‘টোকাইদের জোটে’ পরিণত হয়েছে ২০ দলীয় জোট!

খালিদ হোসেন
খালিদ হোসেন খালিদ হোসেন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৯:৪৮ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। দফায় দফায় জোটের ভাঙন, নিয়মিত বৈঠক না হওয়া এবং অধিকাংশ শরিক দলের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

প্রায় চার মাস পর গত ১০ অক্টোবর ২০ দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে অংশ নেন জোটের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। অন্যদের মধ্যে যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের অধিকাংশই রাজনীতিতে অপরিচিত মুখ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের শীর্ষ এক নেতা বলেন, ‘২০ দলীয় জোট এখন রাজনৈতিক টোকাইদের জোটে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গত ১০ অক্টোবরের বৈঠকের দিকে তাকালে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়।’

সূত্র মতে, এ মুহূর্তে জোটে ২২টি দল দৃশ্যমান। দলগুলো হলো- ১. বিএনপি, ২. জামায়াতে ইসলামী, ৩. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, ৪. বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ৫. খেলাফত মজলিস, ৬. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)- খন্দকার লুৎফর রহমান অংশ, ৭. জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)- ব্যারিস্টার তাসমিয়া (প্রধান অংশ), ৮. ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি (ভগ্নাংশ), ৯. ন্যাশনাল পিপলস পার্টি- এনপিপি (ভগ্নাংশ), ১০. ইসলামি ঐক্য জোট, ১১. বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ১২. মুসলীম লীগ, ১৩. ডেমোক্রেটিক লীগ, ১৪. সাম্যবাদী দল, ১৫. বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ (ভগ্নাংশ), ১৬. ন্যাপ (ভাসানী), ভগ্নাংশ ১৭. জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ১৮. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (কাসেমী), ১৯. জমিয়তে উলামায়ে (ওয়াক্কাস), ২০. বাংলাদেশ জাতীয় দল, ২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি (ভগ্নাংশ) ও ২২. পিপলস লীগ।

জোটের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলু জোট ত্যাগের পর ২০ দলীয় জোটের নাম ধরে রাখতে তার দলের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে প্রধান করে নামমাত্র এনপিপি দলটি যুক্ত রাখা হয়েছে। একইভাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপের নিবন্ধিত অংশ জেবেল রহমান গাণি- এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়ার নেতৃত্বে জোট ত্যাগ করলে তাদের মহানগর পর্যায়ের নেতা শাওন সাদেকীকে ন্যাপ সভাপতি করে জোটে রাখা হয়েছে। ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা জোট ত্যাগের পর ক্বারী আবু তাহের নামের একজনকে এনডিপির চেয়ারম্যান করে জোড়াতালি দিয়ে জোট টিকিয়ে রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা জোট ত্যাগ করেছেন তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা সেভাবে না থাকলেও রাজনীতিতে তাদের পরিচিতি ছিল, ছিল অভিজ্ঞতার ঝুলিও। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পর বিকল্প হিসেবে যাদের জোটে রাখা হয়েছে তাদের সাংগঠনিক তৎপরতা তো দূরের কথা অভিজ্ঞতা পর্যন্ত নেই। ক্ষেত্রবিশেষ বলা হয়ে থাকে, এসব নেতা তাদের স্ত্রী-পরিবার ছাড়া কারও কাছে পরিচিত নন।’

জোট পরিস্থিতি নিয়ে আরেক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২০ দলীয় জোটের বাইরে ঐক্যফ্রন্ট নামে আরেকটি জোট গঠন করা হয়। ফলে ২০ দল অকার্যকর হয়ে পড়ে। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নসহ নানা কারণে জোটের এখন জীর্ণশীর্ণ অবস্থা। জোটের অন্যতম রূপকার শফিউল আলম প্রধান প্রয়াত হওয়ার পর জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জোটের কার্যক্রম থেকে দূরে রয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে বিষোদগার করছেন।’

“বিজেপি সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থও ফখরুলের ওপর দায় দিয়ে জোট ত্যাগ করেছেন। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ এবং বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ২০ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দল নিয়ে গঠন করেছেন ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। অলি-ইবরাহিম এখন নিয়মিত বৈঠকে যাচ্ছেন না। এছাড়া জাতীয় পার্টির কাজী জাফর জোটের মধ্যে যে আবেদন তৈরি করতে পেরেছিলেন, তিনি মারা যাওয়ার পর মোস্তফা জামাল হায়দার ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞ রাজনীতিক হলেও গত নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এখন আর সেভাবে সাড়া ফেলছেন না। পিপলস লীগ ২০ দলের বৈঠকে নিয়মিত আসে না। শোনা যায়, সাম্যবাদী দলের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হয়েছেন। একমাত্র সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে দলটি। একই অবস্থা ডেমোক্রেটিক লীগের। সাধারণ সম্পাদক দিয়ে চলছে দলটি।”

জোটের অপর এক নেতা বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জোটের বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্ব-স্ব দলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু মাত্র পাঁচটি দল কর্মসূচি পালন করে। দলগুলো হলো- বাংলাদেশ জাতীয় দল, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও ন্যাপ (ভাসানী)।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় চার মাস পর আবার জোটের বৈঠক হলো। এখন থেকে এ বৈঠক নিয়মতি হবে বলে জোটের শীর্ষ নেতারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। এছাড়া জোটের সংস্কারের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।’

জোটের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় দল ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর জোটভুক্ত হয়। এর আগেও আমরা সমমনা দল হিসেবে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের সকল কর্মসূচিতে সমর্থন প্রদান করেছি। জোটের বহু দল থেকে আমরা সর্বাধিক প্রোগ্রাম করেছি। গত নির্বাচনের পর ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোটের প্রত্যেকটি দল নিজস্ব কর্মসূচি পালন করবে। আমরা ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ অন্যান্য সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চারটি প্রোগ্রাম করেছি।’

তিনি বলেন, ‘সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমরা জোটের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও করব।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘জোট সক্রিয় আছে। সক্রিয় আছে বলেই আগামী ১৫ অক্টোবর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।’

জোটের মধ্যে সংস্কারের ভাবনা আছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈঠকে কেউ এমন প্রস্তাব করেননি। সংস্কার বলতে কী বোঝায় সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। তবে আমি শুনেছি, আরও কয়েকটি ইসলামী দল জোটভুক্ত হবে শিগগিরই।’

ন্যাপ (ভাসানী) চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জোট যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমরা আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলে রাজপথে নেমে এ সরকারের পতন ঘটাব।’

কেএইচ/এমএআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।