বাড়তি করের ভয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ তোলার হিড়িক

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ২০ জুন ২০১৯

২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে বর্ধিত হারে কর কাটা হবে। এ ভয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ তুলতে গ্রাহকের হিড়িক লেগেছে।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় গিয়ে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। তাদের বেশির ভাগই এসেছেন সুদের টাকা তুলতে।

এমনই এক গ্রাহক সুবীর চক্রবর্তী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কয়েক দিন ধরে শুনছি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর কর বাড়ানো হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের আগে যদি সুদের টাকা না তুলি তাহলে বেশি কর দিতে হবে। ব্যাংকে সুদের টাকা রেখে বাড়তি কর দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সুদের টাকা তুলতে এসেছি।

‘সকাল সাড়ে ১০টায় টোকেন জমা দিয়েছি। বিকাল ৩টা বাজে, এখনও টাকা তুলতে পারিনি। আর কতক্ষণ যে অপেক্ষা করতে হবে, কে জানে?’

প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। নতুন প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে সুদের ওপর নতুন করের হার। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

এত দিন যারা ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে আসছেন, তাদের জন্য কি এ হার বহাল থাকবে? নাকি নতুন ও পুরনো সবার জন্যই ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর চালু হবে আগামী ১ জুলাই থেকে? যারা সুদের টাকা তোলেননি, তাদের ক্ষেত্রেও কি একই নিয়ম হবে?

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এর আগে যখন সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়, ওই সময়ের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তন করা হয়েছিল। এবার বর্ধিত করহারের প্রস্তাব পাস হলে কোন নিয়মে উৎসে কর কাটা হবে তা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না।

bank-01

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. মাছুম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, বাজেট প্রস্তাবে সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকার ওপর উৎসে করহার বাড়ানো হয়েছে। এরপর থেকে সুদের টাকা তুলতে গ্রাহকরা ব্যাংকে ভিড় করছেন। শুধু সঞ্চয়পত্রের সুদের টাকা তুলতে কয়েক দিন ধরে তিন থেকে চারগুণ বেশি গ্রাহক ভিড় করছেন। বাড়তি চাপের কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গ্রাহকদের কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, মানুষের ধারণা ৩০ জুনের পর সুদের টাকা তুললে বেশি কর কাটা হবে। এ কারণে আগে থেকেই গ্রাহকরা সুদের টাকা তুলে নিতে ভিড় করছেন। তবে এনবিআর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পায়নি বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা।

এদিকে এনবিআর কর্মকর্তারাও বলছেন, সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। যারা চলতি নিয়মে ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে সুদের টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০ জুনের আগেই সুদের টাকা তোলা। এতে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১০ মে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ কমানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেনি।

bank

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) সঞ্চয়পত্র থেকে নিট বিনিয়োগ এসেছে ৩৯ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা, যা অর্থবছরের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার দেড়গুণ।

বর্তমানে পরিবার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ, তিন মাস অন্তর সুদভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ, পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৩ মের পর থেকে এ হার কার্যকর আছে। এর আগে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ছিল ১৩ শতাংশেরও বেশি।

এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য উপস্থাপিত বাজেট বক্তৃতায় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বা উৎসে কর নিয়ে অর্থমন্ত্রী কোনো কথা বলেননি। বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, সঞ্চয়পত্র ব্যবস্থাপনা ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে জাতীয় সঞ্চয় স্কিমসমূহের বিক্রয়, সুদ, নগদায়ন ইত্যাদি বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এ পদ্ধতিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ঊর্ধ্বসীমা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সেই সঙ্গে গ্রাহকের সুদ ও আসল ইএফটির মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিশোধ করা সম্ভব হবে।

এবার প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।

এদিকে বাজেটের ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা ধার করবে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ২৭ হাজার কোটি টাকা এবং অন্য খাত থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনার কথা নতুন বাজেটে তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী।

এসআই/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।