আরব আমিরাতের শ্রমবাজার খুলবে কবে?
দীর্ঘ আট বছর ধরে বন্ধ সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার। নানা কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর পরও সরকার বাংলাদেশিদের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের এই শ্রমবাজারটি উন্মুক্ত করতে পারেনি। যদিও এটি সহসাই খোলার ব্যাপারে ‘আশার আলো’ দেখছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদও দিচ্ছেন ‘সুখবর’র আভাস।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে দেশে ফিরেছেন মন্ত্রী। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজারটি নতুন করে চালুর অনুরোধ করেন ইমরান আহমদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আরব আমিরাত সরকারের সংশ্লিষ্টরা ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, এখন পর্যন্ত বৈঠক থেকে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার শিগগিরই শ্রমবাজারটি পুনরায় চালুর ইঙ্গিত দিয়েছে।
এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে কর্মীদের বাছাই ও নিয়োগের জন্য বাংলাদেশে কিছু শ্রমিক স্ক্রিনিং সেন্টার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য আমরা আশা করছি, দেশটির শ্রমবাজার আবারও দ্রুত চালু হবে।’
বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজারটিতে ১৯৭৬ সালের পর থেকে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭৬ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়। বর্তমানে এ বাজারে ১০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্মরত।
সংযুক্ত আরব আমিরাত, যে দেশের শ্রমবাজার বুনে দেয় অজস্র স্বপ্ন
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশিদের নেয়া বন্ধ করে দেয় আরব আমিরাত। পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ওয়ার্ল্ড এক্সপো-২০২০ এর আয়োজক হওয়ার দৌড়ে ২০১২ সালের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ দুবাইয়ের পক্ষে ভোট না দিয়ে মস্কোর (রাশিয়া) পক্ষে ভোট দেয়ার কারণেই ওই পদক্ষেপ নেয় আরব আমিরাত।
যদিও প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি পর্বে মস্কো বাদ পড়লে চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশ ভোট দেয় দুবাইকে এবং এতে দুবাই জয়লাভও করে। তবু তাতে বাংলাদেশের ওপর সন্তুষ্ট হয়নি আরব আমিরাত। শ্রমবাজার বন্ধই রেখে দেয় বাংলাদেশিদের জন্য।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার আরব আমিরাত সফর করলেও কোনো সুখবর মিলছিল না। তবে এবার আশার আলো দেখছেন বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এ আশার আলো জ্বলে ২০১৯ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ আমিরাত সফরে। তখন শ্রমবাজারটি বাংলাদেশিদের জন্য খুলে দেয়ার ইঙ্গিত দেন আবুধাবির যুবরাজ ও দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান। আমিরাতে ওয়ার্ল্ড সেন্টারে দুবাই এয়ার শো-২০১৯ এর ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ ইঙ্গিত দেন তিনি।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য শ্রমবাজার খোলার আহ্বান জানালে যুবরাজ নাহিয়ান ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেন, আপনার পরবর্তী আমিরাত সফরে আপনাকে এ প্রশ্নটি আর করতে হবে না।
সবশেষ গত জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে শারজাহতে নিজের বিদায়ী সংবর্ধনায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ডা. মোহাম্মদ ইমরান বলেন, ‘বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শ্রমবাজার আরব আমিরাত। তবে নানা কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে বিশাল এ শ্রমবাজারের দরজা বন্ধ। সব বাধা পেরিয়ে অবশেষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে।’
এদিকে বাংলাদেশিদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজারটি অনেক বছর বন্ধ থাকায় হতাশা ঝরছে কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টদের কণ্ঠে। তারা মনে করেন, ঢাকা এ বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে সরকার দ্রুত এ বাজার খুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ
এ বিষয়ে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজার বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক বিদেশে পাঠানো যাচ্ছে না। আমরা আরব আমিরাতের শ্রমবাজার পুনরায় চালু করতে এবং ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ধরে রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
বায়রার এ নেতা আরও বলেন, ‘প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫০ হাজার কর্মী নিয়োগের সক্ষমতা সংযুক্ত আরব আমিরাতের রয়েছে। বাজারটি শিগগির পুনরায় চালু করতে পারলে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হবে।’
শামীম জানান, বর্তমানে বাংলাদেশি নাগরিকদের কেবল পর্যটন, ব্যবসা এবং গৃহকর্মী (নারী) ক্যাটাগরির ভিসা দিচ্ছে আমিরাত। শ্রমিকদের ভিসা দিচ্ছে না দেশটির সরকার।
এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাজারে বাংলাদেশিদের জন্য সুখবর আসছে। দেশটির সাথে আমাদের নতুন করে আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। বাজারটিতে নতুন করে বাংলাদেশি শ্রমিক যাওয়ার সুযোগ পাবে বলে আশা করি।’
জেপি/এইচএ/এমকেএইচ