জবিতে সান্ধ্যকোর্সের আয়ের সাড়ে ৭ লাখ টাকায় আইফোন উপহার

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ব্যবসায় প্রশাসন (বিবিএ) অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর তার মেয়াদ শেষ হওয়ার প্রাক্কালে সান্ধ্যকোর্সের টাকায় আইফোন কিনে অথবা ফোন কেনার অর্থ অনুষদের চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সান্ধ্যকোর্স পরিচালকদের উপহার দিয়েছেন। নিজেও ভাগীদার হয়েছেন এই উপহারের। আরও ৩০ হাজার টাকায় দুটি স্মার্টফোন কিনে দিয়েছেন বিবিএ অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানসহ দু’জন কর্মকর্তাকে দিয়েছেন। এতে সব মিলিয়ে অনুষদ ফান্ডের সাড়ে সাত লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। আইফোন বা তা কেনার সমপরিমাণ অর্থ উপহারের বিষয়টি স্বীকার করেছেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও সান্ধ্যকোর্স পরিচালক।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ড. শওকত জাহাঙ্গীর ডিনের দায়িত্বে থাকাকালে অনুষদভুক্ত বিভাগের চেয়ারম্যান ও সান্ধ্যকোর্সের পরিচালকদের উপঢৌকন স্বরূপ আইফোন কেনার বাজেট হিসেবে এই টাকা তোলেন। প্রত্যেকটি আইফোনের দর ৮০ হাজার টাকা ধরে মোট ৯টির জন্য তোলা হয় ৭ লাখ ২০ হাজার টাকা। নিজের জন্য একটি রেখে বাকি আটটি আইফোন বা তা কেনার সমপরিমাণ অর্থ দেন চার বিভাগের চেয়ারম্যান এবং ওই বিভাগগুলোর সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্সের পরিচালকদের। ৩০ হাজার টাকায় আরও দুটি মোবাইল ফোন কেনেন দুই কর্মকর্তার জন্য।

সূত্র জানায়, বিবিএ’র চারটি বিভাগেই রয়েছে সান্ধ্যকালীন এমবিএ কোর্স। প্রত্যেক বিভাগে এই কোর্সে গড়ে ৬৫-৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। যাদের ফি জনপ্রতি প্রায় ২ লাখ টাকা। এই টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে যায় ৩০ শতাংশ, অনুষদ পায় ৩ শতাংশ। বাকি ৬৭ শতাংশ পায় সংশ্লিষ্ট বিভাগ। অনুষদের ৩ শতাংশসহ ৭০ শতাংশ টাকা উত্তোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ দফতর, হিসাব দফতর এবং ট্রেজারারকে অবগত করার দরকার হয় না।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, উল্লিখিত আইফোন ক্রয়ের টাকা অনুষদের ওই ৩ শতাংশ থেকেই এসেছে। এই অর্থ অনুষদ কমিটির অনুমোদনক্রমেই উত্তোলন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- বিবিএ’র চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এবং সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক।

তথ্য অনুসারে আইফোন বা তা কেনার সমপরিমাণ অর্থ ‘উপহার’ প্রাপ্তরা হলেন- ড. শওকত জাহাঙ্গীর, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লিয়াকত হোসেন মাহমুদ ও সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান; ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা ও সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান; ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভুঁইয়া ও সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু মিছির এবং মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরী ও সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক। এছাড়া স্মার্টফোন গিফট পেয়েছেন সহকারী রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানসহ দুই কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. লিয়াকত হোসেন মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক হয়েছে।’

বিভাগের সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এগুলো গিফট হিসেবে দেয়া হয়েছে। আসলে ডিনের মেয়াদপূর্তিতে একটি ট্যুরের কথা চিন্তা করছিলাম। এসময় একজন শিক্ষকের প্রস্তাব অনুযায়ী আইফোন নেয়ার বিষয়টি ঠিক হয়। তবে আমার ফোনটি এখনো কেনা হয়নি।’

ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই বিষয়ে আমার কোনো মতামত নেই’। তিনি আইফোন পেয়েছেন কি-না জানতে চাইলে বলেন, ‘পাইনি’। বর্জন করেছেন কি-না, জানতে চাইলে বলেন, ‘বর্জনও করিনি, নেইওনি’।

ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সান্ধ্যাকালীন কোর্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘ডিন অফিস থেকে যখনই কোনো ডিনের মেয়াদ শেষ হয়, তখন এ ধরনের গিফট কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেয়া হয়।’ অনুষদের টাকায় এ ধরনের ‘গিফট’ দেয়ার সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি, ‘এটি কমিটি ইচ্ছে করলে পারফরম্যান্স বাড়ানোর জন্য করতে পারেন।’

মোবাইল ফোনে ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মঞ্জুর মুর্শেদ ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিভাগটির সান্ধ্যকোর্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম আবু মিছিরের মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. হুমায়ূন কবীর চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বলেন।’

মোবাইল ফোনপ্রাপ্ত সহকারী রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিবিএ অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর মোবাইল ফোনে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। এ বিষয়ে প্রতিবেদককে সরাসরি দেখা করতে বলেন তিনি।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি অবগত নই।’

মোবাইল ফোন উপহার দেয়ার বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়ে আমি জানি না সে বিষয়ে বৈধ-অবৈধ বলব কীভাবে? একান্ত জরুরি হলে আসেন, জেনে জানাব।’

এইচএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।