাখতে হবে। প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পরপর যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা মাপতে হবে। কারও তাপমাত্রা যদি ৯৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয় তবে ক্রুরা আগে থেকেই ডেসটিনেশন এয়ারপোর্টকে জানাবে যাতে প্লেন অবতরণ করার সঙ্গে সঙ্গে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে।
ক্রুদের জন্য নির্দেশনা
ফ্লাইটের ক্রুদের সার্জিক্যাল মাস্ক অথবা মানসম্মত মাস্ক, ক্যাপ পরতে হবে। কেবিন ক্রুদের এন-৯৫ মাস্ক, চশমা, রাবারের হ্যান্ড গ্লাভস ও ফেসিয়াল মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড গ্লাভস ও মাস্ক প্রতি চার ঘণ্টায় পরিবর্তন করতে হবে।
ক্রুদের ককপিটে প্রবেশ যত সম্ভব কমাতে হবে, ইন্টারকমে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
ফ্লাইটে কেবিন ক্রু দুজন থাকলে উভয়েই একসঙ্গে খাবার সার্ভ করতে পারবেন না।
কেবিন ক্রুরা যাত্রা বিরতিতে কোনো হোটেলে অবস্থান করলে সেখানকার রুমেই খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে হোটেলের ভেতরের রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে পারবেন। কোনো মতেই হোটেলের বাইরে যেতে পারবেন না।
যদি কোনো ক্রু’র কোভিড-১৯ এর লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া এবং তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক বা হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠাতে হবে।
ফ্লাইটে যাত্রীর আসন বিন্যাস করতে হবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে
প্লেনের শেষের দুই সারিতে সিট খালি রাখতে হবে। ফ্লাইটে যদি কোনো করোনা আক্রান্ত সন্দেহে রোগী পাওয়া যায় তাহলে একজন কেবিন ক্রু তাকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফ্লাইটের ওই সিটগুলোতে নিয়ে বসাবেন।
সর্বোপরি ক্রু ও পাইলটদের মানসিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে।
বিমানবন্দর ও এয়ারক্রাফট সংক্রান্ত নির্দেশনা
প্রতিটি বিমানবন্দরে স্যানিটাইজার ছিটিয়ে ডিসইনফেক্টেড বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে প্লেনকেও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
সবাইকে ফ্লাইট ছাড়ার আগে ‘সার্টিফিকেট অব ডিসইনফেকশন’ নিতে হবে। প্রতিবার জীবাণুমুক্ত করার পর বেবিচকের প্রতিনিধিরা এই প্রক্রিয়াটি দেখে সার্টিফাই করবেন, এরপরই ফ্লাইটটি ছাড়বে।
এ নির্দেশনার বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন-আইকাওয়ের কাছ থেকে নিয়মিত নির্দেশনা পাচ্ছি। সেই নির্দেশনা ও আমাদের নিজস্ব কিছু সংযোজন করে একটি গাইডলাইন তৈরি করে সার্কুলার প্রকাশ করেছি। ফ্লাইট চালু করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চালু করা হবে।’
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল-আহসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের কার্যক্রম চলমান। আমাদের নিজস্ব উদ্যোগে নিয়মিত বিমানবন্দরের টার্মিনালের প্রবেশমুখ, লবি, লাউঞ্জ ও অ্যাপ্রোন এলাকায় জীবাণুনাশক ছিটিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়।’
করোনাভাইরাসের বিস্তাররোধে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট বন্ধের সময়সীমা দফায় দফায় বাড়িয়ে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। যদিও ত্রাণ-সাহায্য, এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি অবতরণ ও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনার কার্যক্রম চালু আছে।
ফ্লাইট বন্ধের সময়সীমা আর বাড়ানো হবে কি-না, এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই বেবিচক এমন নির্দেশনা জারি করলো।
এআর/এইচএ/পিআর