শাহ আমানতে বাড়ছে স্বর্ণ চোরাচালান
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল চোরাচালানকারিরা। কিন্তু বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তুলনায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরকে স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য বেশি ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি চোরাকারবারিরা। শুল্ক কর্তৃপক্ষ, তদন্ত ও গোয়েন্দা বিভাগ এবং এপিবিএন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে ।
সূত্র জানায়, চোরাকারবারিরা বাংলাদেশে স্বর্ণের চালান আনতে সম্প্রতি নতুন রুট হিসেবে ব্যবহার করছে হংকং ও ব্যাংকককে। এই দুই দেশ থেকে এয়ারকার্গো, পোস্ট অফিস, কিংবা কখনও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে স্বর্ণের চালান আনা হচ্ছে। এর বাইরে যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণ আনার বিয়ষটিতো রয়েছে।
শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কার্গো, পোস্ট অফিস কিংবা কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আনা স্বর্ণের চালান পাঠানো হচ্ছে ভুয়া ঠিকানায়। আবার কখনো ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও কম্পিউটার সামগ্রী আমদানির আড়ালে আসছে স্বর্ণ। সব ক্ষেত্রে ধরে ধরে এসব পণ্য তল্লাশি করা সম্ভব না হওয়ায় নতুন এই রুটে ঝুঁকছে চোরাকারবারিরা।
শুল্ক কর্তৃপক্ষ ও শুল্ক গোয়েন্দাদের দাবি, তাদের চোখ ফাঁকি দিতেই চোরাকারবারিরা নতুন এই কৌশলে করছে চোরাচালান। শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে হংকং, ব্যাংককের ব্যবসায়িক যোগাযোগের সুযোগ নিচ্ছে চোরাকারবারিরা। আর এই স্বর্ণ আসছে মালয়েশিয়া হয়ে।
স্বর্ণ চোরাকারবারিদের রুট পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করেন শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক (ডিজি) ড. মইনুল খান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আগে চোরাকারবারিরা সৌদি আরব, দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে যাত্রীদের মাধ্যমে কৌশলে স্বর্ণ পাচার করতো। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়া হয়ে বাংলাদেশে চালান আসছে।
বিভিন্ন সময় স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে ওইসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
স্বর্ণ চোরাচালানে শাহ আমানত বিমানবন্দরকে বেছে নেওয়ার কারণ সম্পর্কে অবসরপ্রাপ্ত শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তা এস এম জাকির হোসাইন বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতে স্বর্ণের দাম কম। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ, থাইল্যান্ড, হংকং, ওমান মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে চট্টগ্রামের প্রবাসী বাংলাদেশি বেশি। এসব প্রবাসীর একটি অংশকে সহজেই স্বর্ণ বহনকারী হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। এ কারণেই চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরকে ট্রানজিট হিসেবে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার দাবি, শাহ আমানত বিমানবন্দরে গ্রিন চ্যানেলে আর্চওয়ে ও প্রয়োজনীয় স্ক্যানিং ব্যবস্থা ও সামগ্রী না থাকায় চোরাকারবারিরা এটিকে স্বর্ণ চোরাচালানের শতভাগ নিরাপদ রুট মনে করছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দর কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মাসে ৫০ কেজির বেশি স্বর্ণ উদ্ধার করেছেন তারা। ২০১৪ সালে মোট ৭২ কেজি স্বর্ণ আটক করে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দারা। ২০১৩ সালে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দারা ১৫টি অভিযানে প্রায় ৮১ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করে।
শাহ আমানত বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সম্প্রতি ফ্রেইট থেকে স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনা বাড়ছে। যাত্রীবেশে স্বর্ণ পাচারের ঘটনা কমে গেছে। স্বর্ণ পাচারকারীরা রুট পরিবর্তন করে স্বর্ণ পাচারের কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। স্বর্ণ পাচারকারীরা মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা দুবাই থেকে ঠিকই স্বর্ণ কিনছেন। তবে পাচারের পথ হিসবে হংকং কিংবা ব্যাংকক হয়ে আসছে শাহ আমানতে।
জেইউ/এসকেডি/এমএস