কিছুটা স্বস্তিতে দুগ্ধ খামারিরা

ফজলুল হক শাওন
ফজলুল হক শাওন ফজলুল হক শাওন , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ১০:৪৪ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২০

পবিত্র রমজান মাসে দুগ্ধ খামারিরা কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। কারণ রমজান মাস উপলক্ষে অনেক গ্রাহকই দুধ কিনছেন। ফলে কয়েক দিন আগেও যে দুধ ১০-১৫ টাকায় লিটার বিক্রি করেছেন, সেই দুধ এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ফলে কিছুটা হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন খামারি কৃষকরা।

খামারিরা জানান, সিরাজগঞ্জের খামারিদের কাছ থেকে মিল্ক ভিটাসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দুধ কিনছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটা সাড়ে ৩৯ টাকা লিটার দরে দুধ কিনছে। যারা খুচরা বিক্রি করছেন তারা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা লিটার দুধ বিক্রি করছেন। এছাড়া চুক্তিবদ্ধ খামারিদের কাছ থেকে দিনে ২ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করছে প্রাণ ডেইরি

করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস আদালত ও পরিবহন বন্ধ হওয়ায় দোকানপাট, রেস্তোরাঁসহ সব বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি টং দোকানে চা বিক্রিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দুধের লিটার নেমে আসে ১০ টাকায়। কেউ কেউ প্রতি লিটার দুধ পাঁচ টাকায় বিক্রি করেছেন। এতে হাজার হাজার লিটার দুধ বিক্রির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে।

খামারিরা বলছেন, করোনার কারণে তারা যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন তা কাটিয়ে উঠতে অনেক দিন সময় লেগে যাবে। এর আগে একদিকে গোখাদ্যের দাম বেশি, অন্যদিকে দুধের দাম কম-সব মিলিয়ে চরম বিপাকে পড়েন খামারিরা।

দেশের বিভিন্ন স্থানের খামারিদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রমজান উপলক্ষে অনেক গ্রাহক এখন দুধ কিনছেন। তাছাড়া আশপাশের বাজারেও কিছু কিছু দোকান খুলছে। অনেকে সীমিত আকারে হলেও মিষ্টি এবং দধির দোকান খুলেছেন। সে কারণে দুধের চাহিদাও বেড়ে গেছে। এজন্য দামটা পাওয়া যাচ্ছে। তবে এর সঙ্গে খামারিদের আবার কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে। তারা বলছেন, রমজানের পরে যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হয় এবং আবার যদি সব বন্ধ হয়ে যায় তখন কী হবে?

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম গত ২ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় থেকে পোল্ট্রি, ডিম, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, হাঁস, মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য, দুগ্ধজাতপণ্য, অন্যান্য প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য, মাছ, মাছের পোনা ও মৎস্যখাদ্য সরকার ঘোষিত ছুটিকালীন নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন সচল রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সকল জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।

খামারিরা বলছেন, গত এক মাসেও মন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি। দুগ্ধ খামারিরা দুধ বিক্রি করতে পারেনি। পোল্ট্রি খামারিরা মুরগি ও ডিম বিক্রি করেছেন অর্ধেকেরও কম দামে। রাস্তায় কোনো পরিবহন চলতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মন্ত্রী ডেইরি ও পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে কাঁচামালের আওতায় নিয়ে এগুলো নির্বিঘ্নে চলাচলের নির্দেশ দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো প্রকার গাড়ি চলতে দেয়নি বলে অভিযোগ। জেলা প্রশাসকের কোনো নির্দেশনাও খামারিরা পাননি। ফলে হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে এসব খাতে।

এ বিষয়ে কথা হয় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের দুগ্ধ খামারি সমিতির পরিচালক আব্দুস সামাদ ফকিরের সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন মিল্ক ভিটা পুরো দুধ কিনছে। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি কোম্পানিও দুধ কিনছে। ফলে দুধের ডিমান্ড অনেকটা বেড়েছে। মিল্ক ভিটা প্রতি লিটার দুধ ৩৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে দুধ কিনছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুস সামাদ ফকির বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তন করার জন্য এবং মানুষের পুষ্টির অভাব দূর জন্য মিল্ক ভিটা স্থাপন করেছিলেন। মিল্ক ভিটা ঠিকমতো দুধ কিনে বাজারজাতকরণ করলে দেশের লাখ লাখ খামারি কোটি কোটি লিটার দুধ নিয়ে আর মহাবিপাকে পড়বে না। বরং খামারিরা আরও উৎসাহিত হবে।’

বগুড়ার ধুনট থানার উল্লাপাড়া গ্রামের ডেইরি খামারি হবিবর রহমান (হবি) বলেন, ‘রোজা শুরু হওয়ার পর থেকে দুধের দাম বেড়েছে। রোজার কারণে গ্রাহকও বেড়ে গেছে। রোজার আগেও ২৫টাকা লিটার দুধ বিক্রি করেছি। এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হচ্ছে। তবে সমস্যা হলো হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ডে দুই ঘণ্টার মধ্যে দুধ বিক্রি করে বাড়ি চলে যেতে হয়। এর বেশি সময় পুলিশ থাকতে দেয় না। সে কারণে সময় ফুরিয়ে গেলে গ্রাহক না পেলে অনেক সময় কম দামেও দুধ বিক্রি করে চলে আসতে হয় বাড়িতে।’

কালিগঞ্জের মোহাম্মদ মোমেন জাগো নিউজকে বলেন, তার ফার্মে প্রতিদিন ১৭০ থেকে ১৮০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর প্রায় একমাস অনেক টাকা লস হয়েছে। কিছুদিন ধরে প্রতি লিটার দুধ আমরা ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছি। এখন কিছু দোকান ও ছোট স্টল খুলেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাভী সুস্থ থাকলে এই দামে দুধ বিকি করেও ফার্ম টিকিয়ে রাখা সম্ভব।

দেশের দুগ্ধ খামারিদের প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেকোনো মূল্যে কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দুগ্ধ খামারি, পোল্ট্রি খামারি এরা পুষ্টির জোগান দেয়। ইতোমধ্যে সরকার কৃষি ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশ সুদে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছেন। এগুলো ডেইরি, পোল্ট্রি এবং মৎস্য খামারিরাও পাবেন। তিনি বলেন, প্রণোদনা পেলে করোনাভাইরাসের কারণে এসব সেক্টরে যে ক্ষতি হয়েছে তা তারা পুষিয়ে নিতে পারবেন।

এফএইচএস/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।