প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চিন্তিত মন্ত্রণালয়-অধিদফতর


প্রকাশিত: ০৬:৪৩ এএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রাজধানীসহ সারাদেশের ২৩টি কেন্দ্রে স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই সর্বাত্মক প্রস্তুুতি সম্পন্ন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক মোট ৮৪ হাজার ৭৮৪ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।

সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেক্টরের আনুমানিক প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী পরীক্ষার দিন কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকা ও ঢাকার বাইরের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে যাবেন। ইতিমধ্যেই কঠোর গোপনীয়তা ও নজরদারির মধ্যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপার কাজ শেষ হয়েছে।

সার্বিক প্রস্তুুতি সম্পন্ন তবুও দুঃশ্চিন্তামুক্ত হতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত দু’দিনে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এর এক কর্মচারীসহ সাতজন গ্রেফতার হওয়ার ঘটনাটি তাদের অধিকমাত্রায় ভাবিয়ে তুলেছে। গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারকৃতরা ওই প্রশ্নপত্র পরীক্ষার্থীদের কাছে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছে।

পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও তদারকির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত স্বাস্থ্য সেক্টরের একাধিক দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কমকর্তারা ঘনিষ্ঠজনদের কাছে তাদের উদ্বেগ জানিয়ে বলছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের চিন্তায় তারা একাধিক সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে রেখেছেন। এতো কঠোর গোপনীয়তা ও নজরদারির পরও প্রশ্নপত্র ফাঁস কিংবা ফাঁসের গুজব ছড়ানো হবে নাতো?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তা মঙ্গলবার জাগো নিউজকে জানান, খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চিন্তিত। তিনি সার্বক্ষণিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে র্যাব, এসবি, ডিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে সর্তক দৃষ্টি রাখার অনুরোধ জানাচ্ছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে চলতি বছরে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে কেন্দ্রীয়ভাবে আগামী শুক্রবার রাজধানীসহ সারাদেশে এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ১০০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নপত্রে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সেও এ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মোট ১০০ নম্বরের এ পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যায় ২০, রসায়নবিদ্যা ২৫, জীববিদ্যা ৩০, ইংরেজি ১৫ ও সাধারণ জ্ঞানে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে নতুন অনুমোদনপ্রাপ্ত মুগদা মেডিকেল কলেজের ৫০টি আসনসহ মোট ২৪টি সরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৭৪৪টি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতিমধ্যেই প্রশ্নপত্র ছাপার কাজ সম্পন্ন করে হিসাবনিকাশ শেষে তা সিলগালা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কাছে সিলগালা প্রশ্নপত্র পুলিশি প্রহরায় বৃহস্পতিবার সকালে হস্তান্তর করা হবে। আর ঢাকার কলেজগুলো শুক্রবার পরীক্ষার দিন সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে প্রশ্নপত্র হলে নিয়ে যাবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নানের কাছে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সর্বাত্মক প্রস্তুুতি সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার বন্ধের নির্দেশনা প্রদান  করা হয়েছে। কোনক্রমেই যেন কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস বা ফাঁসের গুজব ছড়াতে না পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

তিনি জানান, প্রতারণা প্রতিরোধে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা কন্ট্রোল রুম খুলেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগের টেলিফোন নম্বরগুলো হলো : ৮৮১৮৭৩৬,৮৮১৯৩৫৩,৮৮২৫৪০০, মুঠোফোন ০১৫৫৫৫৫৫১৬৭ ও ফাক্স ৯৮৮৬৬১২। কোন  প্রতারকচক্রের সন্ধান পেলে এ নম্বরে জানাতে অনুরোধ জানান তিনি।

প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সর্বাত্মক প্রস্তুুতি ও নজরদারি রয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।

এমইউ/এসএইচএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।