মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে সুখবর আসবেই

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। কিছু রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠানোর কারণে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে দেশটির সরকার।
তবে আলোচনার মাধ্যমে বাজারটি উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে দেশটি। কম অভিবাসন ব্যয়ে এবং অধিক সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে সম্পৃক্ত করাসহ বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করতে নভেম্বরে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। হঠাৎ করেই বৈঠক স্থগিত করে মালয়েশিয়া।
ফলে আবারও অনিশ্চয়তায় পড়ে যায় দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়া। তবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে শিগগিরই সুখবর আসবে।
বৈশ্বিক শ্রমবাজার, বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা, সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারীকর্মীদের বর্তমান অবস্থা, তাদের সুরক্ষায় ঢাকার তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জেসমিন পাপড়ি। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।
জাগো নিউজ : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটছেই না, কবে দেখব আশার আলো?
ইমরান আহমদ : মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের জন্য সুখবর আসবেই। কিছুটা দেরি হচ্ছে ঠিকই, তবে বাজারটি বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হবেই। পুরো পদ্ধতিটা ঠিক করবে মালয়েশিয়া। কোন প্রক্রিয়ায় কিংবা কত শ্রমিক নেবে- সেটাও তারা জানাবে।
জাগো নিউজ : সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে বাজারটি বন্ধ হয়েছে। নতুন করে কোন প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে?
ইমরান আহমদ : ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি ব্যবহার করতে আমি রাজি নই। এটা টাকা কামানোর ধান্দা। সিন্ডিকেট কিন্তু বাংলাদেশের তৈরি না। এটা মালয়েশিয়ার। অনলাইন প্লাটফর্ম যেটা আছে সেটাও তাদের। আমাদের হলে তখন তারা বলতে পারত। সিন্ডিকেটের কারণে বাজারটি আমরা বন্ধ করিনি। মালয়েশিয়া সরকার বন্ধ করেছে। যখন সিন্ডিকেট ছিল বা জি-টু-জি প্লাসে তিন লাখ মানুষ দেশটিতে প্রবেশ করেছে। জানি না কত টাকা করে দিতে হয়েছে।
জাগো নিউজ : কর্মী পাঠাতে নতুন প্রক্রিয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তাতে খরচ কেমন দাঁড়াবে?
ইমরান আহমদ : আমরা চাই কম খরচে বাংলাদেশিকর্মী বিদেশে পাঠাতে। সেখানে নিরাপদ পরিবেশে যেন তারা কাজ করতে পারেন। মালয়েশিয়া যাওয়ার খরচ দেড় থেকে দুই লাখ টাকা রাখতে পারলে আমি মনে করব শ্রমিকের প্রতি কমিটমেন্ট রাখতে পেরেছি।
জাগো নিউজ : শ্রমবাজারের জন্য কারা বেশি ক্ষতিকর?
ইমরান আহমদ : যারা পয়সার লোভী তারা বেশি ভয়ঙ্কর।
জাগো নিউজ : এক দেশে কাজ করতে গিয়ে কর্মীরা অন্যদেশে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি অবৈধপথে পালিয়ে ইউরোপে যাওয়ার পথে মৃত্যুবরণ করেছেন বেশকিছু বাংলাদেশি। তাদের ক্ষেত্রে কী বলবেন?
ইমরান আহমদ : এক দেশে কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের কর্মীরা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায়। এজন্য যাওয়ার পূর্বে একটা বন্ড সইয়ের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। কেউ উল্টাপাল্টা করলে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকবে। সম্প্রতি জাপানে চাকরিতে গিয়ে পালিয়েছে, কোরিয়া থেকেও পালিয়েছে। বিভিন্ন দেশে পালাতে গিয়ে রাস্তায় মারা যায় আমাদের ভাইয়েরা। অনেকের খবরও পাওয়া যায় না। বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে একটা নৌকায় ওঠে তারপর মারা যায়। অনেক সময় বিদেশগামীরা প্রশিক্ষণ নিতে চান না।
জাগো নিউজ : মধ্যপ্রাচ্য ও প্রচলিত শ্রমবাজারের বাইরে নতুন কোনো শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়েছে কি বাংলাদেশিদের জন্য?
ইমরান আহমদ : চীন, জাপান, কম্বোডিয়া, সেশেলসসহ বেশকিছু বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। মরিশাস চালু হবে। সুদান, উগান্ডা, পোলান্ড, জার্মানির সঙ্গেও আলোচনা চলছে।
জাগো নিউজ : কোন ধরনের কর্মী নিতে চায় চীন?
ইমরান আহমদ : চীন বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে। তারা যেকোনো গ্র্যাজুয়েট নেবে। তবে দুই বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অর্থাৎ গ্র্যাজুয়েশনের পর দুই বছর যেকোনো খাতে কাজ করার পর তারা চীন যেতে পারবেন। চীন কর্মীদের নিয়ে যাবে, থাকা-খাওয়া ফ্রি। সেখানে ট্রেনিং দিয়ে তারা চাকরি দেবে। কর্মীদের বেতনও বেশ।
জাগো নিউজ : সংযুক্ত আরব আমিরাতে শ্রমিক যাওয়া কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। অস্থিরতা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশেও। নতুন বাজার কি এসব বড় মার্কেটের বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে?
ইমরান আহমদ : দেখুন, মালয়েশিয়ার বাজার উন্মুক্ত হলে প্রায় তিন লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হবে। দেশটির উন্নয়নের জন্য তাদের অনেক কর্মী প্রয়োজন। মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা অনেক বেশি। এ বাজারে তিন-চার লাখ কর্মী পাঠানো সম্ভব হলে মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে যে ঘাটতি আছে তা কিছুটা হলেও পূরণ হবে।
জাগো নিউজ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের কিছুটা বদনামও রয়েছে...
ইমরান আহমদ : বিভিন্ন দেশে কাজ করা বাংলাদেশি কর্মীরা মাঝে মাঝে আন্দোলন করে থাকে। তবে দেশের বাইরে বাংলাদেশি কর্মীরাই সবচেয়ে ভালো বলে আমি মনে করি।
জাগো নিউজ : সম্প্রতি ব্রুনাই কিছু বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে...
ইমরান আহমদ : ব্রুনাইয়ে শ্রমবাজারটি নষ্ট করছে বাংলাদেশি দালালরাই। সুন্দর একটা জিনিস নষ্ট করেছে তারা। তবে ব্রুনাই যেসব দালালদের ফেরত পাঠিয়েছে তাদের সবকটাকে জেলে ভরব।
জাগো নিউজ : বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের ডাটাবেজ করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছিল পাঁচ বছর আগে। বাস্তবায়ন কত দূর?
ইমরান আহমদ : ডাটাবেজ নিয়ে আমরা এখনও পিছিয়ে আছি।
আমাদের পরিকল্পনা হলো- যারা বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তারা ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যারা কর্মী নেবে তারা ডাটাবেজ থেকে নেবে। বিদেশ গমনেচ্ছুরা টাকা জমা দেবে সরকারি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। ফলে দালালদের এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে পারব।
জাগো নিউজ : অতিরিক্ত অভিবাসন খরচই শ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি বিপদে ফেলছে। এ বিষয়ে আপনার ভাবনা জানতে চাই?
ইমরান আহমদ : অভিবাসন খরচ ছয়-সাত লাখ টাকার কাছে আমি যেতে দেব না। বিদেশে যেতে কোনো কর্মীর যাতে জমি বিক্রি করতে না হয় সেদিকটা অবশ্যই লক্ষ্য রাখব। সদিচ্ছা থাকলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা যায়। আমি বিশ্বাস করি এ খাতের সকল চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারব।
জেপি/এমআরএম/এমএআর/পিআর