বিবাহিতরা ছাত্রদলে অবমূল্যায়ন হলেই সংঘাত!
চলতি মাসেই গঠন হচ্ছে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি। বিবাহিত ছাত্রনেতাদের বাদ দিয়ে সংগঠনটির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাদের মূল্যায়ন করা হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
২৮ বছর পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন আর সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল নির্বাচিত হন। কাউন্সিলের পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি।
এরই মধ্যে গুঞ্জন ওঠে ছাত্রদলে বিবাহিত নেতাদের ঠাঁই হবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চার-পাঁচদিন অনশন করেন বিবাহিতরা। পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা।
সূত্র মতে, ছাত্রদলের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক, যিনি পরবর্তীতে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। মূলত তিনিই বিবাহিতদের ছাত্রদল থেকে বাদ দেয়ার ধোঁয়া তুলছেন। তার যুক্তি- বিবাহিত যারা পদপ্রত্যাশী তাদের চেয়ে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জুনিয়র। সে কারণে বিবাহিতদের পদায়ন হলে সভাপতি-সম্পাদকের সংগঠন চালাতে হিমশিম খেতে হবে। তাই সংগঠন আরও গতিশীল করতে বিবাহিতদের বাদ দিতে হবে। সাবেক ওই ছাত্রনেতা ছাড়া আর কারও আপত্তি নেই বিবাহিতদের কমিটিতে রাখতে।
ছাত্রদলের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদকপ্রার্থী হয়েছিলেন এমন এক নেতা জাগো নিউজের কাছে দাবি করেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমান ছাত্রদলকে সিন্ডিকেটমুক্ত করার চেষ্টা করলেও সংগঠনের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদক নিজের ব্যক্তিগত ফাউন্ডেশন হিসেবে মনে করছেন সংগঠনটিকে। নিজের ফাউন্ডেশন থেকে পছন্দ মতো কাউকে দেবেন, মন চাইলে কাউকে দেবেন না- এমন মানসিকতা তার। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক সুবিধা নিয়ে পদ দেয়ার অভিযোগ গণমাধ্যমে এসেছে। তিনি বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার জন্য মেকানিজম করছেন। কিন্তু বিবাহিতরা ছাত্রদলে থাকলে তার মনোবাসনা পূরণ হবে না।’
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিবাহিতদের অনশন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সভাপতিপ্রার্থী হয়েছিলেন এমন এক নেতা বলেন, ‘বিবাহিত, এটা তো কোনো ইস্যুই নয়। সুবিধাভোগী, ধান্দাবাজরা এসব কথা বলছেন। দলের দুঃসময়ে যারাই সক্রিয় রয়েছেন, তাদের মূল্যায়ন করা উচিত। নেতার বাসায় কে গেল তার ভিত্তিতে যদি এবার মূল্যায়ন হয় সেটা হবে চরম আত্মঘাতী। আমি মনে করি, মাঠের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না হলে সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হবে। এছাড়া নিজেদের মধ্যে বড় ধরনের কোন্দল তৈরি হতে পারে। ’
ছাত্রদলের সাবেক এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ছাত্রদল নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত হলে চরম সংঘাত সৃষ্টি হবে।’
এদিকে বিএনপির হাইকমান্ডের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, ছাত্রদল ছাত্রদের হাতে তুলে দিতে কাজ করা হচ্ছে। বর্তমান কমিটিতে বিবাহিতদের বাদ দেয়া হবে না। তবে পরবর্তীতে কমিটিতে বিবাহিতদের জায়গা হবে না, এটা নিশ্চিত।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, দুই ধাপে ছাত্রদলের কমিটি গঠন হবে। চলতি মাসের মধ্যে প্রথম ধাপ হবে। এতে ৫১ জন ঠাঁই পেতে পারেন। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপ চূড়ান্ত হবে। প্রথম ধাপেই বিবাহিতরা মূল্যায়িত হবেন। তবে ইউনিটগুলোতে বিবাহিতরা জায়গা পাবেন না।
তবে মূল্যায়ন নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে বিবাহিত ছাত্রনেতাদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, বিএনপি মহাসচিব আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা অনশন থেকে সরে এসেছি। এখন উনি কতটা ওনার সম্মান রাখতে পারবেন সেটা নিয়েও আশঙ্কা রয়েছে। কারণ, এর আগে যুবদলের আলাল-নীরব কমিটিতে মীর নেওয়াজ আলী পদবঞ্চিত হন। তখন নেওয়াজ আলী তার অনুসারীদের নিয়ে ওই কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোরতাজুল করিম বাদরুকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। তখনও মির্জা ফখরুল বিষয়টা মীমাংসার দায়িত্ব পান, পরবর্তীতে দেখা গেল বাদরুকে সহ-সভাপতি করা হলো আর মীর নেওয়াজ আলীকে সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক করা হলো। অর্থাৎ বাদরু মারও খেল, আবার পদও হারাল।
অনশন ভাঙাচ্ছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
তিনি আরও বলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুন্সী বজলুল বাসিত আঞ্জু দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হলে মহাসচিব এটার সমাধানের আশ্বাস দেন। কিন্তু সমাধান হয়নি। মহাসচিব আসলে আশ্বাস দিতে পারেন, সমাধান দিতে পারেন না। কারণ দলের সব সিদ্ধান্ত লন্ডনকেন্দ্রিক। লন্ডনকেন্দ্রিক যে সিন্ডিকেট রয়েছে তার বাইরে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। যার উৎকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হচ্ছে মহাসচিবের জেলার পাশের জেলা নীলফামারী জেলা বিএনপির কমিটি মহাসচিবকে না জানিয়ে ভাঙা হয়েছে। যে কারণে আমরা আমাদের মূল্যায়ন নিয়ে আশঙ্কায় আছি।
বিবাহিত ছাত্রনেতাদের আরেকজন বলেন, ‘বিভিন্ন কথাই শোনা যাচ্ছে। প্রথম ধাপের কমিটিতে আমাদের কয়েকজনকে মূল্যায়ন করা হবে। আবার শুনছি, প্রথম ধাপে মূল্যায়ন না হলে পরবর্তীতে আর মূল্যায়ন হবে না।’
বিবাহিত ছাত্রনেতাদের অন্যতম সাবেক স্কুলবিষয়ক সম্পাদক আরাফাত বিল্লাহ খান বলেন, ‘মির্জা ফখরুলের আশ্বাসে আমরা আশ্বস্ত। তবে মূল্যায়ন না হলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হব। আমাদের কাছে কর্মসূচির কোনো বিকল্প থাকবে না।’
ছাত্রদলের কমিটি গঠন প্রসঙ্গে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল বলেন, ‘কমিটি গঠনের জন্য আমরা কাজ করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের কমিটি গঠন হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুই ধাপে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হবে। প্রথম ধাপে বিভাগীয় পদ, ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম সম্পাদক পদগুলো পূরণ করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি পদ পূরণ করা হবে।’
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ছাত্রদলের বিবাহিত নেতারা মূল্যায়ন হচ্ছেন কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক দেশনায়ক তারেক রহমান। তিনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তবে বিবাহিতদের বিষয়ে এখনও তারেক রহমান কোনো সিদ্ধান্ত দেননি।
ছাত্রদলে বিবাহিতদের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কেএইচ/জেএইচ/এমএআর/এমএস