প্রশাসনেও আসছে ‘শুদ্ধি’ অভিযান
মাসুদ রানা মাসুদ রানা , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৫৮ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯
বিভিন্ন ক্ষেত্রে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে সরকার। টেন্ডারবাজি, জুয়া, দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের নেতারা গ্রেফতার হচ্ছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই শুদ্ধি অভিযান আরও বিস্তৃত হবে।
সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযান জনপ্রশাসনেও আসছে, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, সমাজের অসঙ্গতি এখন দূর করব। একে একে সব ধরতে হবে। জানি কঠিন কাজ কিন্তু আমি করব।
দুর্নীতির অভিযোগে ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন ক্যাসিনোগুলোতে অভিযান চলছে। অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণের যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। পাশাপাশি তার মালিকানাধীন রাজধানীর ফকিরাপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থসহ ১৪২ জনকে আটক করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
গত শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ক্লাবে অভিযান চালিয়ে এর সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শফিকুল আলম ফিরোজসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে র্যাব।
একই দিন রাজধানীর গুলশানের নিকেতনের অফিসে অভিযান চালিয়ে জি কে বি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমকে গ্রেফতার করে র্যাব। অভিযানে এক কোটি ৮০ লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ১৬৫ কোটি টাকার ওপরে এফডিআর (স্থায়ী আমানত) পাওয়া যায়।
জি কে শামীম সচিবালয়, র্যাব হেড কোয়ার্টার, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, পঙ্গু হাসপাতালসহ বড় বড় ১৭ প্রকল্পের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ করছেন। অভিযোগ উঠেছে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে এসব কাজ বাগিয়েছেন শামীম।
প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে জি কে শামীমকে সরকারের বিভিন্ন কাজের টেন্ডার পেয়েছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা নিয়ে তো আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, ভাবা হচ্ছে। আমাদের তো নির্বাহী ইশতেহার রয়েছে- আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। সে হিসেবেই আমরা ব্যাপারটি দেখছি। একটা সময় নেয়া হয়েছে, আমরা সবগুলোই দেখব ইনশাআল্লাহ।’
শুদ্ধি অভিযান কী প্রশাসনেও আসছে- জানতে চাইলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা খুব শক্তভাবে এটা করব। আমরা তরুণদের ওপর যথেষ্ট নজর রাখছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত...তাহলে তো বিষয়গুলো এসেই যাচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মানুষের জীবন মান বাড়াতে চাই। অবকাঠামোগত উন্নয়ন আমরা করছি। ব্যাপকভাবে কাজগুলো করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি একটা সমস্যা। এটা কারা করছে, কীভাবে করছে। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রত্যেকটি সেক্টরকে ধরা হবে, সেটা ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।’
‘সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, সেজন্য কার্যকরী ভূমিকা নেয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে, যেটা দৃশ্যমান হয়েছে। এটা আরও ব্যাপকভাবে দেখা যাবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান নিজের ঘর থেকেই শুরু হয়েছে, এটা মহত্মের পরিচয়। যেখানে যেটা পাওয়া যাবে, সেখানেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রশাসনের অনেকে মনে করতে পারেন, যা করছেন কেউ হয়তো দেখছে না। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।’
প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, দুর্নীতির বিষয়টি তো আছেই। সাম্প্রতিক সময়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নারী কেলেঙ্কারির বিষয়টিও জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। অনেকের বিরুদ্ধেই নৈতিক স্খলনের অভিযোগ উঠছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির চোখে পড়ছে না। এ অবস্থায় কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে উঠছেন।
গত মাসের (আগস্ট) শেষ দিকে জামালপুরের ডিসি আহমেদ কবীরের আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে আহমেদ কবীরের সঙ্গে তার অফিসের এক নারীকর্মীকে অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখা যায়। ওই ঘটনায় জামালপুরসহ সারাদেশের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তোলপাড় চলে প্রশাসনে। এই ঘটনা পুরো প্রশাসনকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়।
পরে প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে আহমেদ কবীরকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
এর আগে বিয়ে না করে বান্ধবীকে নিয়ে সংসার করার অভিযোগ ওঠে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজের বিরুদ্ধে।
আরএমএম/জেএইচ/পিআর