‘ডাম্পিং স্টেশনে’ বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ!
‘ডাম্পিং স্টেশন’ মূলত পুলিশের জব্দ করা গাড়ি রাখার স্থান। ঢাকার রাস্তায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে প্রতিদিনই কিছু যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নিয়ে যাওয়া হয় ডাম্পিং স্টেশনে। রাজনৈতিক মহলেও এখন ‘ডাম্পিং স্টেশন’ শব্দ দুটি বেশ আলোচিত।
মূলত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদকে ‘ডাম্পিং স্টেশন’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, নিয়মিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক না হওয়া এবং দলের সাংগঠনিক কোনো দায়িত্ব না থাকায় এ ফোরামের অধিকাংশ সদস্য একপ্রকার অস্বস্তিতে ভুগছেন। নিজেদের ‘ডাম্পিং স্টেশনের’ সাথে তুলনা করে উপদেষ্টা ফোরামের নিয়মিত বৈঠকের তাগিদ অনুভব করছেন অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা জাগো নিউজকে বলেন, ‘দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে কয়েকজন মারা গেছেন। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে সেভাবে আন্তঃযোগাযোগও নেই। এমনও কেউ কেউ রয়েছেন যারা জানেন না উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সংখ্যা কত? চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার আগে দু-একটি মিটিং করেছেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে, কিন্তু তিনি কারাবন্দি হওয়ার পর সেভাবে আর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়নি।’
‘এছাড়া উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নেই কোনো সাংগঠনিক দায়িত্ব। নিয়মিত বৈঠক না হওয়ায় সদস্যরা দলের জন্য সেভাবে ভূমিকাও রাখতে পারছেন না।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের অনেক সদস্য রয়েছেন যারা ইতোপূর্বে দল ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা অর্জন করলেও উপদেষ্টা পরিষদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে তারাও নিষ্ক্রিয়। ফলে একধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। কেউ বলে থাকেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ হলো ডাম্পিং স্টেশন। আবার কেউ বলেন, নেতাদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। গুটিকয়েক রয়েছেন যারা নিজেদের রাজনৈতিক মেধা আর প্রজ্ঞা দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন।’
দলীয় সূত্র অনুযায়ী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন- ১. বেগম সারওয়ারী রহমান, ২. রিয়াজ রহমান, ৩. হারুনুর রশীদ মুন্নু, ৪. মুশফিকুর রহমান, ৫. এ জে মোহাম্মদ আলী, ৬. ফজলুর রহমান পটল (মৃত্যু), ৭. কবির হোসেন, ৮. উকিল আব্দুস সাত্তার, ৯. লুৎফর রহমান খান আজাদ, ১০. আখতার হামিদ সিদ্দিকী, ১১. সাবিহ উদ্দিন আহমে, ১২. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, ১৩. আমানউল্লাহ আমান, ১৪. মিজানুর রহমান মিনু, ১৫. মশিউর রহমান, ১৬. আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ১৭. গাজী মাজহারুল আনোয়ার, ১৮. মাহবুবুর রহমান, ১৯. আ ন হ আখতার হোসেন, ২০. মাজেদুল ইসলাম, ২১. জাফরুল হাসান, ২২. জয়নুল আবেদিন ফারুক, ২৩. জয়নাল আবেদীন, ২৪. মনিরুল হক চৌধুরী, ২৫. কামরুল ইসলাম, ২৬. সৈয়দা ওয়াহিদুল আলম, ২৭. হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, ২৮. ফজলুল হক আসপিয়া, ২৯. নুরুল হুদা (মৃত), ৩০. সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, ৩১. এ এস এম আব্দুল হালিম, ৩২. মো. আব্দুল কাইয়ুম, ৩৩. খন্দকার শহিদুল ইসলাম, ৩৪. এস এম জুহুরুল ইসলাম, ৩৫. ইসমাঈল জবি উল্লাহ, ৩৬. সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, ৩৭. মো. আব্দুর রশীদ সরকার, ৩৮. মুহাম্মদ হায়দার আলী, ৩৯. জিয়াউর রহমান খান, ৪০. তাজমেরী ইসলাম, ৪১. শাহিদা রফিক, ৪২. আব্দুর রেজ্জাক খান, ৪৩. রোজি কবির, ৪৪. গোলাম আকবর খোন্দকার, ৪৫. কাজী আসাদুজ্জামান (মৃত), ৪৬. কবির মুরাদ, ৪৭. মো. শাহজাহান মিয়া, ৪৮. এ এ কে একরামুজ্জামান, ৪৯. ফজলুর রহমান, ৫০. হাবিবুর রহমান হাবিব, ৫১. আতাউর রহমান ঢালী, ৫২. নাজমুল হক নান্নু, ৫৩. তাহমিনা রুশদীর লুনা, ৫৪. এনামুল হক চৌধুরী, ৫৫. সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, ৫৬. অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ৫৭. বিজন কান্তি সরকার, ৫৮. সঞ্জিব চৌধুরী, ৫৯. এম এ হক সিলেট, ৬০. তৈমুর আলম খন্দকার, ৬১. আফজাল এইচ খান, ৬২. কামরুল মনির, ৬৩. বোরহান উদ্দিন, ৬৪. আব্দুল বায়েজ ভূঁইয়া, ৬৫. আফরোজা খান রিতা, ৬৬. আব্দুস সালাম, ৬৭. মঈনুল ইসলাম খান শান্ত, ৬৮. মোহাম্মদ শাহজাদা মিয়া, ৬৯. এস এম ফজলুল হক, ৭০. এম এ লতিফ খান, ৭১. মো. আব্দুল কুদ্দুস, ৭২. সৈয়দ আলমগীর হোসেন এবং ৭৩. এ কে এম আমিনুল হক।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘নির্বাহী কমিটিতে পদের সংখ্যা কম থাকায় দলের সিনিয়র নেতাদের উপদেষ্টা পরিষদ বা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে রাখা হয়। দু-চারবার বৈঠক হয়েছে উপদেষ্ট পরিষদের। তবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দেখেছি, উনি সবাইকে না হলেও বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকজন সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, পরামর্শ নিতেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান অনেক দূরে থাকেন, উনি ফোনে প্রয়োজনমতো সবার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এখন দলের স্থায়ী কমিটি চাইলেও আমাদের মতামত নিতে পারেন, এতে গঠনতন্ত্রে কোনো বাধা নেই।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক হয়, নির্বাহী কমিটির বৈঠক হয়, কিন্তু আমরা তো এখন একটু বিপদে আছি। তারপরও আমি মনে করি, উপদেষ্টা পরিষদ ও ভাইস চেয়ারম্যানদের একটা যৌথ মিটিং হওয়া উচিত।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার বলেন, ‘আমরা তো মনে করি, সভা ম্যাডাম করেন, অনেক সভা হয়েছে, সেভাবে তো খবর বের হয় না।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটা পলিটিক্যাল পার্টি যত বেশি সভা করবে, তত বেশি সচল থাকবে। তাছাড়া উপদেষ্টা সবাই যে পলিটিক্যালি ইনভলব তা নয়। টেকনোক্র্যাট উপদেষ্টাও আছে। উপদেষ্টা তো ওইভাবে পার্টির এক্সিকিউটিভ কমিটি নয়। কোনো একটা বিষয়ে একজন শিক্ষাবিদের উপদেশ নেয়া যেতে পারে। কোনো একটা বিষয়ে একজন কালচারাল লাইনের উপদেশ চাওয়া যেতে পারে। প্রশাসনিক বা সামরিক লাইনের কারও উপদেশ চাওয়া যেতে পারে। রেগুলার মিটিং তো উপদেষ্টাদের কম হয়। এটা আওয়ামী লীগেরও কম হয়।’
‘বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সভা ম্যাডামও করেছেন। ম্যাডাম কারাগারে যাওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও কয়েকবার করেছেন। উপদেষ্টা ও ভাইস চেয়ারম্যানদের নিয়ে অনেক মিটিং করা হয়েছে।’
বিজন কান্তি বলেন, ‘নিয়মিত মিটিং হওয়া উচিত। এখন তো কোনো মিটিংই আমাদের পলিটিক্যাল পার্টিগুলোতে সেভাবে হয় না। স্ট্যান্ডিং কমিটি ছাড়া বাকিদের প্রয়োজন অনুযায়ী মিটিং হয়।’
উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠক হয় কি-না, জানতে চাইলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, ‘না নিয়মিত হয় না। ম্যাডাম নাই তো, আমরা তো ম্যাডামের উপদেষ্টা।’
তিনি বলেন, ‘নিয়মিত বৈঠক হওয়া উচিত। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে সেটা হয় না। স্ট্যান্ডিং কমিটির নিয়মিত বৈঠক হয়। অনেক কিছুই তো হওয়া উচিত। যে দেশে ভোট হয় আগের রাতে সে দেশে অনেক অনিয়মই তো হয়।’
কেএইচ/এমএআর/জেআইএম