রনি ও রাজুর শখের ঘড়ি
রনি ও রাজু। একজন স্বাভাবিক। অন্যজন অস্বাভাবিক। মানে, রনি সবার মতো কথা বলতে পারলেও রাজু পারে না। সে বাক প্রতিবন্ধী। রনির বয়স ৫ অথবা ৬ বছর হবে। আর রাজু বড়। তার বয়স ৭ এর কাছাকাছি। বাবা সুলতান পেশায় রিকশাচালক। মা থাকেন বাড়িতেই। তারা থাকে মহাখালী রেললাইনের ধারেই। বোন নেই তাদের। দুই ভাইয়ের মধ্যে কেউ স্কুল যায় না। সারাদিন তাদের সময় কাটে রেললাইনের আশপাশেই।
রোববার দুপুরে অফিস যাওয়ার উদ্দেশ্যে শ্যামলী থেকে লেগুনাযোগে মহাখালীতে নামার পরেই চোখ পড়ে তাদের দিকে। দূর থেকে অনেকক্ষণ দেখার চেষ্টা করছিলাম কি করছে তারা। কিন্তু স্পষ্ট বোঝা দেখা যাচ্ছিল না । একটু এগিয়ে গিয়েই দেখি দুজনে তাদের ভেঙে যাওয়া দুটি খেলনা ঘড়ি মেরামতের চেষ্টা করছে। দেখার জন্য আরো কাছে গেলাম। দেখলাম ঘড়ির ফিতা থেকে বডি আলাদা হয়ে গেছে। আর কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের একটি দড়ি দিয়ে ফিতার সঙ্গে বডি বেঁধে আগের অবস্থায় আনার চেষ্টা করছে তারা। তাদের এই মেরামত দৃশ্য দেখে ছবি তোলা ইচ্ছে হলো। তাদের সামনেই মোবাইল বের করে ছবি তুললাম কয়েকটি। কিন্তু একী, কোনো অনুভূতি নেই যেন তাদের। বেশ কয়েকটি ছবি তুললাম। তারপরও দেখলাম কেউ আমার দিকে তাকাচ্ছে না। বাধাও করছে না, আবার ছবি তোলার পোজও নিচ্ছে না। এরপর রাজু নামের শিশুটিকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কি। কোনো উত্তর নেই। তখন অবশ্য জানতাম না যে রাজু কথা বলতে পারে না। আবার জিজ্ঞেস করলাম, কি নাম তোমার। উত্তরে ছোট ভাই বলল, ওর নাম রাজু আর আমার নাম রনি। আমরা দুজনে ভাই। সে কথা বলতে পারে না। ও আচ্ছা। বলেই বললাম, ঘড়ির কি হয়েছে। সরাসরি উত্তর দিল রনি, দেখেন না কি হয়েছে।
সে বলল, এবার ঈদে দুজনে দুইটা ঘড়ি কিনেছি বিশ টাকা দিয়ে। আজকে সকালে ছিড়ে গেছে। তাই দড়ি দিয়ে বেঁধে ঠিক করছি।
আর কিছু কেনা হয়নি বলতেই, রনি বলল প্যান্ট কিনছি একটা। ওইটা টাইট হচ্ছে। ঈদের দিন পড়তে পারি নাই। টাইট মানে তার শরীরে প্যান্টটি বেশ চাপা হচ্ছে। আর রাজুর জামার পকেট নাই, বলেই দিল একটা হাসি। ঈদের দিন কেমন কাটলো তোদের, এমন প্রশ্নে রনি বলল, অনেকটা মাংস খাইছি ঈদের দিন।
স্কুল যাওনা কেন এই প্রশ্নে চুপ রনি। পাশ থেকেই একজন মধ্যবয়সী জানালেন, স্কুলে গেলে রেল লাইনে বসে খেলবে কে। তাদের জন্য যত কিছুই করেন। দুদিন পর ফিরে এসে তাদের এখানেই পাবেন।
তাদের সঙ্গে কথা শেষে, থাক গেলাম বলামাত্রই জুনিয়র (রনি)কয়টা টাকা দেন, খাবো বলে চেয়ে বসলো। আর এই সময়ের মধ্যে আমি গাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি। একটু ভাবার পর আবারো ফিরে গেলাম তাদের কাছে। সামর্থ অনুযায়ী খুব অল্প পরিমাণ টাকার একটা নোট দিলাম রনির হাতে। এরপর গাড়িতে উঠার সময় দেখি পেছন থেকে কে যেন জামা টানছে। ঘুরে দেখি রনি।
বললাম কি হলো, রনি বলল, রাজুকে (বড় ভাই) দিবেন না। বললাম, ওটা ভাগাভাগি করে নিস। চালাক রনি বলল, ওকে দিতে পারবো না। ওরে আপনি আলাদা টাকা দেন। এরই মাঝে গাড়িতে উঠে পড়লাম। বুঝলাম ছোটরা বুঝি একটু বেশিই এগিয়ে।
এমএএস/পিআর