সুবিধাবাদীদের ‘গাত্রদাহ’ জাপায়
জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলটির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জি এম কাদের) দায়িত্ব পাওয়া এবং বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের পদোন্নতি সুবিধাবাদীদের ‘গাত্রদাহ’ বলে মনে করেন দলটির নেতারা।
তাদের মতে, জাতীয় পার্টিতে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই। দলের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। বিভিন্ন সময় দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের অনুসারী পরিচয়ে সুবিধাবাদী একটি গ্রুপ সক্রিয়। তারা সবসময় এবং যেকোনো উপায়ে সুবিধা নিতে চায়। এজন্য তারা দলের শীর্ষপর্যায়ে বিভক্তির চেষ্টা করেন। কিন্তু তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, দলের শীর্ষ ওই তিন নেতার মধ্যে কোনো দূরত্ব নেই- এমন মত জাপা নেতাদের।
আরও পড়ুন >> জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আর বেচাকেনা চলবে না
গত ২২ মার্চ এক সাংগঠনিক নির্দেশে জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি দেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ওই সাংগঠনিক নির্দেশে বলা হয়েছিল, যেহেতু কাদের পার্টি পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে এবং তিনি পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন, পার্টির সিনিয়র নেতারাও তার নেতৃত্বে সংগঠন পরিচালনা করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এ অবস্থায় সংগঠনের স্বার্থে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব এবং কো-চেয়াম্যানের পদ থেকে জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হলো।
পরদিন বিরোধীদলীয় উপনেতার পদ থেকেও অব্যাহতি দেয়া হয় জি এম কাদেরকে। গত ৪ মে রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
গত ৯ মে জাতীয় পার্টির আট নেতাকে সাংগঠনিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। অযোগ্যদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে পদত্যাগ করেন জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
আরও পড়ুন >> জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের
দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জি এম কাদেরকে যেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান না করা হয় সেজন্য ওই সুবিধাবাদী গ্রুপটিও তৎপরতা চালায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর জি এম কাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে গ্রুপটি। যারা নিজেদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের নাম ভাঙিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, চেয়ারম্যানের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে একটা সুবিধাবাদী গ্রুপ আছে। যারা নিজেদের সুবিধায় টান পড়লে পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার চালান। তারাই এখন পার্টির ভেতরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। তবে কোনো লাভ নেই, সারা দেশের জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষে আছেন।
সুবিধাবাদী গ্রুপের এমন তৎপরতার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন না জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, লিখিত বা অলিখিতভাবে এমন অভিযোগ না পাওয়ায় গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমার কাছে কেউ কখনও এমন অভিযোগের কথা উল্লেখ করেননি।
‘সবাই আমাকে পছন্দ করবে- এমনও কারণ নেই। আমি এটাকে কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। সমালোচনা সবাই করতে পারে, অধিকার আছে। অফিসিয়ালি আমার কোনো সমালোচনা না হলে সেটাকে আমলে নেয়ার কোনো কারণ দেখি না।’
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি পার্টির কাজে কোনো অনিয়ম বা ত্রুটি দেখছি না। একটার পর একটা সভা হচ্ছে, সামনে প্রেসিডিয়াম সভা আছে। চারদিনের বর্ধিত সভাও আছে।’
আরও পড়ুন >> স্বাক্ষর জালের আশঙ্কায় এরশাদের জিডি
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, পার্টির চেয়ারম্যান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই। সুবিধাবাদী মহল এটা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিছু সুবিধাবাদী আছেন পার্টিতে। তারা নিজেদের অনেক যোগ্য মনে করেন। তারাই বিভিন্ন সময় খেলাধুলা করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘জি এম কাদের সাহেব ভদ্রলোক। তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতা তার পক্ষে। সুবিধাবাদী গ্রুপে আছেন হাতেগোনা কয়েকজন। আগেও পার্টির চেয়ারম্যানকে (এরশাদ) নিয়ে তারা ষড়যন্ত্র করেছেন। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে (জি এম কাদের) নিয়েও তারা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র ধোপে টিকবে না।’
এইউএ/এমএআর/এমএস