আতঙ্কে নার্সিং অধিদফতরের দুর্নীতিবাজরা
নার্সিং ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ‘নয়-ছয়’ করে ১৮ শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তিতে তথ্যগত গরমিলের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি।
এক যুগ্ম সচিব ও এক উপ-সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তদন্তের জন্য ২০ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হলেও অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের জন্য কমিটির আরও সময় প্রয়োজন বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে আবেদন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন >> পাস না করেও ১৭ শিক্ষার্থী ভর্তি!
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, ইতোমধ্যে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। নার্সিং কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার সুরাইয়া বেগমের জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে বিভিন্ন নার্সিং ইনস্টিটিউটে ১৮ শিক্ষার্থী ভর্তিতে গরমিলের তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা নার্সিং কাউন্সিলের মহাপরিচালক ও ভর্তি কমিটির সভাপতি তন্দ্রা শিকদারের স্বাক্ষর ও সুপারিশে ভর্তি হয়েছেন। তারা কীভাবে ভর্তি হলেন, তা খতিয়ে দেখতে নার্সিং অধিদফতরে ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ভর্তি কমিটির (১০/১১ সদস্যের) সকল সদস্য, যেসব ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে সেখানকার কর্মকর্তা, বিটিসিএল ও অভিযুক্ত ১৮ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলতে হবে। ভর্তি কমিটির অনেক সদস্য ইতোমধ্যে এলপিআরে চলে গেছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। তদন্তের অংশ হিসেবে কমিটির সদস্যরা আগামী রোববার নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি অধিদফতরে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন >> নার্সকে যৌন হয়রানি : কী আছে তদন্ত প্রতিবেদনে?
তদন্ত কমিটির সদস্যরা ভর্তি সংক্রান্ত সব তথ্য-উপাত্ত খতিয়ে দেখতে অধিদফতরে আসার খবরে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা আতঙ্কে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, গত কয়েকদিন ধরে প্রভাবশালী ও চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ভর্তিসহ বিভিন্ন ফাইল নিয়ে ঘনঘন মহাপরিচালক ও পরিচালকের (শিক্ষা) দফতরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে না সাপ বেরিয়ে পড়ে অর্থাৎ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের তদন্ত করতে গিয়ে অন্যান্য খাতের যেমন, দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থবরাদ্দ, ছুটি ইত্যাদি বিষয়ের দুর্নীতি না বেরিয়ে পড়ে সে ব্যাপারে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, নার্সিং অধিদফতরের অবৈধ অর্থ লেনদেনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এতদিন তা খতিয়ে দেখা হয়নি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবেদনগুলোর সত্যতা যাচাই-বাছাই করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক গতকাল (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে নার্সিং অধিদফতরের শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরলে তিনি বলেন, নার্সিং সেক্টরে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি বরদাশত করা হবে না। তদন্তে প্রমাণিত হলে অবশ্যই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরও পড়ুন >> বাবার বয়সী লোকটি আমাকে বিছানায় পেতে চেয়েছিলেন
তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, শিক্ষার্থী ভর্তিতে যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদের অনিয়ম ও তথ্যে গরমিল প্রায় একই ধরনের। এক্ষেত্রে অনলাইনে ফরম পূরণের সময় কোনোপ্রকার তথ্যবিভ্রান্তি হয়েছে কি না, তাও দেখা হবে। তবে এ তদন্ত সম্পন্ন করতে বেশ সময় লাগবে বলে ওই সদস্য জানান।
এমইউ/এমএআর/পিআর