ক্যাটাগরিতে পিছিয়ে বেবিচক, বিপাকে দেশি এয়ারলাইন্স

রফিক মজুমদার
রফিক মজুমদার রফিক মজুমদার , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:০৩ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০১৯

মানের দিক থেকে বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ক্যাটাগরির অগ্রগতি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো। দূরপাল্লার লাভজনক রুটে ডানা মেলতে পারছে না তাদের উড়োজাহাজ। এ কারণে আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহারে বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় এখনও পিছিয়ে রয়েছে দেশি এয়ারলাইন্সগুলো।

অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয় এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবের পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার ক্যাটাগরি-২-এ অবস্থানের কারণে স্থানীয় এয়ারলাইন্সগুলো পিছিয়ে পড়ছে বলে ধারণা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে দেশীয় যাত্রী প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ২০ শতাংশের ওপরে। যা চলতি বছর আরও বেড়েছে। সামনের বছরেও এই প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বিশাল এই প্রবৃদ্ধির সিংহভাগই যাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ঝুলিতে। দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো এ বিষয়ে অনেক পিছিয়ে আছে। পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পেলে নিকট ভবিষ্যতে দেশীয় এয়ারলাইন্সের প্রবৃদ্ধির হার আরও কমবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ক্যাটাগরির ইতিবাচক পরিবর্তনের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া চলছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং ক্যাটাগরি-১-এ আমরা পৌঁছাতে পারব।

biman-03.jpg

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স বর্তমানে বাংলাদেশে সপ্তাহে ৩২৫ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিপরীতে দেশীয় ৪টি এয়ারলাইন্স মিলে মোট ২২২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। সে হিসাবে প্রতি সপ্তাহে ১০৩টি অর্থাৎ ৩২ শতাংশ ফ্লাইট কম চালাচ্ছে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন, বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে ৫৩টি দেশের প্লেন চলাচল চুক্তি রয়েছে। ওইসব দেশের বিভিন্ন উড়োজাহাজ সংস্থা বাংলাদেশে সপ্তাহে ৩২৫ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ভারতের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ৫৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইন্স ৭৮টি, মালয়েশিয়ার ৪২টি, সিঙ্গাপুরের ১৬টি, ভুটানের ৪টি, কাতারের ২৯টি, থাইল্যান্ডের ২১টি, পাকিস্তানের ৪টি, কুয়েতের ১২টি, সৌদি আরবের ৩১টি, শ্রীলংকার ৭টি, চীনের ১৬টি, বাহরাইনের ৫টি, আজারবাইজানের ৩টি এবং ওমানের এয়ারলাইন্স ৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে আন্তর্জাতিক রুটে সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বর্তমানে ১৫টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে মোট ১২০টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। এর মধ্যে কলকাতা রুটে ১৪টি, কাঠমান্ডুতে ৭টি, ইয়াঙ্গুনে ৪টি, কুয়ালালামপুরে ১৪টি, সিঙ্গাপুর সিটিতে ১২টি, ব্যাংককে ৭টি, লন্ডনে ৬টি, দোহায় ৪টি, দুবাইয়ে ৭টি, কুয়েত সিটিতে ৭টি, দাম্মামে ৭টি, রিয়াদে ৭টি, জেদ্দায় ১০টি, মাস্কাটে ৭টি এবং আবুধাবি রুটে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে তারা।

কী কারণে বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সসহ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, দেশি এয়ারলাইন্সের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গুণগত মানের দিক থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্সের তুলনায় একেবারে পিছিয়ে নেই দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। এভিয়েশন খাতে বাংলাদেশের উন্নতি আশাতীত।

biman-04.jpg

রিজেন্ট এয়ারওয়েজের সদ্য বিদায়ী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও এভিয়েশন এক্সপার্ট আশিষ রায় চৌধুরী এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের দেশের এয়ারলাইন্সগুলোর পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, কোনো এয়ারলাইন্সে পেশাদারিত্বের চর্চা হয় না। বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোতে কিছুটা পেশাদারিত্ব থাকলেও রাষ্ট্রায়ত্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এটি নেই বললেই চলে। সেফটি ম্যানেজমেন্ট, ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট এবং সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া একটি এয়ারলাইন্সের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এসবের ঘাটতি থাকলে এয়ারলাইন্স কখনও সফল হয় না।

তিনি আরও বলেন, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোতে শতভাগ পেশাদারিত্ব থাকায় অল্পতেই তারা এগিয়ে যায়। এসব কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো পিছিয়ে রয়েছে।

‘এরপর রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বেবিচকের ভূমিকা। ক্যাটাগরি পরিবর্তনে সংস্থাটির সক্ষমতা অনেক বড় বিষয়। পলিসিগত দিক থেকে বিদেশি এয়ারলাইন্স ও দেশীয় এয়ারলাইন্সের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের একটি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি থাকা দরকার। তাদের কাছে ভারসাম্যপূর্ণ নীতি না থাকায় বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো প্রয়োজনীয় সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে। অপরদিকে দেশীয় বেসরকারি সংস্থাগুলো সে তুলনায় সুবিধা পাচ্ছে না। এরপর রয়েছে অবকাঠামোগত নানা সমস্যা। বেবিচকের ক্যাটাগরি পরিবর্তন হলে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে’- মনে করেন এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ আশিষ রায় চৌধুরী।

এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতকে যথাযথ মানে উন্নীত করতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি। বাজারে টিকে থাকতে এটার কোনো বিকল্প নাই।’

আরএম/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।