সৌদি বেশি চাপ দিলে আমরা বলব ‘সরি’: প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী

ভাগ্যের অন্বেষণে কর্মী হিসেবে দেশের অনেক নারী সৌদি আরবে গেলেও তাদের ফিরে আসতে হচ্ছে নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে। অনেক নারী কর্মীকে লাশ হয়েও ফিরতে হচ্ছে স্বদেশে। তাদের নির্যাতিত-নিপীড়িত হওয়ার বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে উঠে আসায় এ নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ সরকার। এ নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধে দুই দেশের যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে নারী কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে ঢাকা।
সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, সৌদিতে বাংলাদেশি নারী কর্মী নির্যাতন ও তাদের ফেরত আসা শূন্যে চলে আসবে। পুরুষ কর্মী পাঠাতে হলে নারী কর্মীও দিতে হবে বলে সৌদি যে শর্ত ঝুলিয়ে সুবিধা নিচ্ছিল সে বিষয়ে মন্ত্রী বলছেন, তাদের এ ‘বুদ্ধি’ বুঝে ফেলেছে ঢাকা। তারা এক্ষেত্রে বেশি চাপ দিলে ‘সরি’ বলে ফেলবে বাংলাদেশ।
বৈশ্বিক শ্রমবাজার, বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা, সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী কর্মীদের বর্তমান অবস্থা, তাদের সুরক্ষায় ঢাকার তৎপরতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জেসমিন পাপড়ি। তিন পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ পড়ুন দ্বিতীয়টি।
জাগো নিউজ : সৌদিতে থাকা নারী কর্মীদের বিষয়ে সরকারের সবশেষ তৎপরতা…
ইমরান আহমদ : সম্প্রতি দুই দেশের যৌথ টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে নারী কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচনা হয়েছে। সেখানে বেশকিছু বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর ওই টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নারী কর্মী ফেরত আসার খবর মেলেনি। এর অর্থ বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর ফল আসতে শুরু করেছে। এসব সিদ্ধান্ত সৌদিতে নারী নির্যাতন ও তাদের ফেরত আসা শূন্যে নামিয়ে আনবে।
জাগো নিউজ : নারী কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন?
ইমরান আহমদ : আগে দেশ থেকে একজন নারী কর্মী পাঠালে সৌদি আরবের কোনো রিক্রটিং এজেন্সি তাকে নিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা জানতে পারতাম না। এবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যে এজেন্সি কর্মী পাঠাবে সৌদিতে, তার কাউন্টারপার্ট (ওপাশের পক্ষ) এবং যে মালিকের বাড়িতে নারী কাজ করতে যাবে, সেই মালিকের বিস্তারিত আমাদের কাছে থাকতে হবে। এতে করে কোনো নারী কর্মীর সাথে অনিয়ম হলে বা তারা কোনো অভিযোগ করলে আমরা নিজেদের দেশের রিক্রটিং এজেন্সির লাইসেন্স স্থগিত তো করবই, পাশাপাশি সৌদি আরবের সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সির কোনো আবেদনে সাড়া না দিতে আমাদের দূতাবাসকে নির্দেশনা দেওয়া হবে।
জাগো নিউজ : নির্যাতিত-নিপীড়িত নারী কীভাবে প্রতিকার পাবেন?
ইমরান আহমদ : সৌদি আরবে গৃহকর্মীদের জন্য ‘মুসানেদ সিস্টেম’ বিদ্যমান। এখন তারা নতুন একটি ডিপার্টমেন্ট করেছে, যার মাধ্যমে নারী কর্মী কোনো অভিযোগ দিলেই তারা সেটা বিবেচনায় নেবে। টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠকে এই কমিটমেন্ট সৌদি আরব করেছে। এছাড়া ভু্ক্তভোগী নারী কর্মীদের মামলা করার পথ সহজ হয়েছে। কোনো নারী কর্মীর অভিযোগ থাকলে তিনি যদি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চান তাহলে মামলা শেষ না হওয়া পর্যত ওই নারীকে সৌদি আরবে অবস্থান করতে হতো। যা একজন নারীর পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ তার নিরাপত্তা, থাকা-খাওয়ার ব্যাপার আছে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, নারীরা মামলা করে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ দূতাবাসকে দিয়ে আসতে পারবেন। এতে করে ওই মামলার দেখভাল বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে করা হবে।
জাগো নিউজ: মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে উন্নীত হতে যাওয়া বাংলাদেশকে কেন গৃহশ্রমিক হিসেবে নারী পাঠাতে হবে?
ইমরান আহমদ: যার শিক্ষা আছে তিনি গৃহশ্রমিক হিসেবে বিদেশ যাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যার শিক্ষা নেই, তাকে তো গৃহশ্রমিক হিসেবে যেতে হবে। তার যদি যাওয়ার প্রয়োজন থাকে, তাকে আটকাবে কে? বিদেশ যাওয়া তাদের অধিকার। তাদের অধিকার আমি কেন আটকাবো?
জাগো নিউজ : ২০১৫ সালে নারী কর্মী পাঠানো যখন শুরু হলো, তখন সুরক্ষার কথা না ভেবে এখন কেন সৌদি আরবের সাথে আলোচনা করতে হচ্ছে?
ইমরান আহমদ : আসলে সেই সময় প্রয়োজন হয়নি। আমরাও হয়তো সে সময় আশঙ্কা করিনি তাদের (নারীদের) কোনো সমস্যা হবে। বিষয়টা আমাদের হিসাবে ছিল না।
জাগো নিউজ: একজন পুরুষ কর্মী পাঠাতে হলে একজন নারী কর্মী পাঠাতেই হবে, সৌদি আরবের এমন অলিখিত শর্তের বিষয়ে কী বলবেন?
ইমরান আহমদ : সম্প্রতি এ ধরনের বুদ্ধি তারা (সৌদি) করছে। আমরা তাদের সাথে একমত নই। তবে ওরা বেশি চাপ দিলে আমরাও ‘সরি’ বলব। আমরাও ভিন্ন চিন্তা করব।
জাগো নিউজ : এই সমস্যা তৈরি হওয়ার পেছনে কোনো কূটনৈতিক দুর্বলতা?
ইমরান আহমদ : সৌদি আরবের সাথে আলোচনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক দূর্বলতা নেই। দুর্বলতা থাকলে এই সা্ম্প্রতিক বৈঠকের ফল এত দ্রুত পেতাম না। দুপক্ষ যত বেশি বৈঠকে বসবে তত কম সমস্যা হবে। সৌদি আরবের সাথে প্রায় এক বছর পরে বৈঠক হলো। বৈঠকটি মার্চ মাসে হওয়ার কথা থাকলেও হজসহ নানা কারণে সেটি নভেম্বরে হলো। সৌদি আরব কেন, যেকোনো দেশে শ্রমিকদের সমস্যা এলে তার মোকাবেলা করা হবে।
জেপি/এইচএ/এমকেএইচ