ফেব্রুয়ারি এলেই জাগ্রত হয় চেতনা!
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১১টা। রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে দিয়ে জগন্নাথ হল ও টিএসসি থেকে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল ও রিকশা দ্রুতবেগে ছুটে চলেছে। হঠাৎ চোখে পড়লো শহীদ মিনারের উপর দিয়েই সজোরে ছুটে চলছে মোটরসাইকেল। মূল বেদির অদূরে এক জোড়া উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণী একে অপরকে জড়িয়ে ধরে বসে খোশগল্পে ব্যস্ত।
পাশেই স্কুল কলেজের পোশাক পরিহিত ছেলেমেয়েরা সে দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। ভবঘুরেরা সটান হয়ে শুয়ে আছে। শহীদ মিনারের পাদদেশে বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস্ কোম্পানির মার্কেটিং রিপ্রেজেনটিটিভরা ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে একজন আরেকজনকে বলছে, ‘আমার কোম্পানির ওষুধ লিখেছে তোমার ডাক্তার’।
অদূরে দাঁড়িয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আমড়া খাচ্ছেন। শহীদ মিনারের পূর্বদিকের রাস্তার ফুটপাতে সাইনবোর্ডে ‘শহীদ মিনার এর পবিত্রতা রক্ষায় এ স্থানে প্রসাব-পায়খানা ও ময়লা আবর্জনা ফেলা নিষেধ’ লেখা চোখে পড়লো।
পুলিশ সদস্যরা যেখানটাতে দাঁড়িয়ে তার অদূরেই হাইকোর্টের ২০১০ সালের ২৫ আগস্ট বিচারপতি মমতাজউদ্দিন আহমেদ ও বিচারপতি নাঈমা হায়দার এর দেয়া আদেশ সম্বলিত সাইনবোর্ড ঝুলছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা প্রতিদিনই নষ্ট হচ্ছে।
ওই এলাকা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারীদের কয়েকজন জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শুধু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই চেতনা জাগ্রত হয়। শহীদ মিনারের প্রতি ভালবাসা উপচে পড়ে। একমাস সচেতন থাকলেও বাকি ১১ মাস সবাই যেন অচেতন থাকে। পুলিশের চোখের সামনে অসামাজিক কার্যক্রম চলে। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস্ কোম্পানি শহীদ মিনারকে মোটরসাইকেল স্ট্যান্ড বানিয়ে নিয়েছে। প্রায়শই মোটরসাইকেল নিয়ে শহীদ মিনারে চলাচল করে। যা ভীষণ দৃষ্টিকটূ ও শহীদদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধার শামিল বলে তারা মন্তব্য করেন।
হাইকোর্টের বিচারপতিদ্বয়ের নির্দেশাবলিতে লেখা আছে- ভাষা আন্দোলনের শহীদদেও স্মৃতি রক্ষার্থে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার জন্য সরকারকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্ধারিত এলাকায় কোন অসামাজিক কার্যকলাপ কিংবা ভবঘুরেরা অবস্থান বা চলাচল করতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক পাহারাদার নিয়োগ করতে হবে।
আরো লেখা; মূল বেদিতে কোন প্রকার মিটিং, মিছিল, পদচারণাও আমরণ ধর্মঘট যেন না করতে পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় পূর্ত মন্ত্রণালয় ও সিটি কর্পোরেশনের ৩ জন করে মোট ৬ জন পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করতে হবে। এছাড়াও পবিত্রতা রক্ষা ও সম্মান প্রদর্শনে বিভিন্ন নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস এলেই কেবল সবার তৎপরতা চোখে পড়ে।
এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি