এক মণ ধান বিক্রি করেও পরিশোধ হচ্ছে না একজন কামলার মজুরি
চলছে বোরো মৌসুম। পেকে গেছে মাঠের বেশিরভাগ ধান। কয়েকদিন আগে ফণীর প্রভাবে সারাদেশেই বৃষ্টিপাত হয়েছে। সঙ্গে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া। এতে অনেক এলাকায় জমির ধান পড়ে গেছে। এই পড়ে যাওয়া ধান দ্রুত কাটার জন্য হিড়িক পড়ে গেছে। ফলে একেকজন কামলার (দিনমজুর) মজুরি উঠেছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এক মণ ধান বিক্রি করেও একজন কামলার মজুরি পরিশোধ করা যাচ্ছে না। কারণ বাজারে বর্তমানে এক মণ ধানের দাম প্রকারভেদে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
বগুড়ার ধুনট থানার চরপাড়া গ্রামের কৃষক আকিমুদ্দিন শেখ জাগো নিউজকে জানান, বর্তমানে এক মণ ধান বিক্রি করে একজন কামলার (দিনমজুর) মজুরি হচ্ছে না। কারণ এক মণ ধানের দাম (ভেজা) ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা। আর একজন কামলার মজুরি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। এই মজুরিতে কামলা নিয়ে ধান কাটলে কৃষককে ধানচাষে মোটা অংকের লোকসান দিতে হবে।
তিনি বলেন, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এক সময় কৃষক আর ধান চাষ করবে না।
আকিমুদ্দিন শেখ পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কৃষক কী করবে? ধান, পাট, সবজি কোনো ফসলেরই দাম পাচ্ছে না তারা। কৃষক আজ ধান চাষ করে বিপদে পড়েছে। পাট চাষ করলে পাটের আঁশ ছাড়ানোর সময় কামলার যে মজুরি পড়ে তাতেও পোষায় না। সবজি, কপি, টমেটো করলে এমন দাম হয়, এক সময় সেগুলো গরুকে খাওয়াতে হয়। এ অবস্থায় কৃষক এখন কী করবে?
আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধি আব্বাস আলী জানান, নওগাঁয় বোরো ধানকাটা শুরু হয়েছে। ফণীর আগে এখানে একজন কামলার মজুরি ছিল ৪০০-৫০০টাকা। ফণীর প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় অধিকাংশ জমির ধান পানিতে পড়ে গেছে। ফলে পানির মধ্যে পড়া ধান কাটতে এখন কামলার মজুরি ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। অথচ এক মণ ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এ অবস্থায় কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এদিকে পানিতে পড়ে যাওয়া ধান দ্রুত না কাটলে এবং এভাবে পানিতে পড়ে থাকলে এই ধান থেকেই গাছ বের হয়ে যাবে। ফলে কৃষক আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যে কারণে বাধ্য হয়েই অতিরিক্ত মজুরিতে কামলা নিয়ে ধান কাটছে কৃষক।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, জেলায় এখনও বোরো ধানকাটা শুরু হয়নি। তবে ১০/১২ দিনের মধ্যে ধানকাটা শুরু হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এখানে পুরাতন ধান (মোটা) বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ৫৫০ টাকা। দিনাজপুরে ধানকাটা শুরু হলেও এক মণ ধান বিক্রি করে একজন কামলার মজুরি হবে না। অতীতেও এমনটা দেখা গেছে। এলাকার দিনমজুররা এখন বগুড়া, নওগাঁ ও সিরাজগঞ্জে ধান কাটছে। জানা গেছে, সেখানে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মজুরিতে তারা ধান কাটছে।
খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প ২য় পর্যায়ের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ শেখ মো. নাজিম উদ্দিন এক প্রশ্নের জবাবে জাগো নিউজকে বলেন, কৃষি উৎপাদনে ব্যয় কমাতে হবে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার ইচ্ছে করলেই ফসলের দাম বাড়াতে পারবে না। সরকার যে চাল ক্রয় করে তাতেও কৃষক খুব বেশি লাভবান হয় না। ফসলে লাভ করতে হলে কৃষককে যান্ত্রিকীকরণে আসতে হবে। তাছাড়া কৃষক লাভবান হতে পারবে না।
তিনি বলেন, যান্ত্রিকীকরণে আসতে একটু সময় লাগবে, তবে আমাদের কৃষকরাও একদিন যন্ত্র নির্ভর হবে এবং ফসলে লাভ করতে পারবে। আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি দিচ্ছি।
এফএইচএস/এমবিআর/জেআইএম