আবর্জনার ভাগাড় এখন মনোরম পার্ক

আবু সালেহ সায়াদাত
আবু সালেহ সায়াদাত আবু সালেহ সায়াদাত , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৫৮ পিএম, ০৭ এপ্রিল ২০২০

পুরান ঢাকার লালবাগের রসুলবাগ পার্কটি একসময় পুরো বেদখল ছিল। বর্ষায় বৃষ্টি হলেই ডুবে থাকতো। আশপাশের জায়গাগুলো ছিল হকারদের দখলে। চারদিকের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে ওঠা ছোট-বড় দোকান ও বিভিন্ন স্থাপনার কারণে পার্কটি অনেকটা অবহেলিত ও দর্শনার্থীশূন্য ছিল। সেজন্য আশপাশের বাসা-বাড়ির আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল পার্কের উন্মুক্ত জায়গা।

সেই রসুলবাগ পার্কটি দারুণভাবে বদলে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ‘জল সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় আধুনিকায়নে পার্কটি হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষজনের অবসর কাটানোর মূল কেন্দ্র।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় সামান্য বৃষ্টি হলেই এই পার্ক ছোট আকারের জলাশয়ে পরিণত হতো। পার্কে যাওয়ার জন্য ছিল পায়ে হাঁটা সরুপথ। পাশের ড্রেনের ময়লা আর স্যুয়ারেজ লাইনের আবর্জনা পরিবেশকে দূষিত করে তুলছিল। সেই পার্কটি আজ শিশু-কিশোরদের ছোটাছুটি করে খেলাধুলা করার উপযোগী করে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে।

Dhaka01.jpg

পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, এতে আছে দোলনা-স্লিপারের মতো রাইড। আছে ঢেঁকিকলে আনন্দময় সময় কাটানোর সুযোগ। পার্কটির লাইটিং ব্যবস্থা রাতে আলোকিত করে পুরো এলাকাকে। রাতে পার্কটির মাঠে বটতলায় বসে প্রবীণদের আড্ডা। ২৮ কাঠা আয়তনের এই মাঠে আছে বড়দের ফুটবল খেলার জায়গা। হাঁটার জন্য ১৫০ মিটার ওয়াকওয়ে, বসার জায়গা ও মিনি প্যাভিলিয়ন। মাঠের চারদিকে নেট থাকায় খেলার কারণে ওয়াকওয়েতে হাঁটতেও সমস্যা হয় না।

এছাড়া ঋতুবৈচিত্র্যের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত করতে পার্কেই লাগানো হয়েছে রকমারি ফুল ও ফলের গাছ। এর মধ্যে আছে লটকন, সফেদা, চালতা, কামরাঙ্গা গাছ। আছে পলাশ গাছও। পুরো মাঠ দিনরাত ২৪ ঘণ্টা সবার জন্য উন্মুক্ত।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, ‘জল সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় পার্কটি আধুনিকায়নে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এখানে ক্যাফেটেরিয়া বা কফি হাউজ, জিমনেসিয়াম যেমন আছে, তেমনি ওয়াইফাই সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তার স্বার্থে আছে সিসিটিভি। অন্যদিকে মসজিদ সংলগ্ন স্থানে অজু ও টয়লেটের ব্যবস্থাও আছে। পাশাপাশি আছে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টও।

জানা গেছে, পার্কটি ছোট পরিসরের একটি রেস্তোরাঁর আয় দিয়েই রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে। নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয়দের সমন্বয়ে মাঠ পরিচালনা কমিটি গঠন করে দিয়েছেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

Dhaka01.jpg

পার্কটির নতুন নকশা অনুযায়ী সরিয়ে দেয়া হয়েছে চারদিকের দেয়াল। সংস্কারের ফলে এখন মুষলধারে বৃষ্টি হলেও এখানে পানি জমবে না। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য হাঁটার পথের নিচে পরিখা রয়েছে। পরিখায় জমা হওয়া পানি মাঠ পরিচর্যা ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করবেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন রূপে সাজানো-নয়নাভিরাম এমন পার্ক উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছে এলাকাবাসীকে। সেই উচ্ছ্বাস জাগো নিউজের কাছে প্রকাশ করছিলেন এই এলাকার বাসিন্দা ইয়াসিন আলী। তিনি বলেন, এক সময় পার্কটি অযত্নে-অবহেলায় ছিল। কিন্তু ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকনের উদ্যোগে পার্কটি পুরোপুরি বদলে গেছে। এলাকার বাচ্চারা এখানে এসে বিভিন্ন রাইডে খেলতে পারে। বড়দের জন্যও পার্কটিতে রাখা হয়েছে অবসর কাটানোর নানান ব্যবস্থা। সব মিলিয়ে সব বয়সীদের জন্য এই পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।

রসুলবাগ পার্কের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আমাদের ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাঠগুলোর উন্নয়ন করছি। এ প্রকল্পের আওতায় আমরা মাঠ ও পার্কের দৃশ্য বদলে দিয়েছি। আধুনিকায়নের মাধ্যমে এসব পার্ক ও খেলার মাঠগুলো আন্তর্জাতিক মানের করা হচ্ছে। পার্ক-মাঠের নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এরই মধ্যে অনেক মাঠের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

Dhaka01.jpg

তিনি বলেন, একসময় পুরো পার্কটি বেদখল ছিল। বর্ষায় জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকতো। আশপাশের জায়গাগুলো হকারদের দখলে ছিল। এখন সেই চিত্র বদলেছে। রাস্তাঘাটে শতভাগ বাতি জ্বলে। ফলে রাতে এসে মানুষ ঘুরতে পারছে। শিশু-কিশোররা খেলতে পারছে। ছোট-বড় সবার জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক সুবিধা রয়েছে এতে।

জানা গেছে, ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯টি পার্ক আর ১২টি খেলার মাঠ আধুনিকায়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের ব্যয় প্রথমে এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ধরা হলেও পরে নকশা পরিবর্তনের কারণে ব্যয় দাঁড়ায় এক হাজার ৭০০ কোটি ১৯ লাখ টাকায়। এই বরাদ্দের ৭০ শতাংশ দেয় সরকার, বাকি ৩০ শতাংশ বহন করে ডিএসসিসি।

Dhaka01.jpg

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, ডিএসসিসি এলাকায় মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে গ্রহণ করা ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ৩১টি মাঠ ও পার্কের নকশা প্রণয়ন করেন রফিক আযমের নেতৃত্বে ৭০ জন স্থপতি। মাঠগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি ইতোমধ্যে সর্বসাধারণের জন্য খুলেও দেয়া হয়েছে। আরও কয়েকটি মাঠ উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। মেয়র সাঈদ খোকনের মেয়াদকালেই (আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত) এ প্রকল্পের ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হচ্ছে।

প্রকল্পভুক্ত পার্ক ও মাঠগুলোর মধ্যে রসুলবাগ পার্ক ছাড়াও রয়েছে মতিঝিলের সিরাজ উদ্দৌলা পার্ক, বংশালের ত্রিকোণাকার পার্ক, কলাবাগান খেলার মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা পার্ক, মালিটোলা পার্ক, সিক্কাটুলী পার্ক, মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন পার্ক, আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, বাসাবো মাঠ, শহীদ আব্দুল আলীম খেলার মাঠ, জোড় পুকুর মাঠ, নবাবগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, বাহাদুরশাহ পার্ক, গজমহল পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, বাংলাদেশ মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা খেলার মাঠ, পান্থকুঞ্জ পার্ক, আজিমপুর শিশুপার্ক, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, সামসাবাদ খেলার মাঠ, দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, বালুরঘাট খেলার মাঠ, ওসমানী উদ্যান বা গোসস্যা নিবারণী পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও বশির উদ্দিন পার্ক।

Dhaka01.jpg

প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে যা থাকছে
ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় মাঠ বা পার্কগুলোতে প্রায় একই রকম সুযোগ-সুবিধা থাকছে। এর বাইরে কোনো কোনোটিতে এলইডি লাইটিং, কফি হাউজ, ফুড কোর্ট, কার পার্কিং, জাদুঘর, পাঠাগার, গ্রিন জোন, পাবলিক প্লাজা, লেডিস কর্নার, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, হাতিরঝিলের মতো জলাধারের পাশাপাশি সবুজ বাগান ও বেষ্টনীও থাকছে। থাকছে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ভাস্কর্যও। ফলে পরিবার নিয়ে বেড়ানোর জন্য মনোরম জায়গা হয়ে উঠছে একেকটি মাঠ ও পার্ক।

এএস/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।