বঙ্গোপসাগরের আকাশসীমায় বছরে ফসকে যাচ্ছে ২০০ কোটি টাকা

আদনান রহমান
আদনান রহমান আদনান রহমান , নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৪:৪৬ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২০

বঙ্গোপসাগরের জলসীমা নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বিবাদ নিষ্পত্তি হয়েছে আট বছর আগে। ভারতের সাথে বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে ছয় বছর আগে। নিষ্পত্তিতে বিশাল জলসীমার মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে এতদিনেও সমুদ্রের ওপরের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই আকাশসীমার ওপর দিয়ে চলাচল করা ফ্লাইটগুলোর কাছ থেকে ওভার ফ্লায়িং চার্জ বাগিয়ে নিচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, ঠিকঠাকভাবে প্রথম থেকে ওভার ফ্লায়িং চার্জ আদায় হলে বছরে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকাও আয় করতে পারতো বাংলাদেশ। তবে সক্ষমতা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে বেবিচক ওই অংশগুলোতে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারছে না।

বঙ্গোপসাগরে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ সাড়ে ২৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশকে দিয়ে ২০১৪ সালের ৮ জুলাই নতুন সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করে দেয় আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত।

তার দুই বছর আগে ২০১২ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির সমুদ্র আইনবিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিরোধপূর্ণ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমা নিয়ে রায় দেয়। এতে ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ লাভ করে। ফলে উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সমুদ্র সম্পদের একচ্ছত্র সার্বভৌমত্বের অধিকারী হয় বাংলাদেশ।

বেবিচক সূত্র বলছে, তাদের অধীনে থাকা এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট (এটিএম) সিস্টেমের রাডার এ আকাশসীমায় চলাচলকারী প্লেনগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করতে পারে না। তাই বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের আকাশসীমা দিয়ে প্রত্যহ বিশ্বের বিভিন্ন রুটের অনেক ফ্লাইট উড়ে গেলেও তাদের কাছ থেকে চার্জ আদায় করা যাচ্ছে না। এই সুযোগে ওভার ফ্লায়িং চার্জ বাগিয়ে নিচ্ছে ভারত ও মিয়ানমার।

সূত্র জানায়, আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণের জন্য কেবল এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রাডারসহ অল্প কিছু সরঞ্জাম প্রয়োজন। এগুলো কিনতে দীর্ঘদিন ধরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা এখনো ব্যবস্থা করতে পারেনি।

jagonews

এ বিষয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সাগরের আকাশসীমা আমাদের আওতায় নিতে যে সক্ষমতা দরকার তা এখন নেই। রাডারসহ অনেক যন্ত্রাংশই আমাদের নেই। শুধু সাগরপথে নয়, সারাদেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো আমাদের রাডারের আওতায় নেই।

তিনি আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (আইকাও) নীতিমালা অনুযায়ী এ জায়গার আকাশসীমা আমাদের আওতায় আনার জন্য যে ক্যাপাসিটি দরকার সেটি আপাতত নেই। এ অংশটুকু আমাদের আওতায় আনার বিষয়ে সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমাদের কী কী লাগবে আমরা তা জানিয়েছি। সেগুলো পেলে আমরা সাগরে নতুন করে পাওয়া আকাশসীমায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবো। এছাড়া এসব বিষয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলেও প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে কথাবার্তা চলছে।

বেবিচকের তথ্য মতে, দেশের আকাশসীমা ব্যবহারকারী ফ্লাইটগুলোর মধ্যে ২ হাজার কেজি ওজনের বেশি নয়, এমন এয়ারক্রাফটের কাছ থেকে ওভার ফ্লায়িং চার্জ নেয়া হয় ১২ ডলারের মতো করে। এরপর থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার কেজি ওজনের এয়ারক্রাফটের কাছ থেকে নেয়া হয় ২৪ ডলারের মতো। এভাবে ক্রমে বাড়তে বাড়তে সর্বোচ্চ ২ লাখ কেজি ওজনের এয়ারক্রাফট থেকে নেয়া হয় ৪২০ ডলার এবং ২ লাখ কেজি ওজনেরও বেশি এয়ারক্রাফট থেকে নেয়া হয় ৪৫০ ডলার করে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের আকাশসীমা দিয়ে বেশকিছু আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট যাতায়াত করে, যা নিয়ন্ত্রণ করছে অন্য দেশ। আইকাওয়ের অনুমোদন নিয়ে এখানে নেভিগেশন পরিচালনা করলে এবং রুটগুলো নিয়ন্ত্রণে চলে এলে রাজস্ব আয় বেড়ে যাবে বাংলাদেশের।

এআর/এইচএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।